গ্লোনইন GLONOINE [Glon]

হঠাৎ প্রচন্ডবেগে রক্তসঞ্চালনের বিশৃঙ্খলা হওয়ার প্রবনতা।
অত্যন্ত আলস্যভাব, কোন কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।
মেজাজ অত্যন্ত খিটখিটে, সামান্য কারণে রোগী অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং মস্তকে রক্তাদিক্য লক্ষণ দেখা যায়, মাথাটি বড় হয়ে গেছে এরূপ অনুভূতি।
মস্তক ও হাত-পা দপদপ করে বা দপদপানির সহিত ব্যথা থাকে।
সামান্য উত্তাপ সহ্য হয় না, মুখমণ্ডল নীল বর্ন দেখায়।
অত্যন্ত বুক ধড়ফড় করে।

উপযোগিতা স্নায়বিক, অল্পে উত্তেজিত, রক্তপ্রধান, উজ্জ্বল রঙ অনুভূতিপ্রবণ মহিলাদের ক্ষেত্রে, যারা সহজেই অভিভূত হয়ে পড়ে এমন পুরুষদের পক্ষে উপযোগী।

মানসিক উত্তেজনা, ভয় পাওয়া বা ভয় করে, যন্ত্র দ্বারা আঘাত লেগে রোগ ও ঐ সবের পরবর্তী কুফলে উপযোগী। চুল কেটে অসুস্থ হলে প্রযোজ্য (একোন, বেল)।

মাথার অসুখ গ্যাস লাইটে কাজ করে যখন মাথার ঠিক ওপরে তাপ লাগে তখন, মাথার চারদিকে উত্তাপ, স্টোভের তাপ বা রোদের তাপে ঘুরে বেড়িয়ে মাথার রোগ (ল্যাক, ন্যাট-কা) হলে ব্যবহার্য ।

মাথায় রক্তজমা হয় বা মাথায় একবার হৃৎপিন্ডে আর একবার পরিবর্তনশীল রক্তসঞ্চয় হলে প্রযোজ্য ।

মাথা অত্যন্ত বড় হয়ে গেছে এই অনুভূতি। মনে হয় যেন মাথার খুলি মস্তিষ্কের তুলনায় যথেষ্ট ছোট হয়ে গেছে। রোদের তাপে মাথা যন্ত্রণা বা সানস্ট্রোক (সন্যাস রোগ)। মাথা যন্ত্রণা প্রতিদিন রোদ বাড়াকমার সাথে সাথে বাড়ে ও কমে (ক্যালমিয়া, নেট-কা)।

নাড়ীর স্পন্দনের সাথে সাথে মাথায় ভয়ানক ঐরূপ স্পন্দন। দপদপ করেও স্পন্দন যুক্ত মাথা যন্ত্রণা—রোগী দুহাতে মাথা চেপে ধরে, শুতে পারে না যেন বালিশ উল্টে মাথায় আঘাত করছে।

মনে হয়, মস্তিষ্ক বড় হয়ে গেছে। পৃর্ণবোধ ও ফেটে যাওয়ার মত মনে হয়, মনে হয় সমস্ত রক্ত ওপরে পাম্প করে ওঠানো হচ্ছে প্রতিটি ঝাঁকানি, পদক্ষেপে, নাড়ীর ও স্পন্দনে মাথা দপদপ করে। ঋতুস্রাবী দেরী করে হয়ে বা বন্ধ হয়ে মাথায় তীব্র রক্ত সঞ্চয়, ঋতুস্রাবের পরিবর্তে মাথাযন্ত্রণা হলে প্রযোজ্য ।

জরায়ু হতে প্রচুর রক্তস্রাব হয়ে মাথায় যন্ত্রণা, গর্ভবতী মহিলাদের মাথায় রক্ত জমা হয়। ভয়ানক বুক ধড়ফড় করে সাথে ক্যারোটিভ ধমনী দুটি দপদপ করতে থাকে। হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া অতিকষ্টে হয়, বাধা পায়, মনে হয় রক্ত দ্রুত গতিতে হৃৎপিন্ডে ও মাথার দিকে যাচ্ছে।

মাথায় রক্ত জমে বাচ্চাদের মৃগীরোগ, দাঁত ওঠার সময় মস্তিষ্ক ঝিল্লী প্রদাহ যে ক্ষেত্রে বেলাডোনার রোগী বলে মনে হয় সেক্ষেত্রে এ ওষুধ উপযোগী। সন্ধ্যায় আগুনের সামনে বসে বা সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে যে সব বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাদের ক্ষেত্রে উপযোগী।

মহিলাদের রজোনিবৃত্তিকালে চোখে মুখে আগুনের মত হলকা (এমিল, বেল, ল্যাকে); ঋতুস্রাবের সাথে ঐরূপ আগুনের মত হলকা (ফেরাম, স্যাঙ্গুইনে) উঠলে উপযোগী।

তুলনা — এমিল, বেল, ফেরাম, জেল, মেলিলো, মোর সাথে তুলনীয়।

বৃদ্ধি রোদে, রোদের তাপে, গ্যাস লাইটে কাজ করে, শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে ঝাকি লাগলে, সামনে ঝুঁকলে, উপরে উঠতে, মাথায় টুপির ধোয়া লাগলে, চুল কাটার পরে রোগলক্ষণ বেড়ে যায় ।

শক্তি ৩, ৬, ৩০।

সানস্ট্রোক-(Sunstroke) সন্যাস রোগের পরিচিত নাম। মস্তিষ্কে রক্তবহা শিরায় দুর্ঘটনা ঘটে হয় সাধারণতঃ দেহের অধভাগে পক্ষাঘাত হয়ে যায়। অত্যন্ত গরমে বা অত্যন্ত ভেজা আবহাওয়ায় দেহের তাপ নিয়ন্ত্রক পরিকাঠামোয় পরিবর্তন হয়ে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়। অত্যধিক ঘাম বার হলেও এরূপ হতে পারে Nancy Roper Mcd Dict.

সম্প্রতি জার্মানীতে এই ঔষধের যে প্রভিং হয়েছে, তা থেকে পূর্বে হওয়া আমেরিকান প্রুভিং ও রোগী চিকিৎসার লক্ষনাবলীর সত্যতা প্রমানিত হয়েছে, এছাড়াও এই প্রুভিং থেকে এই ঔষধের স্নায়বিক গোলযোগের লক্ষনাবলী সমূহ প্রকাশিত হয়েছে। প্রচন্ড অবসন্নতা, কাজ করার কোন ইচ্ছা থাকে না; প্রচন্ড খিটখিটে, সামান্য বিরোধিতায় খুব সহজেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। উত্তেজনার সমাপ্তিতে রক্তাধিক্য জনিত মাথার যন্ত্রনা প্রকাশ পায়। কেবলমাত্র এই ঔষধের ৬ষ্ঠ শক্তি সমগ্র শরীরে চুলকানির প্রকাশ ঘটিয়েছে, তৎসহ পরে ব্রণ ও ফোঁড়ার উৎপত্তি হয়েছিল, এছাড়াও বিকৃত ক্ষুধাও দেখা দিয়েছিল।

রক্তাধিক্য জনিত কারণে মাথার যন্ত্রনা অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম লাগানোর ফলে মস্তিষ্কের রক্তাধিক্য, এই দুই ক্ষেত্রে এই ঔষধটি মহৌষধ হিসাবে কাজ করে। মস্তিষ্কে অথবা রজঃ সম্পর্কিত গোলযোগ অথবা রজঃরোধের ক্ষেত্রে একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ বিশেষ। শিশুরা মুক্ত বাতাসে কিছু সময় থাকার পরে রোগাক্রান্ত হয়। মস্তিষ্ক ও হৃদপিন্ডে রক্তাধিক্য। হঠাৎ করে ও তীব্রভাবে রক্ত সংবহনের গোলযোগ দেখা দেবার প্রবণতা। তীব্র আক্ষেপ; তৎসহ মস্তিষ্কের রক্তাধিক্য। সমগ্র শরীরের নারী স্পন্দনের ন্যায় অনুভূতি। কিছুতেই কোথায় সে আছে এটা বুঝতে পারেনা। সায়েটিকা তৎসহ অঙ্গের শীতলতা ও শিথিলভাব; সামুদ্রিক অসুস্থতা।

মাথা বিভ্রান্তি, তৎসহ মাথাঘোরা, সূর্যের উত্তাপ লাগাবার কুফল সমূহ; মাথা উত্তপ্ত; যেন গ্যাস ও বৈদ্যুতিক আলো নীচে থেকে কাজ করার ন্যায়। মাথা ভারী বলে মনে হয় না, কিন্তু কিছুতেই মাথার বালিশের উপর রাখতে পারে না। মাথা খোলা রাখলে উপশম বোধ। দপদপকর মাথার বেদনা। মাথা ও মুখমন্ডলের অ্যানজিও প্লাটিক নিউরালজিয়া। ভীষণ খিটখিটে। সোজা খাড়াভাবে থাকতে গেলেই মাথা ঘোরে। মস্তিষ্কের রক্তাধিক্য। মাথাটা প্রচুর বড়ো হয়েছে, এই জাতীয় অনুভূতি। যেন মাথার খুলিটা মস্তিষ্কের তুলনীয় অত্যন্ত ছোট বলে মনে হয়। সূর্যের উত্তাপ লাগার পরে মাথার বেদনা; এ ক্ষেত্রে সূর্য যত মাথার উপরে উঠতে থাকে তত বেদনার বৃদ্ধি হয় এবং সূর্য যত নীচের দিকে হেলে পড়ে তত বেদনা কমতে থাকে। মাথায় আঘাত লাগার মত অনুভূতি, এই জাতীয় অনুভূতি নারী স্পন্দনের সঙ্গে সমানভাবে হয়। মাসিক ঋতুস্রাবের পরিবর্তে মাথার বেদনা। গর্ভস্থ স্ত্রীলোকের মাথায় রক্তাধিক্য। সন্ন্যাসরোগে আক্রান্ত হবার মত অবস্থা। মেনিন জাইটিস।

চোখ – প্রতিটি বস্তুর অর্ধেকটা আলোকযুক্ত ও অর্ধেকটা ছায়া দেখায়। অক্ষরগুলি ছোট দেখায়। চোখের সামনে আগুনের ঝলকানি দেখে।

মুখগহ্বর —দপদপকর মাথার বেদনা।

কান — দপদপ কর; হৃদপিন্ডের প্রতিটি শব্দের স্পন্দন কানের ভিতর শোনা যায়; পূর্ণতার অনুভূতি।

মুখমন্ডল — রক্তিমাভা, উত্তপ্ত, কালোবর্ণ, ফ্যাকাশে; ঘামযুক্ত; নাকের গোড়ায় বেদনা, মুখমন্ডলের বেদনা। কালো বর্ণযুক্ত মুখমন্ডল।

গলা – ঘাড়ে পূর্ণতার অনুভূতি। জামার কলার খুলে না দিয়ে থাকতে পারে না। কানের নিম্নাংশে, গলা ফুলে যায় ও বন্ধ হয়ে আসে।

পাকস্থলী রক্তাল্পতার রোগীদের পাকাশয়িক শূলবেদনা তৎসহ মন্থর সংবহন। বমি বমিভাব ও বমি। পাকস্থলীর উপরের অংশের অবসন্নতা, কামড়মারা ও খালিবোধ। অস্বাভাবিক প্রকৃতির ক্ষুধা।

উদর – কোষ্ঠকাঠিণ্য, তৎসহ চুলকানিও বেদনাদায়ক অর্শ, তৎসহ মলত্যাগের আগেও পরে পেটে চিমটিকাটার মত অনুভূতি। উদরাময়; প্রচুর, কালোবর্ণের, পিন্ডের মত মল।

স্ত্রীরোগ — ঋতুস্রাব দেরি করে অথবা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় তৎসহ মাথায় রক্তাধিক্য। রজঃলোপকালে মুখমন্ডল রক্তিমাভ।

হৃদপিন্ড – ক্লান্তি উৎপাদক কাজ। পাখা ঝাপটানোর মত শব্দ। হৃদকম্প তৎসহ শ্বাসকষ্ট। কিছুতেই পাহাড়ের উপরে উঠতে পারে না। যে কোন প্রকার পরিশ্রম করলেই হৃদপিন্ডে রক্তাধিক্য এবং অবসন্নতা দেখা দেয়। সারা শরীরে আঙ্গুলের ডগা পর্যন্ত দপদপানি।

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ — সারা শরীরে চুলকানি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বেশি। বামদিকের বাইসেপসপেশীর বেদনা। সমগ্র অঙ্গে টেনে ধরার মত বেদনা। পিঠের বেদনা।

কমা-বাড়া-উপশম — মদ পান করলে।

বৃদ্ধি – রৌদ্রে, সূর্যকিরণে, খোলা আগুনের বা গ্রাসের কাছে থেকে কাজ করলে; ঝাঁকুনি, সামনের দিকে ঝুঁকলে, মাথার চুলকাটলে। পীচ ফল খেলে, উত্তেজক বস্তুতে, শুয়ে পড়লে, সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত; বামদিকে।

সম্বন্ধ – দোষ-একোনাইট।

তুলনীয় — এমিলনাইট্রেট; বেলেডোনা, ওপিয়াম;ষ্ট্র্যামোনিয়াম, ভিরেট্রাম ভিরিডি।

শক্তি — ৬ষ্ঠ থেকে ৩০ শক্তি।

সাময়িক উপশমার্থে (অ-হোমিওপ্যাথিক), হৃদশূল, হাঁপানী, হৃদপিন্ডের কাজের ব্যর্থতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বস্তুগত মাত্রায় অর্থাৎ ১-১০০ ফোঁটা মাত্রায়-অবশ্যই দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে এটি একটি অতি প্রয়োজনীয় জরুরীকালীন ঔষধ। যে সকল অবস্থায় এই ঔষধের নাম স্মরণ করা হয়, সেক্ষেত্রে নাড়ীর গতি মন্থর ও ছোট ছোট স্পন্দন, ফ্যাকাশে বর্ণ, ধমনীর আক্ষেপ, মস্তিষ্কের রক্তাল্পতা, পতনাবস্থা, হৃদস্পন্দন দুর্বল, মুচ্ছা, নাড়ীর দুইটি স্পন্দন, মাথাঘোরা—হোমিওপ্যাথিক মতানুসারে ঔষধ নিবার্চনের ঠিক বিপরীত লক্ষনসমূহ। প্রায়ই পুরাতন বৃক্ক প্রদাহ রোগে ধমনীর চাপ কমাবার উদ্দেশ্যে এই ঔষধটি ব্যবহার হয়ে থাকে।

এই ঔষধটির সর্বপ্রধান সাধারণ লক্ষণ মস্তকে ও হৃৎপিন্ডে রক্তের উচ্ছ্বাস। রোগী সচরাচর ঐ অবস্থাকে এক প্রকার উত্তাপের অনুভূতি অথবা হৃৎপিন্ড প্রদেশে বা বুকের বামপার্শ্বে জল ফুটার ন্যায় অনুভূতির সহিত শরীরের সমস্ত রক্ত হৃৎপিন্ডের দিকে ধাবিত হইতেছে, এরূপ অনুভূতি। বলিয়া বর্ণনা করে। তারপর, সময়ে সময়ে সে অভিযোগ করে, যেন মস্তকে রক্তের ঢেউ উঠিতেছে, যেন মাথার মধ্যে একপ্রকার উষ্ণ প্রদীপ্ত ভাব অনুভব করিতেছে অথবা পাকস্থলী বা ও বুক হইতে উপরদিকে মাথা পর্যন্ত প্রবল প্রদীপ্ত ভাব অনুভব করিতেছে; উহার সহিত তাহার কখন কখন সংজ্ঞাহীনতা পর্যন্ত দেখা দেয়। তারপর, মস্তকে আর একপ্রকার তরঙ্গের ন্যায়। অনুভূতিও আছে, যেন মাথার খুলি একবার উঠিতেছে, একবার পড়িতেছে, একবার বিস্তৃত। হইতেছে, আবার সঙ্কুচিত হইতেছে; সময়ে সময়ে মাথায় অত্যন্ত বেদনা থাকে অথবা মাথার। খুলিতে ক্ষতবৎ বেদনা অনুভূত হয়। এই রক্তের উচ্ছ্বাসের আর একটি আনুষঙ্গিক লক্ষণ মাথার মধ্যে দপদপ করা, উহা হৃৎপিন্ডের স্পন্দনের সহিত সমতালিক; আর যখন মাথার খুলির এই। প্রকার ক্ষততাবোধ থাকে, তখন ঐ দপদপানিভাব হাতুড়ি পেটার ন্যায় হইয়া পড়ে, প্রত্যেকটি স্পন্দনেই কষ্ট হয়, সুতরাং এই দপদপানিভাব কখন যন্ত্রণাযুক্ত আবার কখন যন্ত্রণাহীন হয়। এই দপদপানি অত্যন্ত ভীষণ, এবং যখন উহা মাথার মধ্যে বাড়িয়া উঠে, তখন উহা অঙ্গাদির প্রান্তভাগেও অনুভূত হইতে থাকে। হাতের আঙ্গুল ও পায়ের আঙ্গুলগুলির মধ্যে দপদপ করে, পৃষ্ঠের সর্বত্র দপদপ করে এবং মনে হয়, যেন সারা দেহের মধ্যেই দপদপ করে। যদি কিছুক্ষণ এইরূপ চলিতে থাকে, তাহা হইলে মাথার ক্ষতবৎ বেদনাও উপস্থিত হয়, এবং তাহার সহিত কষ্টকর দপদপানিও চলিতে থাকে, প্রত্যেক দপদপানিটিই যন্ত্রণাকর হয়। এই অবস্থায় প্রতি, পদক্ষেপের ঝাকানিতে, প্রতিটি সঞ্চালনে মনে হয়, যেন মাথাটি চূর্ণ হইয়া যাইবে। দপদপানি। সঞ্চালনে আরও কষ্টকর হইয়া উঠে। এই অবস্থার সহিত বমন দেখা দেয় এবং তাহাতে উপশম হয়। খোলা বাতাসে মাথার উপশম হয়, উষ্ণতায় খারাপ হয়, সচরাচর ঠান্ডা বাহ্য প্রয়োগে। উপশমিত হয়। শুইয়া থাকিলে বা মাথা নীচু করিয়া শুইলে উহা বৰ্দ্ধিত হয়। অঙ্গাদির প্রান্তভাগে আমরা খুব শীতলতা দেখিতে পাই। অঙ্গাদির প্রান্তভাগ শীতল, বিবর্ণ এবং ঘর্মাক্ত, মাথা উত্তপ্ত, মুখ আরক্তিম ও বেগুনি বা উজ্জ্বল লালবর্ণ থাকে। চক্ষুতারা দুইটি বিস্তৃতএবং চক্ষুদ্বয় লাল হয়। তারপর, এই ভাব কিছুক্ষণ চলিতে থাকিলে, জিহ্বা শুষ্ক, লাল এবং তারপর বাদামিবর্ণ হয়। অত্যন্ত তৃষ্ণা থাকে না, কিন্তু মুখ অত্যন্ত শুষ্ক হয়। চক্ষুপত্র দুইটি শুষ্ক হইয়া যায় এবং চক্ষুগোলকের সহিত লাগিয়া যায়। সময়ে সময়ে গাত্রচর্ম শুষ্ক এবং উত্তপ্ত হয় এবং মুখ লাল হইয়া চকচক করে। মনের নানারূপ গোলমাল, এমনকি সংজ্ঞাহীনতা বর্তমান থাকে।

আদর্শ সর্দিগর্মির রোগীতে যেরূপ অবস্থা দেখা যায়, আমি কি তাহা যথেষ্টভাবে বর্ণনা করি নাই? ইহাও লক্ষণীয় যে, গ্লোনয়িনের লক্ষণগুলি গ্রীষ্মকালের উত্তাপে খারাপ হয় এবং শীতকালে উপশমিত হয়। মৃদু শিরঃপীড়া এবং একঘেয়ে শিরঃপীড়া উষ্ণ আবহাওয়ায় বর্ধিত হয় এবং ঠান্ডায় উপশমিত হয়। তাহারা রৌদ্রে খারাপ হয় এবং ছায়ায় ভাল থাকে। গ্লোনয়িনের রোগীরা রৌদ্র হইতে মাথা বাঁচাইতে সকল প্রকার কৌশল অবলম্বন করে। যখন তাহার এইরূপ রোগ। অনেক বত্সর যাবৎ চলিতে থাকে, এবং উহা পুরাতন আকার ধারণ করে, তখন রোগী আর ছাড়া না লইয়া কিছুতেই সূর্যের উত্তাপে বাহির হইতে পারে না।

যে-প্রকার রক্তসঞ্চয় অবস্থা হঠাৎ উপস্থিত হয়, বিশেষতঃ উত্তাপ হইতে উপস্থিত হয়, টি গ্যাসের আলো হইতে উপস্থিত হয়, কোন প্রকার উজ্জ্বল আলোক হইতে উপস্থিত হয়, তাহা গ্লোনয়িন সদৃশ। হিসাব রক্ষকদিগের, বিশেষতঃ যাহাদের ডেস্কের উপর বা মাথার উপর উত্তপ্ত গ্যাসের আলোক থাকে, তাহারা যেরূপ শিরঃপীড়ার অধীন হয়, তদ্রুপ শিরঃপীড়া মাথার অত্যন্ত নিকটে উত্তাপযুক্ত আলোক এইসকল ব্যক্তিকে শিরঃপীড়াগ্রস্ত করে। এই শিরঃপীড়া শীতল বাতাসে গেলে উপশমিত হয়। সে যখন খাতাপত্র লইয়া কাজ করে, তখন সারাদিন তাহারা মাথা ধরিয়া থাকে এবং তারপর যখন রাত্রে বাড়ী যায় এবং শুইয়া পড়ে, তখন আবার শিরঃপীড়া ফিরিয়া আসে এবং তাহাকে বিছানায় মাথায় উঁচু বালিশ দিয়া পড়িয়া থাকিতে হয়। সে মাথা উঁচু করিয়া রাখিতে এবং মাথায় ঠান্ডা বাহ্য প্রয়োগ করিতে চায়, নিদ্রা যাওয়ায় শিরঃপীড়ার উপশম হয় না, সাধারণত মধ্যাহ্নকালীন নিদ্রায় উপশম হয় না। শুইয়া পড়ায় এবং স্বল্পনিদ্রায় সময়ে – সময়ে শিরঃপীড়া বর্ধিত হয়, কিন্তু দীর্ঘকালস্থায়ী সুনিদ্রায়, রাত্রের সাধারণতঃ সে পরিতৃপ্ত বোধ করে। তাহার পায়ের পাতা এবং হাত দুইটি গরম হইয়া উঠে, জ্বরভাব দেখা দেয় এবং তাহার সর্বাঙ্গের দপদপানির নিবৃত্তি হয় ও সে প্রাতঃকালে স্বচ্ছন্দ হইয়া জাগিয়া উঠে, কিন্তু যদি সে পুনরায় রৌদ্রে বাহির হয় বা গ্যাসের আলোকে যায়, তাহা হইলে আবার শিরঃপীড়াযুক্ত হইয়া বাড়ী ফেরে। যে-সময় হইতে বৈদ্যুতিক আলোক ব্যবহৃত হইতেছে, সে সময় হইতে আর আলোকে তত বেশী উত্তাপ নাই, কিন্তু গ্যাসের আলো হইতে প্রচুর উত্তাপ নির্গত হয়।

শিশু মস্তিষ্ক মেরুদন্ড ঝিল্লী-প্রদাহে শয্যাগত হয়, তাহার ঘাড় পশ্চাদ্দিকে আকৃষ্ট হয়, মুখমন্ডল অত্যন্ত লাল এবং চকচকে হইয়া উঠে, চক্ষু দুইটি রক্তসঞ্চয়যুক্ত বা কাচপ্রভ হয়, মস্তক ও শরীরের ঊর্ধ্বাংশ গরম থাকে এবং দেহের নিম্নাংশ এবং হাত-পা শীতল এবং শীতল ঘিৰ্ম্মে আবৃত থাকে। ইহা মস্তিষ্কে এবং মেরুমজ্জায় প্রবল রক্তসঞ্চয় অবস্থা। আক্ষেপ উপস্থিত হয়, সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে আক্ষেপ, ঘাড় এবং সমস্ত দেহ পশ্চাদ্দিকে আকৃষ্ট হয়, পশ্চাদ্বক্রতাবিশিষ্ট আক্ষেপ। মাথায় ঠান্ডা উপকারী বোধ হয়, হস্তপদাদিতে উত্তাপ উপকারী বোধ হয়। গরম ঘরে আক্ষেপ বাড়িয়া যায়। ঠান্ডা ঘরে নিম্নাঙ্গগুলিতে কাপড়চোপড় দিয়া ঢাকা দিয়া রাখিলে এবং জানালাগুলি খোলা রাখিলে আক্ষেপের উপশম হয় এবং রোগী আরও সহজে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস লইতে পারে। এইরূপ মস্তকের রক্তসঞ্চয়ের সহিত শ্বাসকষ্ট এবং দূর হইতে শুনিতে পাওয়া যায়, এরূপ হৃৎস্পন্দন থাকে।

ঝাঁকি লাগিলে, মাথা নাড়িলে, হেঁট হইলে, মাথা পশ্চাদ্দিকে বাঁকাইলে, শুইয়া পড়ার পর এবং সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিলে মস্তক-লক্ষণ বাড়ে। ভিজা আবহাওয়ায়, রৌদ্রে এবং গ্যাসের আলোকে কাজ করিলে, অত্যুত্তপ্ত হইয়া প্রচুর ঘৰ্ম্মযুক্ত হইলে টুপির স্পর্শে উহার বৃদ্ধি হয়। বিদ্যালয়ের বালক-বালিকাদের টুপির ভারে বৃদ্ধি একটি সাধারণ ব্যাপার। শিশুরা সারাদিন উত্তপ্ত, গাদাগাদিযুক্ত ঘরে কাজ করে, এবং মুক্ত বায়ুতে ভাল বোধ করে, কিন্তু নাইট্রিক এসিড এবং ক্যাল্কেরিয়া ফসে’র ন্যায় টুপির ভার একটি অস্বস্তি বলিয়া বোধ হয়।

গ্লোনয়িন রোগী মধ্যে ও উত্তেজক পানীয়ে এবং মানসিক পরিশ্রমে খারাপ বোধ করে। যখন শিরঃপীড়া চলিতে থাকে, সে চিন্তা করিতে পারে না এবং লিখিতে পারে না। লেখার আর একটি অতিরিক্ত প্রতিবন্ধক এই যে, হাত কাঁপিতে থাকে এবং সেইজন্য লিখিতে পারে না। হস্তাঙ্গুলিগুলির কম্পন এবং স্পন্দন, সেজন্য সে হস্তদ্বারা বা অঙ্গুলিগুলি দ্বারা তাহার কাৰ্য্য করিতে বা সূক্ষ্ম কাৰ্য্য করিতে অক্ষম হয়।

আমি যেরূপ বর্ণনা করিয়াছি ঠিক সেইরূপ আকৃতির সূতিকাক্ষেপ আমরা পাইয়া থাকি। রক্তসঞ্চয়জনিত শীতে বা যে-কোন প্রকার মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চয়ে আমরা ঐ একইরূপ ভীষণতা দেখিতে পারি ।

একপ্রকার মৃদুতর রোগেও, এই ঔষধের প্রয়োজন হইতে পারে, উহা পুরাতন ধরণের রোগের সদৃশ। যেরূপ ক্ষেত্রে এই মৃদুতর প্রকৃতির রোগ থাকে তাহাকে মস্তিষ্কের সাধারণ রক্তাধিক্য বলা যাইতে পারে। রোগী চলিতে গেলেই মস্তকে রক্তের প্রধান অনুভব করে। ইহা আবেশে আবেশে উপস্থিত হয়, যে-মুহূর্তে সে আদৌ আশা করে না, সেরূপ সময়ে উপস্থিত হয়; রাস্তা দিয়া চলিবার সময় সে মস্তিষ্কে উত্তাপের ঝলকের ন্যায় একপ্রকার রক্তোচ্ছ্বাস অনুভব করে, তাহার মুখমন্ডলে উত্তাপের ঝলক অনুভব করে, তাহার হাত দুইটি কাঁপে আর হাত ও পায়ের পাতা শীতল হইয়া যায়, সে ঘর্মাক্ত হইয়া পড়ে; সে চারিদিকে চাহিতে থাকে, বুঝিতে পারে না যে, কোন পথে বাড়ী যাইবে, বুঝিতে পারে না যে, সে কোথায় আছে। সে বন্ধুদের মুখের দিকে চাহিয়া থাকে এবং তাহারা অপরিচিত বলিয়া বোধ হয়, সে বাড়ীর নিকটে যাইয়াও পথ হারাইয়া ফেলে। মনের এই বিশৃঙ্খল অবস্থা শীঘ্রই চলিয়া যায় এবং সে অপেক্ষাকৃত ভাল বোধ করিতে থাকে, কিন্তু এইরূপ আবেশ ঘনঘন আসিতে থাকে এবং মস্তিষ্কের কোমলতার সৃষ্টি করে। মস্তিষ্কে এইরূপ রক্তোচ্ছ্বাসের সহিত শিরোঘূর্ণন সংযুক্ত থাকে, সে মাথা ঘুরিয়া পড়ে এবং টলমল করে এবং কোন-না-কোন জিনিষ ধরিয়া ফেলিতে বাধ্য হয়; আর প্রধানতঃ সে গরম দিনে বা সূর্যের উত্তাপ ও আলোক হইতে এইরূপ কষ্ট পায়।

সন্ন্যাস রোগ সম্ভাবনায় এবং সন্ন্যাস রোগ আসিয়া পড়িলে, যদি রক্তের এই ঊর্ধ্বচাপ প্রবল থাকিয়া যায়, তাহা হইলে এই ঔষধটির কথা চিন্তা করিবে। প্রথম অবস্থাতেই জীবনহানির মত জমাট রক্তের ডেলা থাকিতে পারে না, উহা জীবননাশের সীমার বহির্ভূত থাকে, কিন্তু যদি রক্তসঞ্চয় চলিতে থাকে, তাহা হইলে জমাট রক্তের ডেলাও বাড়িতে থাকিবে। লক্ষণ মিলিলে ‘ওপিয়াম’ ও গ্লোনয়িনের ন্যায় ঔষধগুলি এই রক্তের চাপ প্রশমিত করিবে। উহারা রক্তসঞ্চয়ের সমতা আনিবে এবং রোগীও হয়ত মারা যাইবে না। কিছুদিন ধরিয়া এক বাহু বা পায়ের পক্ষাঘাতের ন্যায় অবস্থা চলিতে পারে এবং অনেক সপ্তাহ বা অনেক মাসের পর সে সঞ্চালনশক্তি ফিরিয়া পাইতে পারে এবং আরোগ্যলাভ করিতে পারে, কিন্তু যদি রক্তের এই ঊধ্বচাপ কমাইবার মত উপযুক্ত ঔষধ প্রয়োগ করা না হয়, তাহা হইলে ক্রমাগত রক্তসঞ্চয়ের ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু হয়। এই ঔষধের নাকের শব্দবিশিষ্ট প্রশ্বাস, অঘোর নিদ্রা, ইতিহাস এবং সন্ন্যাস রোগের সাধারণ চেহারা পাওয়া যায়, কিন্তু পরিচালক লক্ষণ হইল— অনেক সন্ন্যাস রোগীর যেরূপ দেখা যায়, পা প্রবল উত্তাপ, চকচকে গাত্রচর্ম এবং হস্ত-পদাদির শীতলতা। ‘ওপিয়াম’ই সর্বাপেক্ষা বেশী সচরাচর প্রযোজ্য হয়, কিন্তু উহা কখন অধিক মাত্রায় প্রযোজ্য নহে। অতুচ্চ শক্তির ঔষধই শ্রেষ্ঠ এবং একটিমাত্র মাত্রাই যথেষ্ট হয়।

একটি রোগী, বিবরণে এইরূপ লিখিত আছে- “উন্মাদের ন্যায় জানালা দিয়া লাফাইয়া পড়িবার চেষ্টা।” শিরঃপীড়া এত প্রবল ছিল যে, রোগী প্রচন্ড হইয়া পড়িয়াছিল এবং জানালা দিয়া লাফাইয়া পড়িবার চেষ্টা করিয়াছিল। তোমরা নিশ্চিত ধরিয়া লইতে পার যে, এই শিরঃপীড়ায় তাহার সকল রক্ত মাথায় প্রধাবিত হইয়াছিল। মাথার খুলির প্রত্যেকটি ক্ষুদ্রতম অংশে ক্রমাগত হাতুড়িমারার ন্যায় যন্ত্রণা, যে-কোন ব্যক্তিকে উন্মাদ করার পক্ষে যথেষ্ট। সে শুইয়া থাকিতে পারে না, হাঁটিতে পারে না কারণ প্রতি পদক্ষেপে তাহার ঝাঁকানি বাড়িয়া উঠে, সুতরাং তোমরা এখন বুঝিতে পারিতেছ যে, কেন “উন্মাদের মত” কথাটি ব্যবহৃত হইয়াছে। রোগী যন্ত্রণায় উন্মাদের মত হইয়া পড়ে। আর একটি বাক্যাংশেরও ব্যবহার আছে, উহা “পা ফেলিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতে অপ্রবৃত্তি।” রোগী ঘরটিকে সম্পূর্ণভাবে নিস্তব্ধ চায়। গ্লোনয়িন-জ্ঞাপক রোগী যদি  শয্যায় বসিয়া থাকে, তোমরা দেখিবে যে, সে উভয় হাত দিয়া মাথা টিপিয়া ধরিতেছে এবং উহাতে তাহার হাত অবসন্ন হইয়া পড়িতেছে। সে মাথায় সব দিক হইতে চাপ পাইতে চায়। সে মাতা বাঁধিয়া রাখিতে চায়, মাথায় আঁট টুটি পরিয়া থাকিতে চায়। তাহার শিরঃপীড়া পশ্চাদ্দিকে হেলিলে অথবা সম্মুখদিকে অবনত হইলে বাড়ে। সময়ে সময়ে শিরঃপীড়া এত প্রবল হয় যে, চিৎ হইয়া মাথায় বালিশ দিয়া শয়ন করাও সহ্য হয় না। মাথায় অত্যন্ত ভারি বোধ হয়। এইরূপ রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া সম্বন্ধে লিখিত বিবরণগুলি পড়িলে, তোমরা দেখিতে পাইবে, প্রত্যেক রোগীই তাহার শিরঃপীড়ার বর্ণনা বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ করিয়াছে, কিন্তু তবুও তাহাদের সবারই বক্তব্য এক—অর্থাৎ মাথায় তীব্র রক্তের উচ্ছ্বাস।

“গাড়ী হইতে পড়িয়া গিয়া ভীষণ ধাক্কা লাগার কয়েক মাস পরে পৃষ্ঠের ঊর্ধ্বাংশের এবং ঘাড়ের এক প্রকার স্পর্শকাতরতা দেখা দিয়াছিল।” ঐ রোগীর আরোগ্য প্রসঙ্গে গ্লোনয়িনের দুইটি চরিত্রগত লক্ষণ ছিল যথা “মদ্যপানে বৃদ্ধি এবং শয়ন করিলে বৃদ্ধি।” অন্যান্য লক্ষণগুলি হয়ত অন্য ঔষধ নির্দেশ করিতে পারি, কিন্তু এই দুইটি লক্ষণও বর্তমান ছিল। যদি তুমি প্রথমে মেটিরিয়া মেডিকা সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করিয়া থাক, তাহা হইলে রোগী বিবরণী পাঠ করিবার সময় কোন কোন লক্ষণগুলি সত্য বলিয়া প্রমাণিত হইল, তাহা লক্ষ্য করিয়া আনন্দ পাইবে; আর যদি তোমার মেটিরিয়া মেডিকার জ্ঞান না থাকে, তাহা হইলে রোগী বিবরণীটিও বিশৃঙ্খল বলিয়া মনে হইবে। এক্ষণে, ঐ রোগী বিবরণীটির দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া আমরা দেখিতে পাইতেছি যে, পূর্বোক্ত লক্ষণ দুইটি সত্য বলিয়া প্রমাণিত এবং অন্যান্য লক্ষণগুলি মোটামুটি সদৃশ। প্রায়ই যন্ত্রণাটি মাথার পশ্চাদ্দিকে আরম্ভ এবং কপাল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, কিন্তু সারা মাথার মধ্যেই দপদপ করে। কিন্তু আমাদিগকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করিতে হইবে, “সঞ্চালনে এবং সামান্যমাত্র শব্দে বৃদ্ধি।” এইরূপ রোগী সম্পূর্ণ স্থিরভাবে এবং নীরবে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়া থাকিবে। গ্লোনয়িনের রোগী যে একটি পেশী নাড়াইয়া কতক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া থাকিতে পারে, তাহা দেখিলে তোমরা বিস্মিত হইবে, সে এরূপ করে, কারণ সঞ্চালন তাহার পক্ষে অত্যন্ত কষ্টদায়ক। তারপর “মাথা নীচু করিয়া শুইলে এবং নিদ্রার পর বৃদ্ধি।” এখানে নিদ্রার অর্থ যে কি তাহা জানিয়া রাখা প্রয়োজন। আমি পূৰ্বেই বলিয়াছি যে রোগী প্রায়ই স্বপ্ননিদ্রার পর খারাপ হয়, কিন্তু দীর্ঘকালস্থায়ী নিদ্রার পর সাধারণতঃ শান্তি পায়। যদি রক্তসঞ্চয়জনিত নিদ্রা বা অঘোর নিদ্রা হয়, তাহা হইলে সে খুব বেশীক্ষণ ঘুমাইতে পারিলে তাহার শিরঃপীড়া ছাড়িয়া যায়, সুতরাং পূর্বোক্ত “নিদ্রার পর বৃদ্ধি” লক্ষণ হইতে ইহা একটি পৃথক ব্যাপার হইল। “ঠান্ডায় এবং বাহ্যিক চাপে উপশম।” “মস্তকে জ্বালাকর উত্তাপ এবং পৃষ্ঠের উপর অংশের অবস্থাও ঐরূপ।” মনে হয়, যেন সমুদয় মস্তক-শীর্ষ একখানি উত্তপ্ত লৌহ দ্বারা আবৃত রহিয়াছে, যেন সে একটি জ্বলন্ত চুল্লীর নিকটে বসিয়া আছে—উত্তপ্ত ভাব প্রধানতঃ ঘাড়ের পশ্চাদ্ভাগে এবং স্কন্ধদ্বয়ের মধ্যে। জ্বালাকর উত্তাপ মস্তকশীর্ষে দেখা দিয়া নিম্নদিকে স্কন্ধদ্বয়ের মধ্যে বিস্তৃত হয়,—কোন বন্ধনী দিয়া বাধিয়া রাখার ন্যায় উত্তাপ। “মুখমন্ডল নীলাভ, তৎসহ ভারি, নির্বোধের ন্যায়।” মুখমন্ডল উজ্জ্বল লাল থাকে, কিন্তু যদি অবস্থা গুরুতর হয়, মুখমন্ডল কৃষ্ণাভ আকৃতি ধারণ করে এবং এই অবস্থা যত বেশীক্ষণ থাকিয়া যায়, মুখমন্ডল তত বেশী কৃষ্ণাভ হয়; এই কথা সন্ন্যাস রোগ এবং সর্দিগৰ্ম্মির ব্যাপারে যথার্থ। যখন সর্দিগৰ্ম্মি প্রথমে উপস্থিত হয়, তখন মুখমন্ডল উজ্জ্বল, প্রখর উত্তাপযুক্ত এবং চকচকে থাকে, কিন্তু উত্তাপ যত বাড়িতে থাকে, মুখমন্ডল কৃষ্ণাভ, এমনকি বেগুনি হইয়া যায়। মস্তিষ্কের এইরূপ রক্তসঞ্চয়ে সবসময়েই মুখভাব মূঢ়ের মত, ভার ভার হয় এবং আচ্ছন্ন নিদ্রার মধ্যেও উহা ঐরূপ থাকে। “পুনঃপুনঃ শ্বাসগ্রহণ।” মাথার এইরূপ রক্তসঞ্চয়ের সহিত সাধারণতঃ বমন, হৃৎস্পন্দন, পাকস্থলীতে যন্ত্রণা, অত্যন্ত শ্বাসকষ্ট এবং পরিশেষে সংজ্ঞাহীনতা দেখা দেয়। আর একটি রোগী বিবরণে আমরা পড়িয়াছি “প্রত্যেক স্পন্দনে মনে হয়, যেন মাথাটি ফাটিয়া যাইবে।” এইবার মনে কর, মাথার হাড়গুলি পূৰ্ব্ব হইতে স্পর্শকাতর এবং বেদনান্বিত আছে এবং মাথা যতদূর সম্ভব রক্তে পূর্ণ হইয়া পড়িয়াছে, আর এইবার তুমি রক্তের স্তরের উপর হাতুড়ি দিয়া আঘাত করিতে আরম্ভ করিলে, তুমি নিশ্চয়ই বুঝিতেছ যে, যন্ত্রণা অত্যন্ত তীব্র হইবে এবং শীঘ্রই তাহাকে বিমূঢ় করিয়া ফেলিবে। “কোটরাগত চক্ষু, চক্ষুর নিম্নে নীলাভ দাগ।” “চক্ষু লাল, তৎসহ আলোকাতঙ্ক, ভ্রান্ত দর্শন। চক্ষুর সম্মুখে কাল কাল বিন্দু দর্শন, দৃষ্টিলোপ।” “অত্যন্ত জ্বর সত্ত্বেও মুখের বিবর্ণতা।” এইরূপ তীব্র প্রকৃতির মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়ে, নাড়ীস্পন্দনের হ্রাসবৃদ্ধি হয়, এমনকি উহা সূক্ষ্ম তারের মত এবং কঠিন হয়, এমনকি উহা সূক্ষ্ম তারের মত এবং কঠিন হয়, আবার সময়ে সময়ে অনিয়মিত ও ধীরগতি হয়।

ঘাড়ের চারিদিকে ফুলা ভাব এই প্রকার রক্তসঞ্চয়ের আর একটি সাধারণ আনুষাঙ্গিক লক্ষণ। ঘাড়ে পূর্ণতা অনুভব হয়। জামার কলারে শ্বাসরোধবৎ হয়, এইজন্য অবরোধভাব কমাইবার জন্য কলার খুলিয়া দিতে হয়। এমনকি পুরাতন অবস্থাতেও যখন মস্তকে রক্তোচ্ছ্বাসের জন্য সে রাস্তার কোণে দাড়াইয়া বাড়ী যাইবার পথ খুঁজিয়া পায় না, তখনও ‘ল্যাকেসিসে’র ন্যায় জামার কলারে তাহার কণ্ঠে অস্বচ্ছন্দতা সৃষ্টি করে এবং শ্বাসরোধভাব দেখা দেয়। তাহার গলায় অবরোধের সহিত, কানের নীচেও ফুলিয়া উঠে। গলা ও ঘাড়ের চারিদিকে, থুতনির নিম্নে ফুলাভাব এবং গ্রন্থিগুলিও স্ফীত হয়।

পাঠ্যপুস্তকে এই ঔষধের যে-সকল সাধারণ লক্ষণ বর্ণিত হইয়াছে, তাহার মধ্যে পরবর্তী লক্ষণটি স্ত্রীগণের ঋতুস্রাবের সহিত সংশ্লিষ্ট। ঋতুস্রাব উপস্থিত হয় না, উহা বিলম্বিত হয়, তৎসহ মাথায় ভীষণ রক্তসঞ্চয় হয়, তীব্র শিরঃপীড়া দেখা দেয় এবং ইতিপূৰ্ব্বে বর্ণিত লক্ষণগুলি থাকে। ঋতুস্রাবকালেও এইরূপ রক্তসঞ্চয় উপস্থিত হইতে পারে। আবার যদি জরায়ুর রক্তস্রাব হঠাৎ থামিয়া যায় অথবা কোন স্থান হইতে প্রচুর রক্তস্রাব হঠাৎ থামিয়া যায়, তাহা হইলে রোগী ভীষণভাবে শয্যাশায়ী হইয়া পড়ে এবং রক্ত বেগে মাথার দিকে উঠে।

জীবনে এমন অনেক অবস্থা ও রোগ আসে যে, তাহাতে মাথায় রক্তোচ্ছ্বাস হইতে থাকে, তখন এই ঔষধটিরই আবশ্যক হয়। যেসকল লোক কোন প্রকার পরিশ্রমের চেষ্টায় শ্বাসকৃচ্ছ্বযুক্ত হৃৎস্পন্দনের অধীন হয়, তাহারা পাহাড়ের উপর উঠিতে পারে না এবং হৃৎস্পন্দন ও শ্বাসকৃচ্ছ্রতা উপস্থিত না হইয়া বাঁধান রাস্তায় হাঁটিতে পারে না অথবা সামান্য পরিশ্রম বা উত্তেজনায় তাহাদের হৃৎপিন্ড ও মস্তকে রক্তোচ্ছ্বাস এবং মূৰ্ছাভাব দেখা যায়; যে-সকল স্ত্রীলোকেরা সাধারণতঃ মূৰ্ছাগ্রস্তা বলিয়া বোধ হয় না, তাঁহাদের মূৰ্ছার আবেশ। অত্যন্ত দুর্বলতা, হৃৎস্পন্দন, অঙ্গাদির কম্পন, এক বা দুই হাত পক্ষাঘাতগ্রস্তের ন্যায় ঝাঁকাইতে থাকে। “কষ্টকৃত হৃৎক্রিয়া” এই ঔষধের একটি প্রবল লক্ষণ। সকল অঙ্গ দপদপ করে। হৃৎপিন্ডপ্রদেশে পাখীর পক্ষসঞ্চালনের শব্দের ন্যায় শব্দ অনুভূত হয়। নাড়ী দ্রুত, অনিয়মিত, ধীর বা দ্রুত এবং তারের ন্যায়। কতকগুলি লোক আছে, যাহাদিগকে দৃশ্যতঃ রক্তপ্রধান বলিয়া বোধ হয়, তাহারা খুব সামান্য পরিশ্রমে অভিভূত হইয়া পড়ে এবং তাহাদের সর্বাঙ্গে স্পন্দন অনুভূত হয়, গরম ঘরে গেলে স্পন্দন অনুভূত হয়। যদি ঠান্ডা আবহাওয়া থাকে, তাহা হইলে জানালা খুলিয়া দিলে তাহাদের উপশম হয়, পাখার বাতাসে উপশম হয়, ঠান্ডা হাওয়ায় উপশম হয়, মাথায় ঠান্ডা প্রয়োগ করিলে উপশম হয়। রোগী দেহে প্রাপ্ত লক্ষণ অনুসারে সদৃশ বলিয়া, এই ঔষধটি ঐরূপ ক্ষেত্রেও ব্যবহার্য্য। “শিশুরা খোলা আগুনের নিকট বসিয়া থাকার বা ঐস্থানে ঘুমাইয়া পড়ার পর ঐ রাত্রেই পীড়িত হয়।” “চুল ছাঁটার পর পীড়িত হয়।” কিন্তু চুল ছাঁটার পর সর্দি হইলে সাধারণতঃ ‘বেলের কথাই ভাবা হইয়া থাকে। “সূর্য কিরণে থাকার পরবর্তী কুফল।” “সর্দিগৰ্ম্মির কুফল।

অপর নাম – নাইট্রো-গ্লিসারিন (Nitro-Glycerine -C3H5N3O3)।

এই ঔষধ গ্লিসারিন এবং নাইট্রিক ও সালফিউরিক অ্যাসিড সহযোগে প্রস্তুত হয়। প্রুসিক অ্যাসিডের মত মানুষের দেহেও অবিলম্বে এর ক্রিয়া প্রকাশ পায়। একভাগ গ্লোনয়েন ও ন’ভাগ অ্যালকোহল মিশ্রিত করলে এর প্রথম দশমিক ক্রমের অরিষ্ট তৈরী হয়।

গ্লোনয়েনের মূলকথা

১। সহসা স্থানিক রক্ত সঞ্চয়, বিশেষতঃ মাথায় ও বুকে রক্ত সঞ্চয়। নিরতিশয় দপদপ এবং যেন ফেটে যাবে এরূপ বিস্ততি অনুভব সহকারে ঘাড় থেকে উপরের দিকে সম্প্রসারিত বিদীর্ণকর শিরঃপীড়া; রোগী সামান্য আঁকনিও সহ্য করতে পারে না।

২। মাথায় কোন বস্তু বিশেষতঃ টুপি পরতে পারে না, অথবা কোন কিছুর

চাপও সহ্য করতে পারে না।

৩। অতিরিক্ত রৌদ্র ভোগ অথবা সর্দি গৰ্মি (sunstroke)।

গ্লোনয়েনএকটি আলোচনা

১। গ্লোনয়েন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় মস্তিষ্কের একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। মাথায় তীব্র বেদনা, অতিশয় দপদপানি ও ঘাড়ের রক্তবহা নাড়ী গুলির পূর্ণতা ও আকুঞ্চন (constriction) বোধ এর প্রধান লক্ষণ। এই রক্ত সঞ্চয়ের আরও অনেকগুলি লক্ষণ আছে, স্থানাভাব বশতঃ সেগুলি এখানে উল্লেখ করা গেল। আমি যখন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রথম আরম্ভ করি তখন অবিশ্বাসী ও বিদ্রুপকারীদের বিশ্বাসের নিমিত্ত গ্লোনয়েন প্রথম শক্তির একশিশি ঔষধ আমি আমার ব্যাগে রেখে দিতাম এবং যখন কেউ এই নূতন ডাক্তার ও তার মিষ্টি ঔষধ সম্বন্ধে ব্যঙ্গ করত তখন তার জিভের উপর এক ফোটা এই ঔষধ ফেলে দিয়ে পাঁচ বা দশ মিনিটের মধ্যে এই ক্ষুদ্র মাত্রার কি শক্তি আছে তা বুঝিয়ে দিতাম। ঐ সময়ের মধ্যেই এর চরিত্রগত দপদপক মাথা বেদনা শুরু হয়ে যেত।

*একদিন একজন মহিলা তার উপর এর যে কোন ক্রিয়া হয়েছে তা অস্বীকার করে যেই ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছিলেন, অমনি তিনি মূর্চ্ছিত হয়ে যান, তবে আমি তাকে ধরে ফেলায় তিনি পড়ে যান নি (আবু না ধরলে তিনি নিশ্চয়ই পড়ে যেতেন)। এই পরীক্ষার পর থেকে কেউই আর হোমিওপ্যাথি ঔষধের শক্তি সম্বন্ধে আর পরীক্ষা করতে চাননি।

*এই দপদপকর মাথা বেদনা ঘাড় থেকে উঠে গ্লোনয়েনের একটি বিশেষ চরিত্রগত লক্ষণ। এছাড়া এই দপদপ কেবল অনুভূতি নহে, ইহা ক্যারোটিড ধমনীতে প্রত্যক্ষ করা যায়। রক্ত বহা নালীগুলি যেন ফেটে যাবে এরূপ রক্তপূর্ণ দেখায় এবং উহাদের প্রাচীর সুস্থ না হলে ফেটে গিয়ে সন্ন্যাস রোগ উৎপন্ন হয়। গ্লোনয়েনের ন্যায় কোন ঔষধেই মাথায় এরূপ আকস্মিক ও প্রবল রক্তসঞ্চয় হয় না এবং লক্ষণ দ্বারা নির্দিষ্ট হলে কোন ঔষধেই এত তাড়াতাড়ি সেরে যায় না।

মস্তকে গ্লোনয়েনের ক্রিয়ার সঙ্গে বেলেডোনা ও মেলিলোটা ঘনিষ্ট সম্পর্কযুক্ত।

পার্থক্য – ১

বেলেডোনা ও গ্লোনয়েন এই দুটি ঔষধেই পূর্ণতা ও দপদপ লক্ষণ আছে। কিন্তু গ্লোনয়েনের লক্ষণ আক্রমণকালে অধিকতর তীব্র ও আকস্মিক ভাবে প্রকাশিত হয়, এবং প্রশমিত হয়ে অতি শীঘ্র ছেড়ে যায়। আবার মস্তিষ্কের প্রাদাকি রোগের প্রথম বা রক্তসঞ্চয় অবস্থাতেই গ্লোনয়েন অধিক উপযোগী কিন্তু বেলেডোনা দাহিক অবস্থা সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে উপযোগী।

খ) বেলেডোনায় মাথা পিছনদিকে হেলালে উপশম হয়; কিন্তু গ্লোনয়েনে ওতে কষ্ট বাড়ে।

গ) বেলেডোনায় মাথা অনাবৃত রাখলে কষ্ট বাড়ে ও চুল কাটলে অসুখ করে; গ্লোনয়েনে মাথা অনাবৃত করে রাখতে চায়, মাথায় টুপি রাখতে পারে না, চুল কেটে ফেলতে ইচ্ছা করে।

ঘ) বেলেডোনা উপচয় জন্মে শয়নে, এমনকি স্থির হয়ে থাকলেও কষ্ট বাড়ে, গ্লোনয়েনে যদিও কখন কখন শোয়ার পরে উপচয় জন্মে তথাপি কখন কখন স্থির হয়ে শুয়ে থাকলেও উপশমও হয়।

**গ্লোনয়েনের একটি বিশেষ লক্ষণ হল – রোগী মাথাটি খুব সাবধানে রাখে, কারণ সামান্য ঝাঁকি লাগলেও বেদনা অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। আরও একটি স্বতন্ত্র ধরণের লক্ষণ হল এই রোগী কেবল যে দপদপানি অনুভব করে তা নয়, মনে করে যেমন মাথা নাড়ীর স্পন্দনের সঙ্গে সমতালে নড়ছে।

ঙ) বেলেডোনা অপেক্ষা গ্লোনয়েনে হৃৎপিণ্ডের গোলযোগ বেশী থাকে। যদিও হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়ার, উপদ্রুততা উভয় ঔষধেই যথেষ্ট থাকে তথাপি গ্লোনয়েনে মনে হয়, রক্ত যেন হৃৎপিণ্ড বা বুকের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

পার্থক্য – ২

বেদনা, পূর্ণতানুভব সংযুক্ত মাথায় অতিশয় রক্তসঞ্চয় মেলিলোটাসেরও লক্ষণ। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে পরীক্ষিত না হওয়ায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমরা এর প্রকৃতস্থান নির্দেশ করতে পারি না। তবে এর একটি সুস্পষ্ট লক্ষণ আছে আর সেজন্যেই একে আমাদের মনে করা উচিত, যথা –

“মুখ মণ্ডলের প্রদীপ্ত আরক্ততা”।

আমার জানা কোন ঔষধেই ইহা এত প্রবলভাবে নেই।

গ্লোনয়েন ও বেলেডোনা উভয়েরই মুখমণ্ডল অত্যন্ত লাল; পক্ষান্তরে বিবর্ণ মুখমণ্ডলের সঙ্গে অন্যান্য রক্তসঞ্চয় লক্ষণ থাকলেও এরা নির্দেশিত হতে পারে কিন্তু মেলিলোটাস হয় না। তাছাড়া নাক দিয়ে যথেষ্ট রক্ত পড়লেও মেলিলোটাসে সবকিছু লক্ষণের উপশম হয় এবং ইহাও এই ঔষধটির একটি বিশেষ লক্ষণ।

আমি টাইফাস সেরিব্রালিসের খুব মন্দ অবস্থাপন্ন রোগী ও একটি দীর্ঘকালের উন্মাদ রোগীও এই ঔষধ দ্বারা আরোগ্য করেছি।

২। সুপরিচিত রাস্তাতেও পথ হারায় গ্লোনয়েনের একটি বিশেষ লক্ষণ এবং ইহা বহুবার পরীক্ষিত ও প্রমাণিত হয়েছে।

৩। গ্লোয়েনের স্থানিক রক্ত সঞ্চয় সচরাচর ভিন্ন ভিন্ন রোগে পরিদৃষ্ট হয়; যেমন রজনিবৃতিকালীন উত্তাপের ঝলকা বা তাপাবেশ (climateric flushing) মাথাতেই অধিক অনুভূতি হয়ে থাকে এবং গ্লোনয়েন সেবনে উহা আরোগ্য প্রাপ্ত হয়।

৪। প্রসবান্তিক আক্ষেপেও (puerperal convulsions) এই ঔষধ উপকারী।

‘পূর্ণতাবশতঃ মস্তক যেন প্রসারিত হচ্ছে’ – এই সকল রোগীর এই লক্ষণটি বর্তমান থাকে।

এক্ষেত্রে আক্ষেপে মূত্রে যদি অ্যালবুমিন থাকে তাহলে গ্লোনয়েন বিশেষ ভাবে উপযোগী।

এছাড়া ঋতুস্রাব অবরুদ্ধ বা বিলম্বিত হয়ে যদি মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চয় হয় তাহলেও গ্লোনয়েন উপযোগী। একুপভাবে হৃৎপিণ্ডের নানারকম নৈদানিক অবস্থাঙ্গেও ইহা উপযোর্থ হতে পারে কিন্তু সবক্ষেত্রেই এর লক্ষণগুলি থাকা চাই।

৫। সর্দ্দিগৰ্মি বা সানস্ট্রোক (Sunstroke) রোগও উহার পরিণামের ফলে অন্য কোন ঔষধ অপেক্ষা গ্লোনয়েন অধিক উপকারি।

তাছাড়া কেবল সুৰ্য্যোত্তাপের কুফলেই ইহা উপযোগী তা নয়, অন্যান্য বিকীর্ণ উত্তাপের কুফলেও ইহা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রাত্রিতে কয়লার আগুনের কাছে অনেকক্ষণ বসলে অথবা সেখানে ঘুমিয়ে পড়ার ফলে শিশুদের অসুখ করলে গ্লোনয়েন উপকারী।

* এছাড়া গৱম ঘরে মাথা বেদনা ও গরম শয্যায় দাঁতে বেদনা গ্লোনয়েনে বাড়ে।

৯। “স্কন্ধদ্বয়ের অন্তবর্তীস্থানে জ্বালা”-

গ্লোনয়েনের একটি বিশেষ লক্ষণ। ইহা লাইকোপোডিয়াম ও ফসফরাসের মত।

অ্যামোনিয়াম মিউরিয়েটিকাম ও ল্যাকনান্থিসে এর বিপৰ্বত লক্ষণ দেখা যায়।

এখানে আমি আর একটি ঔষধের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করব, যা মাথা ও , মুখমণ্ডলে আকস্মিক পাবেশেও রক্ত সঞ্চয়ে গ্লোনয়েন সদৃশ, তাহল এমিলনাইট্রিস।

 

 

Glon : Glonoinum
Congestive headaches. Hyperaemia, of the brain.Surging of blood to head and heart. Pulsations.


COMMON NAME:

Nitroglycerine.


SOURCE:

Dilutions with alcohol.


FAMILY:

Organic compounds.


PHYSIOLOGICAL ACTION:

-C.N.S.-Centric vasomotor paralysis.

-Vagi-Inhibitory fibres paralyzed.

-Circulation excited.

-G.I.T.-Neurosis.

-Congestion.

-Cantharsis.


A/F:

-Fear, fright

-Sunstroke

-Injuries

-Working under gaslight


MODALITIES:

< Sun, hot weather

< Suppression (menses)

< Wine

< Gas lights

< Hair cut

< Jar

> Open air

> Elevating head

> Peaches


MIND:

-Confusion as to location, lost in well known places, well known streets, seem strange.

-Disinclined to speak, would hardly answer.

-Confusion on waking at night, confusion from inhaling fumes.

-Frantic, attempts to run away or jump out of window.

-Exalted ideas, thinks she is the Almighty and everyone else is inferior.

-Fear she has been poisoned.

-Fear, from sensation of swelling of throat.

-Time passes too slowly.

-As if in a dream, doesn’t know where he is.


GUIDING INDICATIONS:

-Symptoms have a sudden and violent onset.

-Complaints are worse from sun or heat of sun.

-Congestion surging of blood to head and heart.

-Sensation of pulsations throughout the body.

-Throbbing of whole body.

-Pulsations, pillow would beat < lying down.

-Head-Headache increases and decreases with the sun, from suppressed menses, from working under gas lights, seem to arise from neck.

-Sensation as if brain too large.

-Dull, bursting, blood surging to head, alternate congestion of head and heart.

-Afraid to shake the head, feels it would drop to pieces < jar < motion.

-Pulsations of arteries- fullness of temporals also sensation of whipcord.

-Eyes-Red hot eyes during headache.

-C.V.S.-Violent palpitations of heart with throbbing carotids.

-Hot flushes during climacteric.

-C.N.S.-Epileptic convulsion- dentitional, with congestion of head and heart.


KEYNOTES:

-Confusion – cannot recognise well known streets.

-Congestive headaches, every throb of arteries of brain seems to be synchronous with beats of heart.

-Bad effects of sunstroke, carries an umbrella all the time.

-Sensation of pulsation throughout the body.

-Cannot bear heat around head > uncovering < jar, motion, lying down.


NUCLEUS OF REMEDY:

-Warm blood, sensitive women especially, during climacteric or children during dentition with congestion of head and heart.

-Suddenness-Sensation of bursting, upward surging, enlarged.

-Irregularity of circulation.

-Pulsations of heart, head.

-Violent, ebullitions.

-Confusion, dizziness.


CONFIRMATORY SYMPTOMS:

-Confusion -forgets well known streets.

-Headache- Climacteric, hypertensive, instead of menses, sunstrokes.

-Throbbing carotids, sudden onset, violent palpitation with red hot eyes and face.

-Sensation of heavy weight pressing upon head < at every step.


CLINICAL:

-An Intercurrent in angina pectoris, to prevent organism from getting accustomed to the influence of Aur-mur (Tyler).

-Symptoms of service in cerebral congestion of children when, Belladonna doesn’t give the relief.


REMEDY RELATIONSHIPS:

Compare : Aml-n, Apis, Bell, Cimic, Crot-h, Dig, Diosc, Gels, Hyos, Lyc, Meli-a, Nit-ac, Petr, Phos, Sang, Sec, Stram.

Similar : Aml-n, Bell, Ferr, Gels, Kali-n, Nat-c, Nat-n, Op, Stram.

Antidoted By : Acon, Camph, Coff, Nux-v.

Duration Of Action : 1 Days.


✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *