Ant-t | মানসিক লক্ষন এন্টিম ক্রুডের মত। |
Ant-t | মুখমন্ডল পাংশু, রুগ্ন, নাক সরু ও ছোট, চক্ষু কোটরাগত ও চোখের চারিদিকে কালিমা পরে, ঠোট বিবর্ণ ও কুঞ্চিত, মুখমন্ডল শীতল, শীতল ঘর্ম। |
Ant-t | ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাসসহ শ্বাসকষ্ট, কাশির সময় গলায় ঘর ঘর শব্দ হয়, মনে হয় বুকে অনেক শ্লেষ্মা জমে আছে কিন্তু উঠছেনা। |
Ant-t | রেগে গেলেই শিশুর কাশি হয়। |
Ant-t | অদম্য নিদ্রালুতা বা অচৈতন্য ভাব (প্রায় প্রত্যেক রোগেই হয়)। |
Ant-t | জিহ্বায় পাতলা সাদা ময়লা এবং তার দানাগুল (প্যপিলি) অল্প অল্প লাল, জিহ্বার কিনারা লাল। |
Ant-t | বমি, ভয়ানক বমিভাব, অবসাদ, শীতল ও শরীরে ঘর্ম। |
হত বুদ্ধি জড় প্রকৃতি, সর্দিশ্লেষ্মায় ভোগে। ডাঃ ভন্ গ্রভোগল বর্ণিত রসপ্রধান ধাতুর লোকদের পক্ষে উপযোগী। (হাইড্রোজেনয়েড = রসপ্রধান ধাতু, (হাইড্রো-জল) শরীরে জলের আধিক্য, জলীয় আবহাওয়ায় বা জলে। উৎপন্ন দ্রব্যসকল খেলে যাদের রোগ বাড়ে)
স্যাঁৎসেঁতে মেঝে বা মাটির নীচে ঘরে বাস করে রোগ ভোগ করে। (আর্স, এরানিয়া-ডা, টেরিবিন্থ) বা রোগের উৎপত্তি। নিউমোগ্যাসট্রিক নার্ভে (পাকাশয় সংযুক্ত স্নায়ু) উত্তেজনা আনে ও শ্বাসপ্রক্রিয়া ও রক্ত চলাচলে বাধা দেয়।
এ ওষুধের প্রধান নির্দেশক লক্ষণ দেখা দেয় তা হল-“রোগী যখন কাশে মনে হয় বায়ুনালীতে প্রচুর শ্লেষ্মা জমা আছে (ঘড়ঘড় করে) মনে হয় কাশলে অনেক কফ বের হবে কিন্তু কিছুই আসে না।
শিশু – যে কাছে থাকে তাকেই জড়িয়ে ধরতে চায়, কোলে কোলে বেড়াতে চায়, কাঁদে, ঘ্যানঘ্যান করে যদি কেউ ছুঁতে চায়। ডাক্তারকে নাড়ী দেখাতে চায় না (এ-ক্রুড, স্যানিকি) মুখমন্ডল ঠান্ডা, নীলবর্ণ, বিবর্ণ, ঠান্ডা ঘাম দেখা দেয় (ট্যাবেকাম) ।
জিহ্বা – লেপ থাকে, চটচটে, পুরু, সাদা, লালবর্ণ প্যাপিলা, ধারগুলি লাল; (প্যাপিলা ছোট ছোট দুধের বোটার মত উঁচু বা স্ফীতি)। লাল, খুব লাল লাল ডোরাকাটা-মাঝে শুকনো মত; আপেল খাওয়ার অস্বাভাবিক ইচ্ছা (এলো) (টকদ্রব্য ও চাটনী খেতে চায় এ-ক্রুন্ড)।
বমন- যে কোন অবস্থানে কিন্তু ডান দিকে চেপে শুলে হয় না। মূর্চ্ছা না হওয়া অবধি বমি। বমির পরে ঘুমঘুম ভাব ও অবসন্নতা। উদরাময় যুক্ত কলেরায় বমি সেই সাথে ঠান্ডা ঘাম দেখা দেয় (কোলাপ্স হওয়ার মত হয়)। প্রতিবার বমির পর এক মাত্রা করে দিতে হয় (ভিরেট্রাম)।
শ্বাসরোধ – যান্ত্রিক যথা জলে ডোবার ফলে, শ্বাসনালীতে শ্লেষ্মা জমলে, ফুসফুসের আসন্ন পক্ষাঘাতের সম্ভাবনায়, স্বরনালী বা কণ্ঠনালীতে বাইরের কোন কিছু আটকনোর ফলে আসন্ন মৃত্যুর অবস্থা, সেইসাথে তন্দ্রালুতা ও আচ্ছন্নভাব।
প্রায় সব রোগেই ভীষণ ঘুমঘুমভাব ও ঘুমাতে যাবার একান্ত ইচ্ছা (নাক্সমস; ওপি) ।
জন্মের পরই শিশু ফ্যাকাশে, শ্বাস রোধ, নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য হাঁপাতে থাকে। সদ্যোজাত শিশুর শ্বাসরোধ, মৃত্যুকালে গলায় ঘড়ঘড় করলে উপশম দেয় (মৃত্যুকষ্ট কম হয়) (ট্যারান্টুলা) ডানদিকের ফুসফুসে নিউমোনিয়া সেইসাথে কামলা রোগে প্রযোজ্য। (কামলা–জন্ডিস)।
সম্বন্ধ – লাইকোর সমগুণ কিন্তু লাইকো-তে নাকের পাখনা ওঠানামা করে এতে নাকের ছিদ্র বড় হয়ে যায় বা ফুলে যায় ।
ভিরেট্রামের সমগুণ— উভয়েই উদরাময়, শূলব্যথা, বমি, শীতভাব ও অমুদ্রব্যে স্পৃহা ইত্যাদি লক্ষণ আছে। ইপিকাকের সমগুণ কিন্তু এতে শ্বাসক্রিয়ার বিশৃখলাহেতু ঘুমঘুম ভাব বেশী এবং বমিবমিভাব বমি হওয়ার পরে কমে যায় ।
যখন ফুসফুসের ক্রিয়া বন্ধ হবে বলে মনে হয়, ঘুমঘুমভাব আসে, কাশি কম পড়ে বা বন্ধ হয়ে যায় তখন ইপিকাকের প্রয়োগ বন্ধ রেখে এটা প্রয়োগ করা দরকার ।
বাইরের কোন দ্রব্য স্বরযন্ত্রে বা কণ্ঠনালীতে আটকে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সাইলিশিয়া দেওয়ার আগে এটা প্রয়োজ্য।
গণোরিয়া চাপা পড়ে শ্বাসকষ্ট হলে পালস ও স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে বাস করে শ্বাসকষ্টে টেরিবিন্থিনা প্রদেয়।
কাশিতে এ-টার্টের উপযুক্ত ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে’ও শিশুর বিশেষ কোন উপকার না হলে হিপার-সালফ ব্যবহার্য। বসন্ত ও শরতে যখন ভেজা আবহাওয়া শুরু হয়, তখন শিশুদের কাশির বৃদ্ধিতে উপযোগী।
বাড়ে — ভিজা, ঠান্ডা জলহাওয়ায়, রাত্রে মেঝেতে শুয়ে, ঘরের গরমে, বসন্তকালে জলহাওয়ার পরিবর্তনে (কেলি-সালফ, নেট-সালফ)।
কমে – ঠান্ডা খোলা বাতাসে, সোজা হয়ে বসলে; কাশিতে কফ বার হলে, ডানদিকে চেপে শুলে (ট্যাবাকাম)।
শক্তি – ৩x, ৬, ৩০, ২০০।
এই ঔষধের বহু লক্ষণ এন্টিমোনিয়াম ক্রুডামের ভিতরে আছে। কিন্তু এই ঔষধটির নিজের বহু অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য পূর্ণ লক্ষণ আছে। লক্ষণের উপর নির্ভর করে রোগ চিকিৎসার সময়, এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, শ্বাসযন্ত্রের নানাপ্রকার রোগে ঔষধটি বিশেষভাবে কার্যকরী, বুকের ভিতর ঘড়ঘড় শব্দ, তৎসহ অতিসামান্য সর্দি উঠা এই ঔষধের একটি পদনির্দেশক লক্ষণ বিশেষ। প্রচণ্ড ঝিমুনি, দুর্বলতা ও ঘাম এই তিনটি ঔষধটির বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ, এবং যেখানেই ঔষধটি দেওয়া হয় প্রায় সব ক্ষেত্রেই লক্ষণগুলি বর্তমান থাকে। মদ্যপ ও গেঁটেবাত যুক্ত ব্যক্তির পাকাশয়িক গোলযোগ। কলেরা মর্বাস। রক্তবহানলীর ভিতর শীতল অনুভূতি। জলের ভিতর থেকে কাজ করে এরূপ ব্যক্তিদের একবিশেষ প্রকারের চর্মরোগ। হোমিওপ্যাথিক তত্ত্বানুসারে যন্ত্রনাদায়ক প্রস্রাব, কষ্টকর প্রস্রাব, রক্তপ্রস্রাব, অ্যালবুমিন যুক্ত প্রস্রাব, মূত্রনলী ও মূত্রথলীর প্রদাহ, সরলান্ত্রে জ্বালাবোধ, রক্ত ও শ্লেষ্মাযুক্ত মল প্রভৃতি ক্ষেত্রে এন্টিমোনিয়াম টার্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। সমগ্র শরীরে কম্পন, প্রচণ্ড দুর্বলতা, ও মূর্চ্ছা। কোমরের বেদনা। শীতভাব, পেশীর বেদনা। লিঙ্গমুণ্ডের উপর আঁচিল।
মন এবং মাথা – পর্যায়ক্রমে মাথাঘোরা ও ঝিমুনি ভাব। প্রচণ্ড হতাশ বা মনমরা ভাব। একা থাকতে ভয় পায়। বিড়বিড় করে, ভুল বকে এবং হতচেতন ভাব। মাথাঘোরা তৎসহ নিস্তেজ ও মানসিক ভ্রান্তি। কপালের উপর বন্ধনী দিয়ে বাঁধা রয়েছে, এরূপ অনুভূতি। মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে ও কোটরগত। শিশুকে স্পর্শ করলেই ঘ্যানঘ্যান করে। বন্ধনী দ্বারা চাপা রয়েছে মাথা, এরূপ অনুভূতিযুক্ত মাথার যন্ত্রণা। (নাইট্রিক অ্যাসিড)।
জিহ্বা – জিহ্বা সাদা পুরু লেপ যুক্ত, লেইয়ের মত দেখতে, তৎসহ জিহ্বার কিনারা লাল। লাল এবং শুষ্ক, বিশেষতঃ জিহ্বার কেন্দ্রস্থল। বাদামী।
মুখমণ্ডল – শীতল, লালচে, ফ্যাকাশে, ঠাণ্ডা ঘামে আবৃত। চিবুক ও নিম্নচোয়াল নিরন্তর নড়তে থাকে। (জেলস)।
পাকস্থলী – তরল বস্তু গিলতে কষ্ট হয়। ডানদিক ভিন্ন, যে কোন অবস্থানে বমি। বমিবমিভাব, ওআক তোলা, এবং বমি, বিশেষতঃ খাবার পর। তৎসহ মৃতের ন্যায় আচ্ছন্নভাব এবং দুর্বলতা। ঠাণ্ডা জলপানের পিপাসা, একটু একটু এবং বারে বারে এবং সাধারণতঃ আপেল, ফল এবং অম্লজাতীয় বস্তু খাবার ইচ্ছা। বমি বমি ভাব ভয়ের উদ্রেক করে, তৎসহ হৃদপিণ্ড স্থানে চাপবোধ, এরপর মাথার যন্ত্রণা তৎসহ হাইতোলা ও চোখ থেকে জল পড়া এবং বমি।
উদর – পেটের নিম্নাশে আক্ষেপিক বেদনা, প্রচুর বাতকর্ম। পেটে চাপ বোধ, বিশেষতঃ সামনের দিকে ঝুঁকলে। কলেরা মর্বাস। উদ্ভেদ যুক্ত রোগে পাতলা পায়খানা।
প্রস্রাব – প্রস্রাবের সময় এবং প্রস্রাবের পরে মূত্ৰনলীতে জ্বালাকর বেদনা। শেষের কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব রক্তযুক্ত তৎসহ প্রস্রাব থলিতে বেদনা। প্রস্রাবের রোগের বৃদ্ধি। মূত্রনলীও প্রস্রাবথলির প্রদাহ। মূত্রনলীর ভিতরের অংশে সংকোচন বা ষ্ট্রিকচার। অণ্ডপ্রদাহ।
শ্বাস-প্রশ্বাস- স্বরভঙ্গ। বুকের ভিতর সর্দির প্রচণ্ড ঘড়ঘড়ে শব্দ, কিন্তু খুবই সামান্য পরিমানে উঠে। বুকের ভিতর মখমলের মত কোমল ও নরম বলে মনে হয়। বুকের ভিতর জ্বালাকর অনুভূতি, যা গলা পর্যন্ত উঠে আসে। দ্রুত, কষ্টকর, ছোট ছোট শ্বাসপ্রশ্বাস, মনে হয় যেন শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। উঠে বসতে বাধ্য হয়। বৃদ্ধ ব্যক্তিদের এমফাইসিমা। পর্যায়ক্রমে কাশি ও হাইতোলা অথবা বড়ো করে মুখ হাঁ করে থাকা। বায়ুনলীগুলি শ্লেম্মাতে পূর্ণ থাকে। খাওয়ার পর কাশি বাড়ে, তৎসহ বুকে ও কণ্ঠনলীতে বেদনা। ফুসফুসের সাথে এবং ফুসফুসের পক্ষাঘাত আসন্ন। তীব্র বুক ধড়ফড়ানি, তৎসহ অস্বস্তিকর গরম অনুভূতি। নাড়ী দ্রুত, দুর্বল ও কম্পমান। মাথাঘোরা, তৎসহ কাশি, শ্বাসকষ্ট ঢেকুর উঠলে কম পড়ে। কাশি এবং শ্বাসকষ্ট ডানদিক চেপে শুলে কম পড়ে – (ব্যাডিয়াগার বিপরীত)।
পিঠ — স্যাক্রো – লাম্বার স্থানে তীব্র যন্ত্রণা। নড়াচনার সামান্য চেষ্টায় বমি উঠে আসে এবং ঠাণ্ডা, চটচটে ঘাম। চঞ্চু অস্থি স্থানে বা ককসিক্স স্থানে ভারী বোঝার মত অনুভূতি স্থানটি সর্বদা নীচের দিকে টেনে ধরে থাকে। পেশীর নর্তন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাঁপুনি।
চামড়া – পুঁজ যুক্ত উদ্ভেদ, শুকিয়ে গেলে উদ্ভেদ স্থানে নীলচে লাল রঙের দাগ থাকে। গুটি বসন্ত আঁচিল। জ্বর — শীতলতা, কাঁপুনি এবং শীত শীত ভাব। প্রচণ্ড গরম, প্রচুর ঘাম। ঠাণ্ডা, চটচটে ঘাম তৎসহ প্রচণ্ড আচ্ছন্ন ভাব। সবিরাম জ্বর তৎসহ দুর্বলতা।
ঘুম — সর্বদা ঝিমুনিভাব। ঘুম আসার পর বিদ্যুতের মত ঝাঁকুনির অনুভূতি। যে কোন প্রকার শারীরিক গোলযোগে ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা যুক্ত।
কমাবাড়া — বৃদ্ধি সন্ধ্যায়, রাত্রিতে শুয়ে পড়লে, গরমে, ভিজে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায়, যেকোন প্রকার অম্লজাতীয় বস্তুতে এবং দুধে।
উপশম – খাড়াভাবে বসে থাকলে, ঢেকুর উঠলে এবং শ্লেষ্মা উঠলে।
সম্বন্ধ – দোষঘ্ন – পালস, সিপিয়া।
তুলনীয় – কেলি সালফ, ইপিকাক।
শক্তি – ২য় এবং ৬ষ্ঠ বিচূর্ণ। নিম্নশক্তিতে কোন কোন সময় অবস্থার বৃদ্ধি ঘটায়।
আর এন্টিমোনিয়াম টার্টের রোগীর বিষয় পাঠ করিতে যাইয়া সৰ্ব্বপ্রথমেই আমরা যে জিনিষটি দেখি, তাহা রোগীর মুখমন্ডলে প্রকাশিত হয়। মুখ বিবর্ণ ও রুগ্ন দেখায়, নাকটি আকৃষ্ট ও কুঞ্চিত থাকে, চক্ষু বসিয়া যায় এবং চক্ষুর চারিদিকে কৃষ্ণমন্ডল দেখা দেয়। ওষ্ঠদ্বয় বিবর্ণ ও কুঞ্চিত হয়। নাসারন্ধ্রদ্বয় প্রসারিত, নাকের পাখা উঠা-পড়া করে এবং নাসারন্ধ্রের মধ্যে ঝুল জমার ন্যায় দেখায়। মুখমন্ডল ঠান্ডা ঘামে আবৃত, ঠান্ডা এবং বিবর্ণ হয়। মুখমন্ডলের চেহারা যন্ত্রণাব্যঞ্জক হয়। ঘরের মধ্যের হাওয়া ঝাঁঝাল, দুর্গন্ধ, পচা গন্ধ হইতেও ঝাঁঝাল এবং মনে হইবে যে, উহাতে মৃত্যুর গন্ধ রহিয়াছে। পরিজনগণ বিচলিত হইয়া পড়িয়াছেন, তাহারা ছুটাছুটি করিতেছেন, শুশ্রুষাকারী উত্তেজিত ও ব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছেন, এই সময়ে তুমি এই দৃশ্যের মধ্যে হোমিওপ্যাথিক মতে ঔষধ ব্যবস্থা করিতে আসিলে। ইহা একটি উত্তেজনার অবস্থা এবং এমন অবস্থা যে, তুমি দ্রুত কিছু করিতে পার না, কিন্তু তোমাকে তাড়াতাড়ি ঔষধ ব্যবস্থা করিতেই হইবে। এইসব ব্যাপার হয়ত তোমার চিন্তায় কিছুটা বাধা দিবে, কিন্তু ঐসময়ে তোমাকে সুন্দরভাবে চিন্তা করিতে হইবে এবং অতি দ্রুত চিন্তা করিতে হইবে।
এক্ষণে, কি প্রকার রোগে আমরা এই অবস্থা এরং চেহারা দেখিতে পাই; কখন সমস্ত অবস্থা ও লক্ষণাবলী এদের প্রকৃতির সহিত মিলিয়া যায়? প্রথমতঃ সর্দিসংযুক্ত রোগীতে, ভগ্নস্বাস্থ্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে, দুৰ্বল শিশুতে, বৃদ্ধ ব্যক্তিগণের মধ্যে। শ্বাসনলী এবং বায়ুনলীগুলির সর্দিজ অবস্থা আমাদের কান খোলা থাকিলে আমরা বক্ষে মোটা ঘড়ঘড়ি এবং ভুড়ভুড় শব্দ শুনিতে পাইব। তুমি যদি কখন মৃত্যুমুখ ব্যক্তির ঘরে গিয়া থাক, তাহা হইলে যাহাকে মৃত্যুঘড়ঘড়ি বলে তাহা শুনিয়াছ। উহা ঠিক এইরূপ মোটা ঘড়ঘড় শব্দ। সময়ে সময়ে এক মুখ করিয়া ফিকে রংয়ের সাদাটে গয়ের উঠে। ইহা এমন একটি অবস্থা যে, বক্ষদেশটি ক্রমাগত শ্লেষ্মায় ভরিয়া উঠিতে থাকে। প্রথম প্রথম সে হয়ত ইহা তুলিয়া ফেলিতে পারে, কিন্তু অবশেষে বক্ষদেশ ও ফুসফুস উহা তুলিয়া ফেলিতে অক্ষম হওয়ায় বুক শ্লেষ্মায় ভরিয়া থাকে এবং তাহার শ্বাসরোধের ভাব উপস্থিত হয়। ইহা ফুসফুসের একপ্রকার পক্ষাঘাতিক অবস্থা। ইহা ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ দেখা দিতে পারে। প্রথমে রোগটি হয়ত দ্রুত উপস্থিত হইয়া দ্রুতগতিতে অগ্রসর হইতে থাকিবে। হয়ত রোগটি দ্রুত অর্থাৎ তিন-চারদিন অথবা এক সপ্তাহের মধ্যে রোগীর অবসন্নতা উৎপাদন করিবে। এরূপ রোগে প্রথম কয়েক দিন; এন্টিম টার্ট নির্দিষ্ট হইবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত ভাল প্রতিক্রিয়া থাকে এবং রোগীর দেহে বল থাকে, ততক্ষণ তোমরা এই ঔষধের আকুঞ্চিত পান্ডুর বদন, অবসন্নতা, শীতলতা এবং ঠান্ডা ঘর্ম দেখিতে পাইবে না। তুমি বুকে ঘড়ঘড় শব্দ শুনিতে পাইবে না, কারণ ঐ লক্ষণগুলি সক্রিয়তার অভাবজ্ঞাপক অবস্থার লক্ষণ। এন্টিম টার্টে থাকে দৌর্বল্য এবং প্রতিক্রিয়ার অভাব। সুতরাং আমরা দেখি যে, এন্টিম টার্টের উপযোগিতা সেইসব ক্ষেত্রে যেখানে ঐরূপ অবস্থা বর্তমান থাকে অথবা সেই সকল রোগীর পক্ষে, যাহারা এতই দুৰ্বল যে, রোগে পড়িলেই প্রতিক্রিয়াহীন ও শিথিল অবস্থায় উপস্থিত হয়। নিউমোনিয়া সংযুক্ত ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসনলী-প্রদাহ বায়ুনলীসমূহের প্রদাহে সাধারণতঃ প্রদাহের সহিত শুষ্কতা এবং শ্লেষ্মাস্রাবের স্বল্পতা থাকে। কিন্তু রোগ যদি প্রবল হয়, তাহা হইলে কয়েক দিনের মধ্যেই উহা শিথিলতা ও দুর্বলতার অবস্থায় পৌঁছে। প্রথম অবস্থায় এন্টিম টার্ট উপযোগী হয়। প্রথম অবস্থার জন্য ইপিকাক, ব্রায়োনিয়া প্রভৃতির ন্যায় ঔষধের প্রয়োজন; আর তোমার যদি ধারণা থাকে যে, ঐ ঔষধগুলির কোনটি প্রযোজ্য হইলে তাহা সমগ্র রোগটির পক্ষেই যথেষ্ট হইবে, তাহা হইলে তোমার ধারণা কতকগুলি ক্ষেত্রে সত্য হইবে, কিন্তু অপর কতকগুলি ক্ষেত্রে হইবে না;—যেখানে গোড়া হইতেই দুৰ্ব্বলতা থাকে অথবা যেখানে তোমার ঔষধে রোগারোগ্যের উপযুক্ত যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া শক্তি জাগাইয়া তুলিবার ক্ষমতা থাকে না। এইরূপ অবস্থায় দ্বিতীয় ঔষধের প্রয়োজন হয় এবং এন্টিম টার্টের ক্রিয়া আরম্ভ হইবার ইহাই উপযুক্ত সময়।
ইপিকাকে কিছুটা মোটা ঘড়ঘড় শব্দ আছে, কিন্তু উহার সহিত ফুসফুসের শ্লেষ্মা তুলিবার মত শক্তিও থাকে যথেষ্ট। এই ঔষধে যে মোটা ঘড়ঘড়ি থাকে তাহা রোগারম্ভের বহুদিন পরে উপস্থিত হয়। ইপিকাকে উহা রোগের প্রথম কয়েক দিনের মধ্যেই উপস্থিত হয়। এই ঔষধে কাশি, শ্বাসবদ্ধভাব এবং বমি বমি ভাব আছে, কিন্তু তাহা দেখা দেয় অত্যন্ত শিথিলতা, অবসন্নতা ও শীতলতার অবস্থায়। বোধ হয়, যেন সে মরিয়া যাইবে। তুমি তাহার কাশি শুনিলেই তৎক্ষণাৎ বুঝিতে পারিবে যে, তাহার ফুসফুস শক্তিতে প্রগাঢ় দুর্বলতা আছে। আমরা জানি যে, ফুসফুসের শক্তিই দীর্ঘ শ্বাসক্রিয়ার সহিত শ্লেষ্মা তুলিয়া ফেলিবার শক্তি উৎপন্ন করে। এন্টিম টার্টে ফুসফুসের ঐরূপ শক্তি থাকে না। বক্ষদেশ শ্লেষ্মায় পূর্ণ, উহা ঘড়ঘড় করিতেছে, কাশিটি ঘড়ঘড়ে প্রকৃতির, কিন্তু শ্লেষ্মা উঠে না অথবা সামান্য মাত্র শ্লেষ্মা উঠে, কিন্তু তাহাতে উপশম হয়। রোগীর বুক শ্লেষ্মায় পূর্ণ, তাহার শ্বাসরোধ হইতেছে, সে সত্যই মরিতে চলিয়াছে,“তুলিয়া ফেলিবার ক্ষমতার অভাববশতঃ কার্বনিক এসিড বিষাক্ততায় মরিতে চলিয়াছে। নিউমোনিয়া রোগে যখন রোগী শীতের সহিত প্রথম শয্যাগত হয়, তখন আক্রমণটি ভীষণ হইতে পারে;
এরূপ আক্রমণে রোগের ভীষণতা হইতে শীঘ্র অর্থাৎ তিন-চার দিন পরে অবসন্নতা দেখা দেয়। ইহা রোগের গোড়ার দিকে শীতের সময় দেখা দেয় না এবং প্রদাহের তীব্র অবস্থাতেও দেখা দেয় না কিন্তু রসসঞ্চয় অবস্থায় দেখা দেয়। রোগের ভীষণতাই তাহাকে অবসন্নতার অবস্থায় লইয়া আসে কিম্বা সে যেন বৃদ্ধ হইয়া পূৰ্ব্ব হইতেই দুর্বল ছিল এই সেইজন্য সহজেই এই রোগে শিথিল ও অবসন্ন হইয়া পড়ে। একোনাইট, ‘বেল’, ইপি এবং ব্রায়ো ইহার সম্পূর্ণ বিসদৃশ; কারণ, তাহারা প্রচন্ডতার মধ্যেই শয্যাগত থাকে—ঐরূপ অবস্থার ঠিক বিপরীত ভাব থাকে এন্টিমোনিয়াম টার্টে। সামান্য জ্বর, ঠান্ডা ঘৰ্ম্ম, শীতলতা, শিথিলতা-পান্ডুর বিবর্ণ চেহারা।।সুতরাং ইহা ভীষণ প্রকৃতির ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়া রোগের শেষ দৃশ্যের ঔষধ, অধিকাংশ রোগীই এন্টিম টার্ট সদৃশ অবস্থায় মারা যায়। এইরূপ রোগী পুরাতন সন্ধিবাতগ্রস্ত, দীর্ঘকাল রোগে ভুগিয়া দুৰ্বল, সৰ্ব্বদা কম্পান্বিত, বিবর্ণ এবং সন্ধিগুলির বৃদ্ধিযুক্ত হয়। প্রত্যেকবার ভিজা আবহাওয়া আসিলেই, তাহার বুকে, কণ্ঠনলীতে, বায়ুনলীতে সর্দিজ অবস্থা উপস্থিত হয় এবং উহাতে প্রচুর শ্লেষ্মাস্রাব হইতে থাকে। সে সঙ্গে সঙ্গেই শয্যাগত হয়, মোটা ঘড়ঘড় শব্দের সহিত অবসন্ন হইয়া পড়ে। শিশুদের মধ্যে যাহারা ঠান্ডা, ভিজা আবহাওয়ায়, শরৎকালে, বা বসন্তকালে ঝড়বৃষ্টি হইলে এবং মেঘলা আবহাওয়ায়, পুনঃ পুনঃ ব্রঙ্কাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়। একবার ঠান্ডা লাগা কাটাইতে না কাটাইতেই তাহাদের আবার ঠান্ডা লাগে। তরুণ অবস্থা তাহাদের পক্ষে কখনই ভীষণ হয় না, কিন্তু তাহাদের ঐ প্রতিক্রিয়াহীন ঘড়ঘড়ে সৰ্দিটি থাকিয়া যায়। বুকে পুনঃ পুনঃ ঘড়ঘড়ানি উপস্থিত হয়। সে শীতার্ত ও বিবর্ণ হইয়া পড়ে। এইরূপ সুকুমার শিশুগণ, যাহাদের সর্দি লাগিলে রুগ্ন দেখায় না, অল্পাধিক বলিষ্ঠ থাকে, বুকে ঘড়ঘড় করে, কিন্তু দুর্বলতায় ভাঙ্গিয়া পড়ে না এবং উহাতে শয্যাশায়ী হইয়াও পড়ে না, কিন্তু ঘড়ঘড়িটা থাকে, তাহাদের পক্ষে ক্যালি সালফ’ প্রয়োজন। এইখানেই আমরা একটি প্রভেদসূচক লক্ষণ পাইলাম, দুর্বলতা থাকিলে, তাহাই এই ঔষধটির (এন্টিম টার্টের) কথা বলিয়া দিবে। যেসকল ভগ্নস্বাস্থ্য বৃদ্ধ লোকের বহু বৎসর যাবৎ বুকের সর্দি থাকে, সেই সকল অতি বৃদ্ধ লোকের এইরূপ দুৰ্বলতা হয়। প্রত্যেকবার শীতকালে তীব্র শীত পড়িলেই, বুকের সর্দি প্রকাশ পায়, ঘন সাদা শ্লেষ্মা উঠিতে থাকে এবং অত্যন্ত শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় তাহাকে শয্যা ছাড়িয়া উঠিতে হয়। তাহাকে বিছানায় বসিয়া থাকিতে হয় এবং তাহাকে হাওয়া করিতে হয়; শ্বাসকষ্টের জন্য এবং বুকের পূর্ণতাবোধের জন্য শুইতে পারে না। মৃত্যুর পূর্বে অনেক বারের আক্রমণে এন্টিক টার্ট তাহাকে উপশম দিবে। এইরূপ কোন বৃদ্ধি ব্যক্তির শ্লেষ্মা যদি হলদে ও পুঁজমিশ্রিত হয়, তবে এমোনিয়াকাম’ তাহাকে বহু শীতকাল পার করাইয়া দিবে। আমরা বহু বৃদ্ধ লোককে দেখি, তাহারা শীতকালে বুকের সর্দিতে ভুগে, তাহাদের এরূপ অবস্থা বহু বৎসর ধরিয়া চলে এবং তাহারা আর ভাল হইবার আশা করে না। শ্লেষ্মা যদি হলদে হয় তাহা হইলে। ‘এমোনিয়াকাম”, আর শ্লেষ্মা যদি সাদা হয় এবং তৎসহ অবসন্নতা, ঘর্ম, শীতলতা, বিবর্ণতা এবং মুখের নীলবর্ণ থাকে, তাহা হইলে এন্টিমোনিয়াম টার্ট তাহাদিগকে সুস্থ করিয়া তুলিবে। চিকিৎসাক্ষেত্রে এইগুলিই এই ঔষধের প্রধান ব্যবহার।
এই ঔষধে অনেক প্রকার বেদনা ও কামড়ান ব্যথা আছে। এন্টিম টার্ট বহু পরিমাণে ‘এন্টিম ক্রুডে’র ভিত্তির উপরে গঠিত। ঐ ভিত্তির উপরেই উহার বক্ষলক্ষণগুলি বহুলাংশে নির্মিত হইয়াছে। উহার বহু লক্ষণ ‘এন্টিম ক্রুড’ সাদৃশ্য উত্তপ্ত হইলে এবং অতিরিক্ত কাপড়চোপড় পড়িলে বহু লক্ষণের বৃদ্ধি হয়। তুমি দেখিবে যে, এই ঔষধের রোগী ঘাড়ে বা কাধে কোন কাপড় না রাখিয়া এবং নিঃশ্বাস লওয়ার জন্য রাত্রের পোষাক অনেকখানি খুলিয়া ফেলিয়া বিছানায়। বসিয়া থাকে। অতিরিক্ত গরম ঘরে তাহার দম আটকায়। এই লক্ষণগুলি উহা ‘এন্টিম ক্রুড’ হইতে পাইয়াছে। এন্টিম ক্রুডে’র ন্যায় ইহারও ঠান্ডা জলে স্নান করিলে বৃদ্ধি-লক্ষণ আসে। ‘এন্টিম ক্রুডে’র ন্যায় ইহারও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীগুলি সাদা পুরু লেপে আবৃত থাকে। আর সে চায় না যে, কেহ তাহার সাহিত্য আলোচনা করুক অথবা বিরক্ত করুক। সবকিছুই বোঝা মনে হয়। শিশু পীড়িত হইলে চায় না যে, কেহ তাহাকে স্পর্শ করুক; কথা বলুক অথবা তাহার দিকে চাহিয়া থাকুক। সে একা থাকিতে চায়। শিশু সৰ্ব্বদা করুণভাবে ঘ্যানঘ্যান বা খুঁতখুঁত করিতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে নিঃশ্বাসের মধ্যেও করুণ স্বর শুনা যায়। বুকের ঘড়ঘড়ানির সাথেও করুণ স্বর থাকে । সৰ্ব্বদাই বদমেজাজে থাকে অর্থাৎ কেহ বিরক্ত করিলে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া উঠে। যে-কোন প্রকার গোলমালে, তাহার শ্বাসক্রিয়া বাড়িয়া উঠে এবং সে বিরক্ত বোধ করে এবং রাগিয়া উঠে। ইহাতে বিস্মিত হইবার কিছুই নাই যে, রোগী আশ্চৰ্য্যরূপ উৎকণ্ঠিত থাকে, কারণ তাহার চেহারা হইতেই আমরা বলিতে পারি যে, সে নিশ্চয় মনে করিতেছে যে, সে মরিয়া যাইবে। তাহাকে এরূপ দেখায়, যেন সে অবসন্ন হইয়া পড়িতেছে এবং যদি সে শীঘ্র উপশম না পায়, তাহা হইলে নিশ্চয়ই মরিয়া যাইবে; কারণ তাহার বুকটি পূর্ণ থাকে এবং সেইজন্য তাহার শ্বাসরোধ হইতে থাকে এবং মনে হয় যে, তাহার শ্বাসরোধভাব ও শ্বাসকৃচ্ছতা ক্রমেই বাড়িয়া চলিতেছে। নাসিকার পক্ষদ্বয় ‘লাইকোপোডিয়ামে’র ন্যায় নড়িতে থাকে। লাইকোপোডিয়াম’ ইহার সমকক্ষ ঔষধ এবং ইহার সদৃশও বটে।
এন্টিমোনিয়াম টার্টে বহুজাতীয় শিরঃপীড়ার কথা লিখিত আছে, কিন্তু মনে হয়, এন্টিমনি ধাতুদ্বারা সৃষ্ট শিরঃপীড়ায় ‘এন্টিম ক্রুড’ই সমধিক উপযোগী এবং এই ঔষধটি এন্টিমনি ধাতু দ্বারা সৃষ্ট বক্ষরোগে অধিকতর উপযোগী। উভয় ঔষধেই বিশেষভাবে নিশ্চিত পাকাশয়িক লক্ষণ আছে। অবিরত বমি বমি ভাব, বমন ও অজীর্ণতা। এন্টিম টার্টে কষ্টকর শ্বাসপ্রশ্বাসের সহিত পাকস্থলীর রোগ থাকে। তাহার সবকিছুতেই বিতৃষ্ণা, খাদ্যে বিতৃষ্ণা, এমনকি জলও বমি করিয়া ফেলে। তাহার আবার শান্ত অবস্থাও আছে, এত যন্ত্রণা সত্ত্বেও তাহাকে যদি চুপ করিয়া থাকিতে দেওয়া হয়, তাহা হইলে সে ঘুমাইয়া পড়ে এবং এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে, আর কিছু অনুভব করিতে পারে না। সে কাশিতে কাশিতে ঘুমায়, শ্বাসকষ্টের মধ্যে নাক ডাকায়; সুতরাং সে বহুভাবে ‘এন্টিম ক্রুডে’র সদৃশ, কিন্তু এন্টিম ক্রুডে’ প্রাদাহিক শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী হইতে প্রচুর শ্লেষ্মাস্রাবের মত কিছু নাই। উহাতে সমগ্র শারীর বিধানের ক্রিয়াহীন অবস্থার ন্যায় কিছু নাই। উহার পরীক্ষায় হতাশ হইবার মত কিছু নাই, উহার রোগী দেখিতেও তত ভীতিপূর্ণ নহে।
রোগীক্ষেত্রে, এন্টিম টার্টের ব্যবহার প্রধানতঃ বক্ষের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীসমূহেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু ইহাতে দেহের সমস্ত শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীরই ক্রিয়াহীন অবস্থা আছে। চক্ষু হইতে সাদা শ্লেষ্মা স্রাব। “চক্ষুদ্বয় উদ্গত এবং উজ্জ্বল; অপরিচ্ছন্ন ও জলে ভাসমান; গনোরিয়াজনিত চক্ষু-প্রদাহ।” কিন্তু বাত অবস্থা এই ঔষধের আর এক মূৰ্ত্তি, ‘এন্টিম ক্রুড’ সদৃশ্য আর এক দৃশ্য দেখায়। সন্ধিগুলি আক্রান্ত হয়, ক্রিয়াহীনতার সহিত ধীরে ধীরে রসসঞ্চয় হয়, ক্রমে শোগ্রস্ত হয়, শোগ্রস্ত হইয়া ফুলিয়া উঠে। সন্ধিগুলিতে গেঁটেবাতজাত রসসঞ্চয়, উহা বিশেষভাবে ঠান্ডা ভিজা আবহাওয়ায় বাড়ে। এইরূপে গেঁটেবাত প্রকৃতির চক্ষু-লক্ষণ। চক্ষুর সন্ধিগুলি বরাবর রসসঞ্চয়; সুতরাং চক্ষুর গেঁটেবাত অবস্থা উপস্থিত হয়। এই গেঁটেবাতজ অবস্থা সারা দেহকে আক্রমণ করে। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীগুলি লাল ও উজ্জ্বল না হইয়া বিবর্ণ হইয়া পড়ে, উহা বিবর্ণ ও শিথিল হয় এবং মনে হয়, উহা হইতে রস ক্ষরণ হইবে, উহার উপরে শীঘ্রই শ্লেষ্মা সঞ্চয় হয়। বক্ষের মধ্যেও ঠিক ঐ একই অবস্থা ঘটে। আর্স এবং অপেক্ষাকৃত তরুণ রোগের ঔষধসমূহে যেরূপ জ্বালাকর হাজার ন্যায় অবস্থা দেখা যায় ইহাতে সেরূপ হয় না, যদিও অবসন্নতা, উদ্বেগ ও শীতল ঘৰ্ম্ম লক্ষণে ইহা ‘আর্সে’র সদৃশ।
তারপর এই গেঁটেবাত অবস্থা দাঁতগুলিকেও আক্রমণ করে। সমস্ত দাঁতগুলিই বাতগ্রস্ত হয়। “দাঁতগুলিতে বাতজ বেদনা”, তৎসহ সন্ধিগুলিতেও বাতজ বেদনা। দাঁতগুলি স্পর্শকাতর। “দাতগুলি শ্লেষ্মায় আবৃত।”
এই সমস্ত উপসর্গের সহিত পাকস্থলীর উপসর্গগুলি প্রকাশ পায়; বমি বমি ভাব দেখা দেয়, পরিপাকের অক্ষমতা এবং খাদ্যে বিতৃষ্ণা। পাকস্থলীতে যাহা কিছু পৌঁছায়, তাহাই বমি হইয়া যায়, এক চামচ জল খাইলেও তাহা বমি হইয়া যায়। এই ঔষধের অধিকাংশ রোগেই তৃষ্ণা থাকে না। তৃষ্ণা থাকিলে তাহাকে ব্যতিক্রম মনে করিতে হইবে। সাধারণতঃ এই সকল শ্বাসকৃচ্ছ্রতার আক্রমণকালে, রোগীর বন্ধুরা কোন কিছু করিবার জন্য, সম্ভব হইলে এক গ্লাস জল হাতে দিবার জন্য, উদগ্রীব হইয়া রোগীর পার্শ্বে দাড়াইয়া থাকে। কিন্তু রোগী একটু জল খাইতে বলিলে উত্তেজিত হইয়া উঠে। সে বিরক্ত হয় এবং বিরক্তি প্রকাশ করে। শিশুকে জল দিতে গেলে ক্রুদ্ধভাবে ঘ্যানঘ্যান করে। প্রচুর শ্লেষ্মাস্রাব এবং বুকে অত্যন্ত ঘড়ঘড়ানিযুক্ত বায়ুনলীর উপদ্রব থাকা সত্ত্বেও তৃষ্ণাহীনতা। সময়ে সময়ে পাকস্থলীতে ঠান্ডা জিনিষ পাইবার দুর্দম্য ইচ্ছা থাকে, কিন্তু উহা ব্যতিক্রম। “অম্ল ও অম্ল ফল খাইতে চায়, কিন্তু উহাতে সে পীড়িত হয়। ‘এন্টিম ক্রডে’র ন্যায় ভিনিগার হইতে, টক জিনিষ হইতে, অম্ল মদ হইতে, টক ফল হইতে পাকস্থলীর উপদ্রব। দুধ কিম্বা অন্য যে-কোন প্রকার পুষ্টিকর খাদ্যে বিতৃষ্ণা, বিশেষতঃ দুধে বমি বমি ভাব ও বমন উৎপন্ন করিয়া রোগীকে পীড়িত করে। পাকস্থলী ও উদরে বায়ুসঞ্চয় হয়। উদর ফাপিয়া উঠে। পাকস্থলী ও অন্ত্রলক্ষণের সহিত অবিরত বমনেচ্ছা থাকে, কিন্তু উহা বমনেচ্ছা অপেক্ষা অধিক, উহা প্রত্যেক প্রকার খাদ্যে বা পুষ্টিকর খাদ্যে বিতৃষ্ণা; এরূপ একটি চিন্তার সহিত বমনেচ্ছা যে, যদি সে পাকস্থলীতে কিছু গ্রহণ করে, তাহা হইলে সে মরিয়া যাইবে। ইহা কেবল মাত্র খাদ্যে অপ্রবৃত্তি নহে, বমনের পূর্বে যে সাধারণ বমনেচ্ছা হয় তাহা নহে, কিন্তু খাদ্যের প্রতি একপ্রকার ভয়ানক বিতৃষ্ণা। তাহার দৌর্বল্য বাড়িয়া উৎকণ্ঠায় পরিণত হয় এবং তাহাকে খাবার দেওয়া হইলে, দম বন্ধের মত হইতে থাকে। দয়ালু লোকেরা খুব সচরাচর তাহাকে কিছু খাওয়াইতে চাহে, কারণ সে হয়ত সমস্ত দিন বা সমস্ত রাত্রি কিছু খায় নাই, কিন্তু খাদ্যের চিন্তাতেই তাহার শ্বাসকষ্ট বাড়িয়া উঠে, তাহার বমি বমি ভাব, তাহার বিতৃষ্ণা, তাহার কষ্ট বাড়িয়া উঠে। এই ঔষধে বমন একটি সহজ ব্যাপার নহে। বমন অল্পাধিক আপেক্ষিক প্রকৃতির। “ভীষণ উকিউঠা, দমবন্ধ ভাব এবং উকিউঠা ও বমি করিতে চেষ্টা করা। অত্যন্ত কষ্টের সহিত শ্বাসকষ্ট ও দম বন্ধ হওয়া”। পাকস্থলী যেন আক্ষেপিকভাবে কার্য করিতে থাকে এবং অত্যন্ত কষ্টে এবং পুনঃ পুনঃ প্রবল চেষ্টা করার সামান্য একটু উঠে, তারপর আর একটু এবং এইরূপ চলিতে থাকে। অনেক পরিমাণে শ্লেষ্মার সহিত পাকস্থলীতে যাহা কিছু গিয়াছে তাহা সমস্তই বমি হইয়া যায়।” সময়ে সময়ে রক্তের সহিত সাদা দড়ির ন্যায় শ্লেষ্মা। “অনেক চেষ্টায় লালা বমন করে। প্রচুর পরিমাণে শ্লেষ্মা বমন করে। দুচ্ছেদ্য শ্লেষ্মা বমন করে”; লালার সহিত পিত্ত বমন করে; দড়ার মত জলীয় শ্লেষ্মা, তারপর কিছু খাদ্যবস্তু, তারপর কিছু পিত্ত বমন করে।” “কিন্তু প্রধানতঃ যে জিনিষ বমন করে তাহা ঘন, সাদা, দুড়ির মত শ্লেষ্মা, উহা সৰ্ব্বস্থানের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী হইতে নির্গত হয়।” শক্ত এবং দড়ির মত, উহাকে দড়ির ন্যায় টানিয়া লম্বা করা যায়। যখন এই ঘন, দড়ির ন্যায়, সাদা শ্লেষ্মা গলনলী এবং মুখ হইতে নির্গত হয়, তখন রোগীর সচরাচর শ্বাসরোধের মত হয়। মুখ উহাতে পূর্ণ হইয়া যায়। রোগীকে পাকস্থলীর আধেয়, যাহা শ্লেষ্মা বা শ্লেষ্মামিশ্রিত পিত্ত, তাহা হইতে পরিত্রাণ পাইবার জন্য অত্যন্ত চেষ্টা, আক্ষেপিক চেষ্টা করিতে হয়। বমনের প্রথম দিকে শ্লেষ্মা উঠে, তারপর অনেক চেষ্টার পর। পাকস্থলীতে পিত্ত উঠিতে থাকে এবং তারপর পিত্ত হইতেই ক্রমাগত বমন হইতে থাকে। অতিচেষ্টার ফলে পাকস্থলীতে রক্ত প্রধাবিত হয় এবং পাকস্থলীর আধেয় রক্ত রেখাঙ্কিত হইয়া পড়ে। সৰ্ব্বত্র শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে ক্ষত জন্মে। ইহাতে নাকে এবং কণ্ঠনলীতে ক্ষত আছে এবং সেই ক্ষত হইতে রক্তপাত হয়। পাকস্থলীতে রক্তপাতিযুক্ত ক্ষত, সুতরাং রক্তবমন হয়।
‘এন্টিম ক্রুডে’র ন্যায় ইহাও পুরাতন মদ্যপায়ীদের পক্ষে উপযোগী। পুরাতন মদ্যপায়ীরা সময়ে সময়ে দুর্বলতা গ্রস্ত হয় এবং তাহাদের পুনঃ পুনঃ ঠান্ডা লাগে। খুব বড় রকমের ব্যভিচার করিয়া এবং ঐ পথে বহুদিন থাকিবার পর, তাহারা শিথিল এবং সর্দিপ্রবণ হইয়া পড়ে; ঠান্ডা লাগিলে বুক শ্লেষ্মায় ভরিয়া উঠে, এবং তাহারা বমি করিতে থাকে, দম বন্ধ হইতে থাকে, আবার বমি করিতে থাকে। পুরাতন মদ্যপায়ীদের বুকে শ্লেষ্মার ঘড়ঘড়ি।” কখন কখন এন্টিম ক্রুড টার্টের প্রয়োজন হয়। উপসর্গগুলি প্রধানতঃ পাকস্থলীতে সীমাবদ্ধ থাকিলে এন্টিম ক্রুড; আর বর্ধিত উৎকণ্ঠা এবং শীতলতা এবং অবসন্নতা দীর্ঘকাল মদ্যপানজনিত অবসন্নতার সহিত বক্ষ-লক্ষণ বর্তমান থাকিলে এন্টিম টার্ট। পুরাতন গেঁটেবাত রোগী; পুরাতন মদ্যপায়ী, পুরাতন ভগ্নস্বাস্থ্য ধাতু। শিশুদিগের ভগ্নস্বাস্থ্য ধাতু থাকিলে মনে হয় যেন তাহারাও বৃদ্ধ হইয়া পরে। তাহাদের সর্দি লাগিয়া বুকে ঘড়ঘড় শব্দ হইলে এই ঔষধ আবশ্যক হয়।
খুব সচরাচর পাকস্থলীতে উদ্বেগ থাকে, উহাকে সব সময়ে যন্ত্রনা বলিয়া বর্ণনা করা যায় না। কিন্তু এক প্রকার উৎকন্ঠার ভাব, একপ্রকার মারাত্মক অবসন্নতা, পাকস্থলীতে একপ্রকার অবর্ণনীয় অবসন্নতা, যেন সে মরিতে চলিয়াছে। পাকস্থলীতে উৎকন্ঠার সহিত বমি বমি ভাব। যকৃতে অপ্রবল রক্তসঞ্চয়, তৎসহ বমন ও পিত্তবমন ।
এই ঔষধে যথেষ্ট কাটিয়া ফেলার ন্যায় বেদনা আছে। পাকস্থলীর মধ্যে খঅমচান যন্ত্রনা। শূলবেদনার ন্যায় যন্ত্রনা। উদরের স্ফীতি। উদর রক্তাম্বু দ্বারা পূর্ণ হতে পারে। অথবা বায়ুদ্বারাও পূর্ণ হইতে পারে। ছুরি দিয়া কাটার ন্যায় তীব্র কর্ত্তনবৎ বেদনা, উদরে অত্যন্ত তীব্র যন্ত্রণা, এন্টিমোনিয়ামের সর্বপ্রকার প্রস্তুতিতেই শোথ একটি স্বাভাবিক অবস্থা। আমার মনে পড়ে যে, একজন উৎসাহী পশু চিকিৎসক, দেশে বিশেষ প্রকার দূষিত কীটাণুর আবির্ভাব হইয়া যখন উহা সকল আস্তাবলের মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল, তখন প্রত্যেকটি ঘোড়াকেই কাল এন্টিমনি খাওয়াইতেছেন, আমি যখন জানিলাম যে তিনি সব ঘোড়াকেই কাল এন্টিমনি খাওয়াইতেছেন, তখন উপদেশ দিলাম যে, আমার ঘোড়াকে যেন আমি যে ঔষধ দিয়াছি যে, তাহা ছাড়া আর কোন ঔষধ দেওয়া না হয়। যে সকল ঘোড়োকে তিনি চিকিৎসা করিয়াছিলেন, তাহার প্রায় সবগুলিই শোথ রোগে শেষ হইয়াছিল এবং পায়ে কাপড় জড়ান অবস্থায় বহুদিন এবং বহু সপ্তাহ পড়িয়াছিল। ইহাতে এন্টিমোনিয়ামের একটি পরীক্ষা হইল। এন্টিম টার্ট শোথে পরিপূর্ণ। পূর্বে একটা প্রথা ছিল যে, নিউমোনিয়া ও জ্বররোগের পর বৃদ্ধ এবং ভগ্নস্বাস্থ্য লোকদিগকে এন্টিম টার্টের উপর রাখিয়া দিতে হইবে, কিন্তু সর্ম্পূন সুস্থ হইবার পূর্বে তিন চার মাস ধরিয়া প্রায় ক্ষেত্রেই তাহাদের পায়ের পাতায় ফুলা থাকিত। এরূপ না হইলে তাহাদের জ্বরক্ষত হইত। এন্টিমোনিয়াম এরূপ জ্বরক্ষতের একটি সাধারণ কারণ। ইহা একপ্রকার দীর্ঘকালস্থায়ী অলস প্রকৃতির ক্ষত, যাহা ভগ্নস্বাস্থ্য ব্যক্তিগণের পুরাতন জ্বরের পরে পায়ে উপরে প্রকাশ পায়। কখন কখন তাহারা এই ক্ষত হইতে মুক্তি পায় না আমাদের মতাবলম্বী কোন চিকিৎসকের হাতে না পড়িলে, তাহারা তখনই উহা হইতে মুক্তি পায় না।
অপর নাম – টার্টার এমেটিক (Tartar Emetic)
এন্টিমোনিয়াম টার্টারিকামকে টার্টার এমেটিক নামে অভিহিত করা হয়। ইহা এন্টিমনি ও পটাশ মিশ্রিত একপ্রকার ক্ষারাম্ল পদার্থ।
এন্টিম টার্টের- মূলকথা
১। মোটা ঘড়ঘড় শব্দ সহকারে গলায় অত্যধিক শ্লেষ্মাসঞ্চয়; রোগী উহা তুলে ফেলতে পারে না; ফুসফুসের পক্ষাঘাতের সম্ভাবনা।
২। রক্তে অক্সিজেনের অভাবহেতু মুখমণ্ডল অত্যন্ত ফ্যাকাশে ও নীলবর্ণের।
৩। অধিকাংশ রোগেই অতিশয় তন্দ্রালুতা (coma) বা নিদ্রালুতা।
৪। অবসন্নতা সহকারে বমন ও অত্যন্ত বিবামিষা (nausea), সৰ্বাঙ্গীন শীতলতা, ঠাণ্ডা ঘর্মও নিদ্রালুতা।
৫। মাথার ও হাতের আভ্যন্তরিক কম্পন।
৬। বসন্তের গুটির মত ঘন উদ্ভেদ (eruptions) প্রায়শঃই গোলাকার (ব্রনের মতো) ও মটরের মত বড় হতে থাকে।
৭। শ্লেষ্মা তুলে ফেললে উপশম বোধ।
৮। জীবনের উভয় প্রান্তে – বাল্যকাল ও বৃদ্ধকালে এই ঔষধ
উপযোগী; রোগী তার কাছে বা আশেপাশের ব্যক্তিগণকে জড়িয়ে ধরে, ‘কোলে উঠে বেড়াতে চায়; তাকে কেউ স্পর্শ করলে কাঁদে ও ঘ্যান ঘ্যান করে, নাড়ী দেখতে দিতে চায় না।
এন্টিম টার্ট – পর্যালোচনা
এন্টিমোনিয়াম টার্টারিকাম একটি প্রবল বমন কারক ঔষধ। আমার সেই সময়ের কথা মনে পড়ে যখন সেকালের অ্যালোপ্যাথগণ একে নির্বিচারে ব্যবহার করতেন বমনকারী ঔষধরূপে, যেমন -বোটানিস্টরা লোবেলিয়া ইনফ্লেটা ব্যবহার করতেন পাকস্থলী পরিস্কারের জন্য। আজকাল “হালের পদ্ধতি অনুসারে পাকস্থলী ধোয়া ও এনিমা দ্বারা স্থূলান্ত্র ধোয়াও ফ্যাশান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ খুবই সঙ্গত, কারণ তারা তাদের ঔষধ ব্যবস্থা বিদ্যায় অতিশয় পঙ্গু।
তাছাড়া এই সব উন্নতি সাধন সত্ত্বেও এখনও “দেহ পরিস্কার করার নামে” যথেষ্ট অন্ত্রের ঘষামাজা করা হয়; এক্ষেত্রে মনে হয় সুস্থ অবস্থায় থাকলেও অন্ননালী যেন একটি স্বয়ং-পরিস্কারক প্রতিষ্ঠান নয় এবং উহা পরিস্কার রাখার জন্য নির্দিষ্ট ও নিয়মিতভাবে অর্থাৎ মাঝে মাঝে একবার “আগাগোড়া পরিষ্কার করতে হয়” (যেমন ঘরদোর পরিস্কার করা হয়ে থাকে)। ইহা নিশ্চই মুখতা, তবে তারা যা জানে তাই করুক। আমাদের হোমিওপ্যাথি এন্টিমোনিয়াম টার্টারিকাম বা অন্য কোন বমন কারক ঔষধ রোগ আরোগ্যের জন্য বমন নোদ্দেশ্যে কখনও ব্যবহৃত হয় ।
রোগ আরোগ্যের জন্য আমরা অন্যান্য ঔষধ যেভাবে ব্যবহার করে থাকি একেও সেই রকমভাবে সমঃ সমং সময়তি’ নীতি অনুসারেই ব্যবহার করি। এই ঔষধের গা বমি বমি ভাব ইপিকাকের মতই প্রবল কিন্তু ঐরূপ সদস্থায়ী নয়; বমি করলে উহার উপশম হয়।
২। কলেরা – ২৫ বছরেরও বেশী কাল ধরে আমি (ডাঃ ন্যাশ) দেখছি ইহা কলেরা মৰ্ব্বাস রোগে একটি অব্যর্থ ঔষধ (অবশ্য কোন রোগেরই কোন অব্যর্থ ঔষধ নেই)। আমাকে কদাচিৎ অন্য কোন ঔষধ ব্যবহার করতে হয়েছিল তবে সেক্ষেত্রে পাকস্থলী ও অন্ত্রের দরুন খাল ধরা ছিল তাই কুপ্রাম মেটালিকাম ব্যবহারেই তা প্রশমিত হয়।
এন্টিমটার্টের প্রয়োগ লক্ষণগুলি হল গা বমি বমি বা বিবমিষা, বমন, তরল মল, অবসন্নতা, শীতল ঘৰ্ম্ম ও তন্দ্রালুতা বা সুপ্তি (stupor); কলেরা রোগের মন্দ অবস্থায় প্রায়ই এই সকল লক্ষণ দেখা যায়। আমাকে বাধ্য হয়ে প্রতিটি বমনের পরে পরে এক মাত্রা করে ঔষধ ব্যবহার করে দু-তিন মাত্রা ঔষধ ব্যবহার করতে হয়েছে এবং তাতেই রোগী সেরে গেছে।
সাধারণতঃ পাঠ্য পুস্তকে এই রোগের জন্য এই ঔষধটির উল্লেখ করা হয় না। কিন্তু আমি আমার বহুল অভিজ্ঞতাও পৰ্যবেক্ষণ থেকে এটি জানতে পেরেছি। তাছাড়া ইহা একটি রত্ন বিশেষ।
৩। শ্বাসযন্ত্র
এন্টিমোনিয়াম টার্টারিকাম শ্বাসযন্ত্রের উপর বিশেষ ক্রিয়া প্রকাশ করে, বিশেষ করে এন্টিম টার্টের যদি এই একটি মাত্র আরোগ্যকর শক্তিই থাকত তাহলে ইহা অপরিহার্য্য ঔষধ হিসেবেই গণ্য হত। ইহা ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, হুপিংকাশি ও হাঁপানি প্রভৃতি যে নামের রোগেই ব্যবহৃত হোক না কেন, সব ক্ষেত্রেই এতে স্থূল ঘড়ঘড় শব্দসহ অতিশয় শ্লেষ্মা জমা থাকে এবং সেই সঙ্গে বক্ষের পূর্ণতা সহ উহাতে গয়ের তুলে ফেলার কোন ক্ষমতা থাকে না। তাছাড়া ইহা সকল বয়সেও সকল প্রকার ধাতুর পক্ষেই ব্যবহার্য, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের পক্ষে উপযোগী।
এই সকল ক্ষেত্রে রোগীদের প্রায়ই একটি লক্ষণ বর্তমান থাকতে দেখা যায়। তা হল অতিশয় তন্দ্রালুতা বা নিদ্রালুতা, এমনকি কখন কখনও কোমার মত হয়ে থাকে। ইহা কেবল শ্বাসযন্ত্রের পীড়াতেই নয় ইহা শিশু কলেরা বা কলেরা মৰ্বাস ও সবিরাম জ্বরেও দেখা যায়। নিউমোনিয়ায় টার্টার এমিটিক ও ওপিয়াম উভয়েরই অতিশয় তন্দ্রালুতা থাকতে পারে; কিন্তু এক্ষেত্রে নির্বাচন সম্বন্ধে কোন গণ্ডগোল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওপিয়ামের মুখমণ্ডল কালচে বা বেগুনে এবং দীর্ঘনিশ্বাস বা নাশাশব্দকারী শ্বাসক্রিয়া থাকে।
টার্টার এমিটিকের মুখমণ্ডল সৰ্ব্বদাই ফ্যাকাশে অথবা নীলাভাযুক্ত, উহাতে কোন লাল ভাব থাকে না এবং শ্বাসেও শব্দ হয় না।
তবে ওপিয়াম, টার্টার এমিটিক ও নাক্স মস্ক্যাটা – এই তিনটি ঔষধই নিদ্রালুতার জন্য খ্যাত; এছাড়া এদের মধ্যে অন্যান্য কোন সাদৃশ্য নেই।
৪। নিউমোনিয়ার পরে ফুসফুসের যে হেপাটাইজেশান থাকে তাতে এন্টিমোনিয়াম টার্ট একটি অত্যুৎকৃষ্ট ঔষধ। এক্ষেত্রে অঙ্গুলি দ্বারা ফুসফুসের উপর আঘাত করলে যখন ঘন গর্ভ বা ডাল (dull) শব্দ হয়, নিশ্বাস প্রশ্বাসের মার্মার (murmur) ধ্বনির অসদ্ভাব বা অভাব ও শ্বাসের হ্রস্বতা থাকে, এবং রোগী ফ্যাকাশে, দুর্বল ও নিদ্রাতুর হয় তখন ইহা ব্যবহৃত হয়।
এই অবস্থায় সালফার দ্বারা আশোষন ক্রিয়া (absorption) না বাড়লে টার্টার এমিটিক দ্বারা তা অনেক সময়েই হয়ে থাকে। আমি (ডাঃ ন্যাশ) এই ঔষধের ২০০ থেকে সি. এম পোটেন্সি পর্যন্ত ব্যবহার করে সমান উপকার পেয়েছি।
Ant-t : Antimonium Tartaricum, Tartarus Stibiatus
Congestion and catarrh of respiratory tract.
Coarse rattling with wet sounding cough, but scanty, difficult expectoration, unable to get it out. Suffocating. Cyanosis.
Irritable, peevish.
Overwhelming sleepiness.
-Tartar Emetic
-Tartrate of Antimony and Potash.
-Anger, vexation.
-Vaccination
-Damp basement
-Debility
-Debauchery
-After eating
< In evening
< Lying down at night
< From warmth
< In damp cold weather
< Sour things and milk
< Morning
< Sitting down
< When seated
< From rising from a seat
< Change of weather in spring
> Sitting erect
> Eructations
> Expectoration
> Vomiting
> Lying on right side
> Motion
> Cold, open air
-Fear of being alone.
-Bad humour. Despondent.
-Frightened at every trifle.
-Muttering delirium.
-Stupid on awakening.
-Apathy or easily annoyed; wants to be left alone.
-Peevish; whining and moaning.
-Despair of his recovery.
-Child continuously wishes to be carried erect, unwilling to be looked at, or touched.
-Clings to attendants.
-Consciousness wanes on closing eyes.
-Melancholy, complains of numerous sufferings.
-Fretfulness, whining and crying before the attack of sickness.
-Restlessness in children > being carried about.
-Adapted to persons of hydrogenoid constitution of Grauvogl, torpid, phlegmatic persons. It is suited to old people and children to gouty subjects and drunkards with respiratory affection.
-Ill-effects of vaccination when remedies fail and Silicea is not indicated.
-All complaints are attended with irresistible to desire to sleep.
-Entire absence of thirst.
-Nausea, vomiting, coldness and drowsiness.
-Sweat runs through the whole of this remedy.
-Lack of reaction.
-Head-Vertigo alternates with drowsiness, with dullness and confusion.
-Band like feeling in forehead.
-Head hot and sweaty.
-Eyes-Eyes are sunken with dark rings around them, the lips pale and shriveled.
-Nostrils are dilated and flapping with a dark sooty appearance inside them.
-Upper lip drawn up.
-Expression is that of suffering, anxious despairing.
-Face-Cold, blue, pale, covered with cold sweat.
-Incessant quivering of chin and lower jaw.
-Mouth-Tongue-coated, pasty, thick while with reddened papillae and red edges, or red in streaks.
-dry in the middle.
-flow of saliva during pregnancy.
-mouth remains open after yawning.
-imprints of teeth on border after the tongue.
-G.I.T.-Craving for apples, acids, acid fruit, sour things, strong liquor.
-Aversion to milk and tobacco.
-Nausea, retching and vomiting especially after food with deathly faintness and prostration.
-Nausea comes in waves.
-Nausea produces fear with pressure in precordial region, followed by headache with yawning and lachrymation.
-Vomiting in any position except lying on right side.
-Vomiting forcible, then exhaustion and sleep.
-Eructation like bad eggs.
-Spasmodic colic, much flatus.
-Cholera morbus. Diarrhoea in eruptive disease.
-Respiratory system-Ant-t affects the mucous membrane especially of bronchi and lungs.
-Causing great accumulation of mucous with coarse rattling and bubbling rales in the chest- coarse, like the death rattle; thereby respiration is impeded and heart’s action becomes laboured, defective oxygenation in the circulation of blood occurs.
-All these conditions cause cyanosis, depression of vital power.
-Great rattling of mucus when very little is expectorated.
-Chest seems full, yet less and less in raised.
-Bronchial tubes overloaded with mucus.
-Rapid, short, difficult breathing, abdominal breathing, seems as if he would suffocate, must sit up to breathe or cough.
-Cough followed by vomiting or sleep.
-Emphysema of the aged.
-Oedema and impending paralysis of lungs.
-Coughing and gasping consecutively.
-Cough excited by eating, with pain chest and larynx < 3 a.m.
-Dyspnoea relieved by eructation, by lying on right side.
-Asphyxia neonatrum, child breathless and pale when born.
-Nursing infants let go the nipple and cry out as if out of breath.
-Child coughs when angry.
-Child bends backward with cough.
-Expectoration thick and white.
-Thirstlessness with all these bronchial troubles with copious discharge of mucus and great rattling in the chest.
-C.V.S.-Palpitation with uncomfortable hot feeling.
-Pulse rapid weak and trembling.
-Back-Violent pain in sacro-lumbar region < lifting.
-Slightest effort to move may cause retching and cold, clammy sweat.
-Sensation of heavy weight at the coccyx, dragging downward all the time.
-Vertebrae seems to rub against each other.
-Extremities-Trembling of whole body.
-Chills and contractures and pain with music.
-Skin-Convulsions when eruptions fail to appear.
-Pustular eruptions, leaving a bluish red mark.
-Small pox.
-Warts on glands penis.
1. Extraordinary craving for apple.
2. Great rattling of mucus but very little is expectorated.
3. Coarse rattling, like death rattle.
4. Vomiting in any position except lying on the right side.
-Through the pneumogastric nerve, it depress the respiration and circulation, causing great accumulation of mucus, great rattling of mucus. Death rattle, but very little is expectorated.
-Nausea, vomiting, coldness, drowsiness, prostration, sweat runs through the whole of this remedy.
1. All complaints are attended with irresistible desire to sleep.
2. Nausea, vomiting, coldness, drowsiness, prostration, sweat, runs through the whole of this remedy.
3. Great accumulation of mucus, very little expectoration.
4. Extraordinary craving of apple.
5. Tongue thick, white, pasty, with reddened papillae and red edges and red in streaks.
6. Nausea and vomiting in any position except lying on right side.
7. Complete absence of thirst with bronchial troubles.
8. Violent pain in sacro-lumbar region < lifting, slight effort to move, may cause retching and cold clammy sweat.
9. Pustular eruptions like small pox.
-Bronchitis, Chicken pox, Chronic obstructive pulmonary disease, Congestive heart failure, Cyanosis, Impetigo, Pertussis, Pneumonia, Respiratory infections, Sepsis.
-Ant-t 30X almost a specific for babies who had diarrhoea and also vomited- Dr. Starr.
-Ant-t 30 or 200 almost specific for impetigo-Dr. Foubister.
-Ill-effects of vaccination when Thuja and Silicea are not indicated.
Follows Well : Bar-c, Bell, Bry, Camph, Caust, Ip, Merc, Nux-v, Phos, Puls, Rhus-t, Sep, Sulph.
Compare : Acon, Ars, Bar-c, Brom, Camph, Ferr-p, Hep, Iod, Ip, Kali-i, Lach, Lyc, Phos, Puls, Ter, Verat.
Antidoted By : Asaf, Chin, Cocc, Con, Ip, Laur, Op, Puls, Sep.
It Antidotes : Bar-c, Bry, Camph, Caust, Puls.
Duration Of Action : 20-30 Days.