মোচড়ান ও আপেক্ষযুক্ত ঝাঁকনি। |
তড়কার সময় মাথা পিছন দিকে বেকে যায় ও সমস্ত শরীরে খিল ধরে। |
অঙ্গ প্রতঙ্গ বেকে যায়, মুখ বিকৃত ও মুখমণ্ডল নীলবর্ন হয় ও শ্বাস প্রশ্বাস মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায়, মুখে ফেনা উঠে , তারপর জ্ঞান লোপ পায়। |
তড়কা বা ধনুষ্টঙ্কার হঠাৎ উপস্থিত হয়ে রোগীর নানা প্রকার অঙ্গ বিকৃতি হয়। |
মাথা, মুখমন্ডল ও হাতে চর্ম গুঢী উঠে এবং তাতে জ্বালা ও ব্যথা থাকে, গুঢীগুলো পরে একত্রে মিশে যায় ও হলদে মামড়ী পড়ে ও সর্বদা ভিজা ভিজা থাকে। |
মৃগীরোগ ও কোরিয়া রোগে সারাদেহে খিঁচুনি হয় এমন স্ত্রীলোকদের ও দাঁত উঠার সময় বা ক্রিমি হয়ে দেহে খিঁচুনি হয় এমন শিশুদের পক্ষে উপযোগী ।
তীব্র তড়কা সাথে সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ভয়ানক আপেক্ষ বা খিঁচুনি হয় জ্ঞান থাকে না। দেহ পেছনে বেঁকে যায়-সামান্য ছোঁয়ায়, গোলমালে বা ঝাঁকানি লাগলে নূতন করে তড়কা হতে থাকে এমন ক্ষেত্রে উপযোগী।
সূতিকারোগে আক্ষেপ, কয়েক মুহুর্তের জন্য বার বার শ্বাসবন্ধ—মৃতের মত দেখায়, দেহে উপরদিকে বেশী আক্রমণ, প্রসবের পরও ঐ আক্ষেপ হতে থাকে।
মৃগী – সাথে ডায়াফ্রাম পেশীর অত্যন্ত আক্ষেপ জন্য পাকস্থলী যেন ফুলে ওঠে, (যন্ত্রণায়) চিৎকার করে, মুখ লাল বা নীলচে হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত লাগে, জ্ঞান হারায় ও হাত পা ছুঁড়তে থাকে, রাতে ঘন ঘন আক্রমণ প্রথমে বারে বারে পরে অনেকক্ষণ ব্যবধানে। লেখা পড়তে গেলে অক্ষরগুলো যেন উল্টে গেছে মনে হয় উপর দিক বা নীচ দিকে বা একবারে দেখা যায় না (কক্কুলাস)।
দাঁত ওঠার সময় শিশুর দাঁত ও মাড়ি কিড়মিড় করে। দাঁতে দাঁত লাগার মত চোয়াল আটকে যায়।
খড়িমাটি ও অপাচ্য খাবার খাওয়ায় অস্বাভাবিক ইচ্ছা, কয়লা বা কাঠকয়লা এসব খেতে চায়-ঐসব খুব তৃপ্তি করে খেতে থাকে (এলুমি, সোরিন)।
মাথা, পাকস্থলী বাহু, পায়ে ভীষণভাবে ঝাঁকাতে থাকে যেন জোর ধাক্কা লেগেছে—ঐ সময় মাথায় গরমভাব থাকে। বহুদিন আগের মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডে জোর ঝাঁকি লাগার কুফল—তা থেকে খিঁচুনি; চামড়ায় শক্ত কাঠি ঢুকে মেরুদন্ড শক্ত ও ধনুষ্টঙ্কার হয় (হাইপেরিকাম)। মাথায়, মুখে ফোঁড়া হয় ঐগুলো একসাথে মিশে যায় তাতে পুরু হলদে মামড়ি পড়ে; দাড়িতে চুলকানি হয়।
একজিমা – তাতে কোন চুলকানি থাকে না, রস বার হয়ে জমে লেবুর রঙের মামড়ি পড়ে।
উদ্ভেদ চাপা পড়ে মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ হলে ব্যবহার্য।
সম্বন্ধ – তুলনীয় হাইড্রো-এসি, হাইপেরি, নাক্স-ভ; স্ট্রিকনি।
বৃদ্ধি – তামাকের ধোঁয়ায় (ইগ্নে); ছোঁয়া লাগলে।
শক্তি – ৬, ৩০, ২০০।
স্নায়বিক তন্ত্রের উপর কাজ করে, এই ঔষধ আক্ষেপ সম্পর্কিত উপসর্গ তৈরী করে থাকে, যেমন, হিক্কা, মুখমণ্ডলীয় পেশীর আক্ষেপ, ধনুষ্টঙ্কার এবং আক্ষেপ এই অবস্থাগুলিই এই ঔষধের রোগজনিত ছবি এবং এই সকল ক্ষেত্রে এই ঔষধটি বিশেষভাবে উপযোগী হয়ে থাকে, বিশেষ করে যদি এই সকল ক্ষেত্রে এই ঔষধের আরো কয়েকটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ বর্তমান থাকে। এই লক্ষণগুলির মধ্যে মাথা, ঘাড়, এবং মেরুদন্ড পিছনদিকে বেঁকে যায় এবং রোগীর সার্বিক অবস্থা খুবই মারাত্মক যা, তৎসহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ভীতিপ্রদ মোচড়ানি। মারাত্মক, অদ্ভুত ধরণের ইচ্ছা।শরীরের ভিতরে স্ফীতভাব। বিলাপ ও আর্তনাদ করা। অশ্বাভাবিক জাতীয় কাজ করে। চর্মের উপর স্পষ্টভাবে কাজ আছে।
মন – প্রলাপ তৎসহ গান করা, নাচকরাও মজাদার অঙ্গভঙ্গী করা। প্রতিটি বস্তুই রোগীর কাছে অদ্ভুত ও ভয়ংকর বলে মনে হয়। বর্তমান ও অতীতের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলা; শিশুর মত অনুভূতি। বোকার মত অনুভূতি। বিষন্নতা তৎসহ হতাশা। অবিশ্বাস প্রবণতা, মৃগী; বিলাপি ও ঘ্যান ঘ্যানানি। প্রানবন্ত স্বল্পসমূহ।
মাথা – মাথা একদিকে ঘোরানো অথবা দ্বিভাঁজ অবস্থায় থাকে। সেরিব্রোস্পাইন্যাল-মেনিনজাইটিস। মাথাঘোরা, তৎসহ পাকাশায়িকশূল এবং পেশীর আক্ষেপ। মাথার ভিতর হঠাৎ করে এবং মারাত্মক ধরণের ধাক্কা অনুভব করে। দৃষ্টবস্তুর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা। মস্তিষ্কে আঘাত জনিত কারণে আক্ষেপ। মাথায় পুরু, হলুদ বর্ণের মামড়ি। বায়ু নিঃসরণে মাথায় কষ্টের উপশম হয়।
চোখ – পড়ার সময় অক্ষরগুলি অদৃশ্য হয়ে যায়। চোখের তারা বিস্ফারিত, আলোকে অনুভূতিহীণতা ট্যারা দৃষ্টি। দৃষ্টবস্তু সমূহ সরে যায়, এগিয়ে আসে, এবং দুটি বলে মনে হয়। একদৃষ্টিতে তাকান। মাথা নীচের দিকে ঝোঁকালে, চোখের তারা উপরের পাতার পিছনদিকে সরে যায়। বরফের ঠাণ্ডায় চোখ সোজা রাখা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার কুফল। চোখ ও চোখের উপাঙ্গ সমূহের আক্ষেপিক উপসর্গসমূহ। দৃষ্টিট্যারা নির্দিষ্ট সময় অন্তর, আক্ষেপিক, চোখে আঘাত লাগা বা পড়ে যাওয়ার কুফল।
কান – শুনতে কষ্ট হয়। হঠাৎ করে ভয়ঙ্কর শব্দে বিস্ফোরণ, বিশেষ করে ঢোক গেলার সময়। কান থেকে রক্ত স্রাব।
মুখমণ্ডল – পুঁজ যুক্ত উদ্ভেদ। মুখমণ্ডল, মাথা, মুখের কোনা এবং চিবুকে দেখা যায় তৎসহ পুরু, হলুদরঙের মামড়ি সহ জ্বালাকর যন্ত্রণা। মুখমণ্ডল লালচে। মুখমণ্ডলের পেশীর আক্ষেপ, দাঁত জড়সড় করার প্রবণতা যুক্ত।
গলা – শুষ্ক। মনে হয় একটি জায়গা থেকে সংযুক্ত অবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে। অন্ননালীর আক্ষেপ; কিছুতেই ঢোক গিলতে পারে না। ধারালো হাড়ের টুকরো গেলার কুফলে অন্ননলীর উপসর্গ।
পাকস্থলী – পিপাসা; জ্বালাকর চাপ; হিক্কা, পাকস্থলীর উপরের অংশে দপদপকর অনুভূতি, এই অংশ সুটির আকারে ফুলে উঠে। অস্বাভাবিক বস্ত খাবার স্পৃহা। যেমন কয়লা (এলুমিনিয়াম, ক্যালকেরিয়া কার্ব)। অজীর্ণ, তৎসহ অনুভূতির অভাব, মুছে ফেলা।
উদর – পেট ফাঁপা তৎসহ উদ্বেগ ও বদমেজাজ। পেটের ভিতর গুড় গুড় শব্দ। পেট স্ফীত এবং যন্ত্রণাদায়ক, পেটের শূলবেদনা, তৎসহ আক্ষেপ।
সরলান্ত্র – সকালে উদরাময়, তৎসহ প্রস্রাবের অসহ্য বেগ, সরলান্ত্রে চুলকায়।
শ্বাস-প্রশ্বাস – বুকের ভিতর কষে আছে বলে মনে হয় খুব কষ্টকর শ্বাস নিতে হয়। বুকের পেশীসমূহের অবিরাম আক্ষেপ। বুকের ভিতর উত্তপ্ত।
পিঠ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ – ঘাড়ের পিছনের অংশের পেশীর আক্ষেপ ও খিলধরা, এবং মাথার পিছনের অংশে আক্ষেপ সহ মনোভাব। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বাঁকা অবস্থায় থাকলে টেনে সোজা করে এবং সোজা অবস্থায় থাকলে বাঁকা করা যায় না। পিট ধনুকের মত পিছনদিকে বেঁকে যায়। ত্রিকাস্থিতে ঝাঁকানি, ছিড়ে ফেলার মত বেদনা, বিশেষ করে ঋতুস্রাবকালীণ অবস্থায়।
চামড়া – একজিমা; চুলকায় না, রসানি জমে একটি শক্ত, লেবুর রঙের মামড়িতে পরিণত হয়। উদ্ভেদ চাপা পড়ার সুফলে মস্তিষ্কের রোগ। বড়ো বড়ো উদ্ভেদ, আকারে মটরের দানার মত। পুরাতন পুঁজযুক্ত উদ্ভেদ।
কমা-বাড়া-বৃদ্ধি, স্পর্শে, বায়ুপ্রবাহে, আঘাতে ধূমপানে।
সম্বন্ধ – দোষঘ্ন ওপিয়াম; আর্সেনিক।
তুলনীয়-সিকিউটা ম্যাকিউলেটা- ওয়াটার হেমলক (এই ঔষধের কাজগুলি সদৃশপূর্ণ; এই ঔষধের সব থেকে সুস্পষ্ট লক্ষণগুলি হল; অজ্ঞান হবার প্রবণতা যুক্ত, সবিরাম অথবা অবিরাম আক্ষেপ। সারা শরীর ঘামে ভিজে যায়। মৃগী ও ধনুষ্টঙ্কার রোগে এই ঔষধের প্রয়োগের কথা বিবেচনা করা যায়। অরিষ্ট ও নিম্নশক্তি ব্যবহার্য।) হাইড্রোসাইয়েনিক অ্যাসিড, ক্লোরিয়াম; ওন্যান্থ; ষ্ট্রিকনিয়া, বেলেডোনা।
শক্তি – ৬ষ্ট থেকে ২০০ শক্তি।
আক্ষেপ প্রবণতার জন্য এই ঔষধটির সমাদর। ইহা স্নায়ুমন্ডলকে এরূপ বর্ধিত উত্তেজনা প্রবণতার মধ্যে রাখে যে, কোন অংশে চাপ লাগিলেই আক্ষেপ উৎপন্ন হয়। আক্ষেপ কেন্দ্র হইতে পরিধির দিকে বিস্তৃত হয়; প্রথমে মস্তক, মুখমন্ডল এবং চক্ষু আক্রান্ত হয়। পাকস্থলীতে পূর্বানুভূতি জন্মিয়া আক্ষেপের সঙ্কেত জ্ঞাপন করে। কতকগুলি রোগ বুক হইতে, বিশেষতঃ হৃৎপিন্ড হইতে বিস্তৃত হয়, কম্প ও শীত বুকে আরম্ভ হয়, হৃৎপিন্ডের চতুর্দিকে একপ্রকার শীতলতা অনুভূত হয়, এবং সেই স্থান হইতে উহা দেহের অন্যান্য অংশে ছড়াইয়া পড়ে। আক্ষেপ কখন কখন মাথায় ও গলায় আরম্ভ হইয়া নিম্নদিকে বিস্তৃত হয়। সমগ্র দেহ এমন আততির অবস্থায় থাকে যে, উত্তেজনার পরে শারীরবিধানের সর্বত্র একপ্রকার আগুনের মত ঝলকা উঠিতে থাকে এবং তাহাতেই আক্ষেপ ঘটে। গলায় বা গলনলীতে কোন প্রকার উপদাহ উপস্থিত হইলে ঐ স্থানে ভীষণ আক্ষেপ ঘটে। একটি কাটা গিলিতে গিয়া শ্লেষ্মাপ্রধান ব্যক্তিদের যেরূপ খোঁচালাগার ন্যায় অনুভূতি হয়, তৎপরিবর্তে এরূপ ভয়ানক উপদাহ উপস্থিত হয় যে, একপ্রকার আক্ষেপ দেখা দেয় এবং উহা অন্যান্য অংশে বিস্তৃত হইতে থাকে। চর্মে বা নখের নিম্নে চোঁচ ফুটায় যে ধনুষ্টঙ্কার বা আক্ষেপ উপস্থিত হয়, পূর্বে ইহা তাহারই ঔষধ ছিল এবং ‘বেলে’র সহিত প্রতিযোগিতা করিত। আজকাল আমরা দেখিতেছি যে, স্নায়ুসমূহে আঘাত লাগার জন্য লিডাম’ ও ‘হাইপেরিকাম’ই সাধারণতঃ নির্দিষ্ট হইয়া থাকে।
ইহার কতকগুলি লক্ষণের এক বিশেষ প্রকৃতি এই যে, তাহারা মৃগীরোগের সদৃশ। মৃগীরোগের সদৃশ। মৃগীরোগের অবস্থা বা উহার অত্যন্ত সদৃশ একপ্রকার অবস্থা বর্তমান থাকিতে পারে। বিশেষ কোন সময়ে, যাহা কিছু ঘটিয়াছিল অথবা সে যাহা কিছু বলিয়াছিল, তাহার এতটুকুও সে মনে করিতে পারে না। সে কাহাকেও চিনিতে পারে না, কাহাকেও না চিনিতে পারিয়াই শুইয়া থাকে, কিন্তু যদি তাহাকে কোন প্রশ্ন করা হয়, তাহা হইলে সঠিক উত্তর দেয় এবং পরে তাহার আর স্মরণে থাকে না যে, কি ঘটিয়াছিল।
ইহা একপ্রকার মস্তিষ্ক-মেরুদন্ড সংক্রান্ত উপদাহ; মস্তক পশ্চাদ্দিকে আকৃষ্ট হয়, সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আক্ষেপযুক্ত ও আড়ষ্ট হয়। ইহা আঘাতজনিত ধনুষ্টঙ্কার দাঁতিলাগা, অপস্মার, অপম্মার সদৃশ আক্ষেপ আরোগ্য করিয়াছে।
অন্ত্রের তীব্র যন্ত্রণার সহিত আক্ষেপিক অঙ্গচালনা এবং আক্ষেপ উপস্থিত হয়। যদি পাকস্থলীর গোলযোগ হয় ঠান্ডা লাগে অথবা যদি সে ভয় পায় বা অন্য কোন প্রকার মনোবিকার উপস্থিত হয়, তাহা হইলে আক্ষেপ উপস্থিত হইতে পারে। সে স্পর্শে অত্যন্ত অনুভূতিবিশিষ্ট থাকে এবং স্পর্শ করিলে ও বায়ুপ্রবাহ লাগিলে আক্ষেপ উপস্থিত হয়। আক্ষেপ উপর হইতে নিম্নদিকে বিস্তৃত হয়; এবং এইজন্যই ইহা কুপ্রামে’র বিপরীত। কুপ্রামে’র আক্ষেপ হস্ত-পদাদি হইতে কেন্দ্রের দিকে বিস্তৃত হয় অর্থাৎ প্রথমে হস্তাঙ্গুলিতে সামান্য সামান্য আক্ষেপ, কেবলমাত্র খালধরার ন্যায় অনুভূত হয়; তারপর হাতে এবং তারপর বক্ষে এবং সমুদয় শরীরে আক্ষেপ দেখা দেয়। সাইকুটায় সামান্য সামান্য আক্ষেপ মাথায়, চক্ষে এবং গলায় দেখা দিয়া, পিঠের উপর দিয়া হস্ত-পদাদিতে বিস্তৃত হয় এবং ভয়ঙ্কর মোচড়ানির সৃষ্টি করে। সিকেলি’র আক্ষেপও সময় সময় মুখে আরম্ভ হয়।
সময়ে সময়ে সে কাহাকেও চিনিতে পারে না, কিন্তু স্পর্শ করিলে এবং জিজ্ঞাসা করিলে সে সঠিক উত্তর দেয়। হঠাৎ তাহার সংজ্ঞা ফিরিয়া আসে এবং কি যে ঘটিয়াছিল তাহার কিছুই মনে করিতে পারে না। সে অতীতের সহিত বর্তমানকে গোলাইয়া ফেলে। সে নিজেকে একটি ছোট ছেলে মনে করে। সবকিছুই গোলমেলে ও অদ্ভুত লাগে। সে কোথায় রহিয়াছে, তাহা বুঝিতে পারে না। পুরাতন বন্ধুদের মুখ অপরিচিত মনে হয়। সে তাহাদের দিকে চাহিয়া দেখে এবং বিস্মিত হইয়া ভাবে যে, ইহারাই কি সেই লোক, যাহাদিগকে সে চিনিত। তাহার নিজের বাড়ী ও পরিচিত স্থানগুলি অচেনা বোধ হয়। অপরের কণ্ঠস্বর অদ্ভুত মনে হয়। দর্শন ও ঘ্রাণশক্তি এবং অন্যান্য বিশেষ বিশেষ ইন্দ্রিয়জ্ঞান বিকৃত ও বিশৃঙ্খল হইয়া পড়ে। সে নিজের সম্বন্ধে, তাহার বয়স সম্বন্ধে এবং অবস্থা সম্বন্ধে গোলাইয়া ফেলে। স্ত্রীলোক মৃগীর আক্রমণ হইতে মুক্ত হইয়া শিশুর ন্যায় ব্যবহার করিতে থাকে। পুরুষ মনে করে, যেন সে একটি শিশু এবং শিশুর ন্যায় ব্যবহার করিতে থাকে, অকারণে হাসে, খেলনা নিয়ে খেলা করে এবং এইরূপ নানা শিশু সুলভ ব্যবহার করিতে থাকে। সে মনে করে, যেন সে একটি অপরিচিত স্থানে রহিয়াছে, উহাতে তাহার ভয় হয়। সে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে উৎকণ্ঠার সহিত চিন্তা করে। মানসিক জড়তা, কিছুক্ষণ পর্যন্ত চিন্তা ও অনুভূতির লোপ। আক্ষেপের সহিত বা আক্ষেপ ব্যতীত কয়েক ঘন্টা বা কয়েক দিন যাবৎ পূর্বস্মৃতি বিলুপ্ত থাকে। আক্ষেপ সাধারণতঃ ভাবাতিশয্য অথবা মৃগীবৎ অবস্থার স্থান গ্রহণ করে। নেট্রাম মিউরে’র মানসিক অবস্থা অনেকটা এই ঔষধের সদৃশ, কারণ ‘নেট্রাম মিউরে’র রোগী তাহার গৃহস্থলীর কাজকর্ম এবং অন্যান্য সব কিছু করিয়া বেড়ায়, কিন্তু পরের দিন তাহার আর কিছুই মনে থাকে না। নাক্স মস্কেটা’ আর একটি ঔষধ, যাহাতে কাজকর্ম করিয়া বেড়াইবার সময় মন সম্পূর্ণ শূন্য থাকে সম্পূর্ণ অন্যমনস্কতা বর্তমান থাকে।
রোগীর অদ্ভুত অদ্ভুত ইচ্ছা থাকে; কয়লা এবং অন্যান্য অনেক অদ্ভুত জিনিষ খাইতে চায়, কারণ সে খাদ্য ও অখাদ্যের মধ্যে প্রভেদ নির্ণয় করিতে পারে না, কয়লা এবং কাঁচা গোল আলু খায়। একাকী থাকিতে চায়, লোকসঙ্গে প্রবৃত্তি থাকে না। গান করে, চিৎকার করে, নাচে, খেলনা ভালবাসে, শিশুর মত লাফাইয়া বেড়ায়। শয্যায় শুইয়া শোক ও ক্রন্দন করে। অত্যন্ত উত্তেজনায় শিশু ভীতভাবে অপরের কাপড় চাপিয়া ধরে। আক্ষেপ আসিবার পূর্বেই সম্ভবতঃ এরূপটি ঘটে, চেহারায় অত্যন্ত ভীতিভাব প্রকাশ পায়, অথচ যখন সে আক্ষেপ হইতে মুক্ত হয়, তাহার ভয়ের কথা কিছুই মনে থাকে না। এইরূপ উদ্বেগ ও ভয়ের ভাব, আক্রমণটি আরম্ভ হইয়াছে, কিন্তু তখনও পূর্ণভাবে প্রকাশ পায় নাই, এরূপ অবস্থা দেখা দেয়। দুইবার আক্ষেপের মধ্যে রোগী ধীর, শান্ত, নম্র ও বশ্য থাকে; এই লক্ষণ হইতেই ইহাকে ‘ষ্টিকনিয়া’ ও ‘নাক্স ভমিকা হইতে প্রভেদ করা যায়। নাক্সে’র আক্ষেপ সর্বাঙ্গে দেখা দেয় এবং স্পর্শ করিলে ও বায়ুপ্রবাহে বৃদ্ধিযুক্ত হয়, শরীর নীলাভা বা বেগুনিবর্ণযুক্ত হয়, কিন্তু দুই আক্ষেপের মধ্যবর্তীকালে রোগী অত্যন্ত খিটখিটে হইয়া উঠে। অবশ্য, যখন একটি আক্ষেপ যাইতে না যাইতেই আর একটি আক্ষেপ আসে, তখন তোমরা ইহা লক্ষ্য করিতে পারিবে না, কিন্তু রোগী যখন আক্ষেপযুক্ত হয়, তখন নাক্সে’র রোগী অত্যন্ত খিটখিটে হইয়া পড়ে। সাইকুটার রোগী আক্ষেপযুক্ত হইলে বিষাদ, উদ্বেগ ও দুঃখে পূর্ণ হইয়া উঠে, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অলীক ভয়ে ভীত হয়, দুঃখের কাহিনীতে অভিভূত হয় এবং অমঙ্গলবাদী হইয়া পড়ে। সে লোকসমাজকে ভয় করে, লোকসঙ্গ পরিত্যাগ করে, অপরকে ঘৃণা করে, নিজের সম্বন্ধে উচ্চধারণা পোষণ করিতে থাকে। এই লক্ষণে ইহা ‘প্ল্যাটিনা’র কাছাকাছি যায়, কিন্তু ঔষধ দুইটির মধ্যে আর কিছুই সাদৃশ্য নাই। ভয়ে পূর্ণ, ‘ওপিয়াম’, ইগ্নেশিয়া এবং একোনে’র ন্যায় ভয়ে আক্ষেপ উপস্থিত হয়।
শিরোঘূর্ণনে পূর্ণ। সমুদয় জ্ঞানকেন্দ্র ভীষণভাবে উত্তেজিত থাকে। সবকিছু বৃত্তাকারে ঘুরিতে থাকে। হাঁটিতে গেলে মাথা ঘোরে, দীপ্তিহীন চক্ষু, ইত্যাদি। মাথার খুলিতে আঘাত লাগিয়া, মাথায় চোট লাগিয়া রোগ জন্মিলে উপযোগী। অনেক সময় আঘাতের স্থানে কোন উপসর্গ থাকে না, হয়ত চাপ লাগিয়া ঐরূপ হইতে পারে, কিন্তু দূরবর্তী কোন অঙ্গে যাতনা দেখা দিতে পারে, সেইখানে পেশীর আকর্ষণ ও খালধরা দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কে ধাক্কা লাগা (concussion) এবং তাহার ফলে উপসর্গ, বিশেষভাবে আক্ষেপ। একপার্শ্বিক শিরঃপীড়া, রোগীকে খাড়া হইয়া স্থিরভাবে বসিয়া থাকিতে বাধ্য করে। হাঁটিতে গেলে, যেন মস্তিষ্ক আলগা হইয়া গিয়াছে এরূপ শিরঃপীড়া বেদনার সঠিক প্রকৃতি সম্বন্ধে ভাবিতে গেলে, উহা আর থাকে না। মস্তিষ্ক-মেরুমজ্জা-প্রদাহরোগে আক্ষেপ-লক্ষণ থাকিলে এবং ঐ আক্ষেপ স্পর্শে বৃদ্ধিযুক্ত হইলে, জ্বর থাকিলে, এমনকি চর্মে চিত্র-বিচিত্র দাগ সৃষ্টি হইলেও, উহা এই ঔষধে আরোগ্য হইয়াছে। আঘাতের পর মন ও মস্তক সংক্রান্ত উপসর্গ।মস্তিষ্কে-মেরুমজ্জা-প্রদাহরোগে, রোগী চেয়ারে বসিয়া এমনভাবে কথা বলে, যেন কিছুই হয় নাই, তারপর বিদ্যুৎ চমকের ন্যায় মুহূর্তমধ্যে সে আর এক অবস্থায় চলিয়া যায়, তখন সে কাহাকেও চিনিতে পারে না, শিথিল হইয়া পড়িয়া যায় এবং বিছানায় শোয়াইয়া দিতে হয়, এবং যদিও সে প্রশ্নের উত্তর দেয়, সে অর্ধচেতন অবস্থায় থাকে, কাহাকেও চিনিতে পারে না। এই অবস্থা পরিবর্তিত হইয়া আক্ষেপে পরিণত হইতে পারে। আক্ষেপ মাথা পশ্চাদ্দিকে বাকিয়া যায়, মাথার পশ্চাদ্দিকে ঝাঁকানি দেয়, আক্ষেপ মস্তকে আরম্ভ হইয়া নিম্নদিকে যায়। মস্তকে, বাহুতে ও পায়ে ভয়ানক ঝাঁকি দেয়।‘বেলের আক্ষেপের ন্যায়, ইহার আক্ষেপেও ‘বেলের ন্যায় মস্তক উত্তপ্ত এবং হস্তপদাদি শীতল থাকে। নিদ্রাকালে মস্তক-ত্বকে ঘর্ম। শিশু মাথা, এপাশ-ওপাশ চালিতে থাকে। মাথা উত্তপ্ত।
চক্ষুর আক্ষেপিক ক্রিয়া, তারকাদ্বয় বিস্তৃত ও অনুভূতিশূন্য; রোগীর কুপ্রামে’র ন্যায় দৃষ্টি একস্থানে নিবদ্ধ বিস্ফারিত, স্থির, দীপ্তিহীন চক্ষু, শিবনেত্র। মস্তিষ্কের উপদাহ হইতে শিশু যে আক্ষেপের অধীন হয় তাহাতে কেবলমাত্র টেরা দৃষ্টি হয়। যতবারই শিশু ভয় পায়, ততবারই তাহার টেরা দৃষ্টি হয় তাহাকে স্পর্শ করিলে অথবা তাহার সর্দি লাগিলে অথবা পড়িয়া মাথায় লাগিলে অথবা নির্দিষ্ট কাল ব্যবধানে তাহার টেরা দৃষ্টি হয়।
নাক স্পর্শকাতর থাকে। স্পর্শে ও নাড়া লাগিলে উপসর্গসমূহ উপস্থিত হয় এবং এই কারণেই ইহা আঘাত লাগা, উত্তেজনা প্রবণতা এবং অত্যনুভূতির অন্য একটি উপযোগী ও প্রথমে ব্যবহার্য ঔষধ ছিল।
ইহা ক্ষৌরকার্য্যের পরবর্তী রোগ আছে। ইহা গোঁফদাড়ির উপর যে রূপ উদ্ভেদ জন্মে, তাহাতে উপযোগী, ক্ষৌরকুন্ড; মুখের সর্বত্র যেখানেই দাড়িগোঁফ জন্মে সেইরূপ স্থানের উপর দলবদ্ধ ঘনসন্নিবিষ্ট উদ্ভেদসমূহ প্রকাশ পায়। গালের উপর একজিমার ন্যায় উদ্ভেদ। চোয়ালের নিম্নবর্তী গ্রন্থিসমূহের স্ফীতি। ইরিসিপ্লাস সদৃশ উদ্ভেদ। ওষ্ঠ ও চক্ষুপাতার বিষয়ে ইহা ‘কোনিয়ামের সহিত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধযুক্ত, উহাতে সামান্যমাত্র চাপে কঠিনতা উৎপন্ন হয়। ইহা ওষ্ঠের বহিঃত্বকের অর্বুদ আরোগ্য করিয়া থাকে।
গলার উপদ্রব অধিকাংশই আক্ষেপিক। মাছের কাঁটা বা কোন কাঠি গিলিবার সময় উহা গলায় আটকাইলে আক্ষেপ উপস্থিত হয়। সাইকুটা দেওয়ার পর আক্ষেপের নিবৃত্তি হইবে এবং কাটা বাহির করিয়া আনা যাইবে। ইহা আঘাত লাগার সহিত ভীষণ কণ্ঠরোধে এবং সেইজন্য কণ্ঠপরীক্ষা সম্ভব না হইলে উপযোগী।
বক্ষে শীতলতার অনুভূতি। বুকের মধ্যে আক্ষেপ; মনে হয় যে, হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া থামিয়া যাইতেছে। পৃষ্ঠের আক্ষেপিক লক্ষণ, মেরুদন্ডের পশ্চাদ্বক্রতা। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সকল অবস্থাই আক্ষেপিক প্রকৃতির।
[Cicuta, hemlock (Cent. Dict.), Millspaugh says:”The ancient Latin name in reference to the hollow stems of this genus, the name cicuta designating the hollow joints of reeds from which pipes were made.”
Virosa-virosus, poisonous or emitting or fetid odor.]
অপর নাম– ওয়াটার হেমলক (Water Hemlock)
ওয়াটার পারসনিপ (Water Parsnip)
কাউবেন (Cowbane)
সিকিউটা আম্বেলিফেরী জাতীয় উদ্ভিদ। ইহা জাৰ্মানী ও পশ্চিম ফ্রান্সের জলাশয়ের কাছে আর্দ্র ভূমিতে জন্মায়। এর মূল থেকে অরিষ্ট তৈরী হয়। সিকিউটার উপক্ষারকে সিকিউটিন বলে।
সিকিউটা ভিরোসা — পরিক্রমা
১। অতিশয় প্রবল আক্ষেপ (convulsions) সিকিউটার প্রকৃতিগত লক্ষণ। এর আক্ষেপে রোগীর নানা রকমের অদ্ভুত আকার ও প্রবল আকুঞ্চন (contractions) জন্মে। তার মধ্যে যেগুলি সাধারণতঃ দেখা যায় তা হল মাথা, ঘাড় ও মেরুদণ্ড পিছদিকে বেঁকে যায় (opisthotonos)। এই কারণেই ঔষধটিকে সেরিব্রো-স্পাইন্যাল মেনিনজাইটিসে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
*নিউইয়র্কের বোরেভিয়ার ডাঃ বেকার একবার এই রোগের একটি মহামারীর সময় নানা রকমের সাংঘাতিক অবস্থার ৫০টি রোগীকে আরোগ্য করেছিলেন, এমনকি তার একজন রোগীও মারা যায়নি, সকলেই আরোগ্য লাভ করেছিল। ইহা একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত এবং তিনি সিকিউটাকে এই রোগের প্রায় অমোঘ ঔষধ রূপে মনে করেন।
২। দন্তোদগমনকালীন আক্ষেপ বা তড়কায় অথবা কৃমিজনিত তড়কায় সিনা দ্বারা না উপকার হলে সিকিউটা হোমিওপ্যাথির একটি অত্যুৎকৃষ্ট ঔষধ। ইহা আরোও উপযোগী মস্তিষ্কের বা মেরুদণ্ডের আঘাতজনিত কুফলে বিশেষ করে পুরাতন অবস্থায় আক্ষেপ লক্ষণ থাকলে ও আর্নিকার দ্বারা উপকার না দর্শালে সিকিউটা ফলপ্রদ। সে সকল রোগে সিকিউটা ব্যবহাৰ্য্য সেই সকল রোগে আক্ষেপের যেমন প্রচণ্ডতা থাকে, রোগীর অঙ্গভঙ্গিও সেইরূপ উগ্রতা থাকে “সে কাতরোক্তি করে, আর্তনাদ করে, নানারকম অদ্ভুত সব অঙ্গ ভঙ্গি করে, নানাভাবে হাত পা ছেড়ে অতিশয় উত্তেজনা প্রকাশ পায়।”
৩। সর্বপ্রকার আক্ষেপ, – ক্ষনিক, বিলম্বিত, ক্যাটালেপস্পিজনিত বা মৃগীরোগ সংক্রান্ত, কৃমি, প্রসব বা সূতিকা ক্ষেত্রে উৎপন্ন, সকল প্রকার আক্ষেপই আক্ষেপ অতি উগ্র হলে সিকিউটার কথা মনে করা উচিত।
৪। চর্মরোগেও ইহা আশ্চর্য ঔষধ।
যে সকল পূঁজপূর্ণ উদ্ভেদ (ইরাপশান) একত্রে মিলিত হয়ে মুখমণ্ডল, মাথা ও শরীরের অন্যান্য স্থানে চাপড়া বাধে (crustes) ও পুরু হলদে মামড়ি সৃষ্টি করে তাতে ইহা ব্যবহৃত হয়।
রোগী বিবরণী –
এক সময়ে আমার একজন যুবতী রোগিণীর মাথায় দীর্ঘকালস্থায়ী একজিমা ক্যাপিটিস জন্মেছিল। উহা দীর্ঘকাল ধরে ছিল এবং সমস্ত মাথাটি একটা টুপির মত ঢেকে গিয়েছিল। আমি তাকে সিকিউটা ২০০ দিয়েছিলাম এবং সে খুব অল্পকালের মধ্যেই আরোগ্য হয়েছিল। সে আগে বহুবার বাহ্য প্রয়োগের ঔষধ ব্যবহার করেছিল কিন্তু কোন উপকার হয়নি।