ঠাণ্ডা পানিতে হাত রাখলে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। |
মাথার উপরে হাত উঠালে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। |
আবদ্ধ স্থানে ভয়, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, মানসিক চাঞ্চলতা ও মানসিক শ্রমে অনিহা, শ্রীঘ্রই মৃত্যু হবে এরুপ নিশ্চিত ধারনা। |
শীতে অত্যন্ত কাতর, গায়ে ঠান্ডা হাত বা ঠান্ডা পানি লাগলে কষ্ট হয়। |
ক্ষুধার অভাব কিন্তু অত্যন্ত পিপাসা। |
দুধে অনিহা, দুধ সহ্য হয় না। |
সকালে ও নড়াচড়ায় অধিকাংশ লক্ষনের বৃদ্ধি। |
[ডায়াবেটিস ও কিডনীঘটিত রোগ (ব্রাইটস্ ডিজিজ) লক্ষণ ডাঃ ডনকিন মাখন তোলা দুধের সাহায্যে সাফল্যের সথে চিকিৎসা করেছেন এই ইঙ্গিত পেয়ে ডাঃ সোয়ান এক শক্তীকৃত ওষুধে পরিণত করেন। এখানে লিখিত প্রতিটি লক্ষণই রোগীক্ষেত্রে সুপরীক্ষিত।]
পুষ্টি জনিত দোষ ক্রটি ও বিশৃঙ্খলা হয়ে স্নায়ুমন্ডলীতে প্রতিফলিত হয়ে যে সব রোগ লক্ষণ দেখা দেয় সেক্ষেত্রে উপযোগী, হতাশাগ্রস্ত, বেঁচে থাকতে চায় না। নিশ্চিতভাবে জানে যেন মারা যাবে তবুও মৃত্যু ভয় থাকে না ।
আমেরিকা দেশীয় বমিসহ মাথা যন্ত্রণা-সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর (ব্রায়ো), কপালে শুরু হয়ে মাথার পেছন দিক (Occiput) পর্যন্ত যন্ত্রণা বিস্তৃত হয়।
ভীষণ দপদপানি—ঐ সাথে গাবমিবমি, চোখে অন্ধকার দেখে ও দুর্দম্য কোষ্ঠবদ্ধতা (এপিজিয়া, আইরিস-ভা, স্যাঙ্গুইনে), গোলমালে, আলোতে, নড়াচড়ায় (ম্যাগ-মি, সাইলি), ঋতুস্রাবের সময় (ক্রিয়ো, সিপি) ঐ যন্ত্রণা বাড়ে। যন্ত্রণা থেকে প্রচন্ড অবসন্নতা। চেপে ধরলে, কষে মাথা বেঁধে রাখলে মাথা যন্ত্রণার উপশম হয় (আর্জ-নাই, পালস্)। ঐ সময় প্রচুর ফ্যাকাসে প্রস্রাব হয় ।
গ্লোবাস হিস্টেরিকাস–পাকস্থলী হতে গলা অবধি একটা বলের মত কিছু উঠে আসছে এই অনুভূতি হয়—দমবন্ধের মত অবস্থা হয় (আসাফো , ক্যালমি)।
বমি-অবিরাম হয়- আহারের সাথে কোন সর্ম্পক থাকে না, প্রথমে অর্জীণ ভুক্ত দ্রব্য উঠে যা খুবেই অম্লস্বাদ, পরে তিতা জলমত উঠতে থাকে। গর্ভাবস্থায় বমি হলে ব্যবহার্য (ল্যাক-এসি, সোরিন)।
কোষ্ঠবদ্ধতা – ঐ সাথে নিষ্ফল মলবেগ(এনাকার্ডি, নাক্স-ভ), মল শুকনো ও লম্বা, কোঁথ দিতে হয় যাতে মলদ্বার ছিঁড়ে যায় যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকে। এক ভদ্রমহিলার দীর্ঘ ১৫ বৎসরের দুর্দম্য কোষ্টবদ্ধতা, কখনও কখনও ৪/৫ সপ্তাহ পরে পরে মলত্যাগ করতেন, প্রতিদিন মলত্যাগের জন্য ১০/১২ বার ডুশ ব্যবহার করতেন । তিনি এ ওষুধে সেরে গেছেন ।
ঋতুস্রাব — দেরীতে হয়; ঠান্ডা জলে হাত রাখার জন্য ঋতু বন্ধ হয়ে যায় (কোনি), এক গ্লাস দুধ খেলে সাথে সাথে ঋতু বন্ধ হয়ে গিয়ে পরবর্তী সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয় (ফস এর সাথে তুলনীয়)।
অদ্রিায় ভুগে বহুদিন যাবৎ প্রচন্ড কষ্ট ভোগ ও অত্যন্ত অস্থিরতা দেখা দেয় (কক্কু, এসি-নাই), কোন কাজ করা হোক আর নাই হোক অত্যন্ত অবসন্নবোধ করে হাঁটাচলা করলে ভীষণ ক্লান্তিবোধ আসে।
অনুভূতি- দেহে ঢাকা থাকলেও মনে হয় চাদরটি ভেজা, যেন ঠান্ডা বাতাস তার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ।
শোথ — যান্ত্রিক হৃদরোগে, যকৃতের অনেকদিন ধরে গোলমালে, প্রস্রাবে বেশী পরিমাণ এলবুমেন বার হয়ে, সবিরাম জ্বরের পরবর্তী উপসর্গে শোথ দেখা দিলে এ ওষুধ প্রযোজ্য ।
শরীরের চর্বি জমে মোটা হওয়া, বিভিন্ন যন্ত্রের চর্বি জমে স্বাভাবিকতা নষ্ট হলে ব্যবহার্য ।
শক্তি — ৩০, ২০০।
[গ্লোবাস হিস্টেরিকা—[Globus Hystericus] স্নায়ু কেন্দ্রে উৎপত্তি—রোগী নিজে অনুভব করতে পারে বলে—গলা বা বুকের কাছে ওপরদিকে দলামত বা গোলাকার কিছু যেন আটকে আছে বা বেয়ে ওপরদিকে উঠছে। গিলতে কষ্টবোধ এই লক্ষণও থাকতে পারে। গলাধঃকরণ কার্য যে পেশীদ্বারা সাধিত হয় সে পেশীতে কোন প্রকার উত্তেজনা হয়ে হতে পারে, হিষ্টিরিয়াগ্রস্ত রোগী যারা হতাশা ও বিষন্নতায় ভুগছে তাদের এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে, কখনও কখনও বাহ্যিক কোন কিছুতে গলায় আঘাত লেগে বা ছড়ে গিয়েও এই লক্ষণ দেখা দেয় = NANCY ROPER’S DICT.]।
যে সকল রোগসমূহ শরীরের পুষ্টি সংক্রান্ত গোলযোগ থেকে উদ্ভব হয়, সেই সকল রোগের জন্য এটি একটি ঔষধ বিশেষ; মাথার একদিকে বেদনা, তৎসহ বেদনার সময় প্রচুর প্রস্রাব হয়ে থাকে। গাড়ীতে চড়ার সময়ে বমিবমিভাব।
মাথা – হতাশা পূর্ণ। সকালে বিছানা থেকে উঠার সময়ে কপালে বেদনা শুরু হয়ে মাথার পিছনের অংশ পর্যন্ত প্রসারতি হয়। প্রচন্ড দপদপানি, তৎসহ বমি বমি ভাব, বমি, চোখে দেখতে পায় না এবং দুর্দমনীয় কোষ্ঠকাঠিণ্য; গোলমালে, আলোতে, নড়াচড়ায়, মাসিক ঋতুস্রাবের সময় বৃদ্ধি, তৎসহ প্রচন্ড অবসন্নতা এবং চাপে ও মাথায় কষে ব্যান্ডেজ বাঁধনে উপশম।
মল — কোষ্টকাঠিণ্য; মল শক্ত, বৃহৎ, তৎসহ প্রচন্ড কষ্টকর মলত্যাগ; বেদনাপূর্ণ, বিদারিত মল দ্বার।
সম্বন্ধ-তুলনীয়—কোলোষ্ট্রাম (শিশুদের উদরময়, সারা শরীরে টক গন্ধ। শূলবেদনা)। নেট্রাম মিউর।
শক্তি – ৬ষ্ট থেকে ৩০ শক্তি ও উচ্চতর।
রোগগ্রস্ত ব্যক্তিকে ঔষধরূপে মাখনতোলা দুধ দিতে গেলে, অশিক্ষিত লোকের মনে স্বভাবতঃই বিদ্রোহীভাব উপস্থিত হয়, কিন্তু অন্যান্য জিনিষের ন্যায় শক্তীকৃত করা হইলে ইহাও একটি বিশেষ উপযোগী ঔষধে পরিণত হয়। প্রত্যেক চিকিৎসকই তাহার চিকিৎসার এমন কয়েকটি পুরুষ, স্ত্রী বা শিশুরোগী দেখিয়াছেন, যাহারা দুগ্ধপান করিতে পারে না। তাহারা বলে, দুগ্ধপান করিলে বা দুগ্ধের ব্যবহারে পীড়িত হইয়া পড়ে, দুগ্ধ তাহাদিগের পক্ষে বিষের মত।
প্রত্যেক প্রকৃত চিকিৎসকের এইরূপ রোগীদিগকে লক্ষ্য করা এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রে দুগ্ধপানের পর যে যে লক্ষণ উপস্থিত হয়, তাহা নির্ণয় করা কর্তব্য। এই লক্ষণগুলির সাহায্যে বস্তুটির পরীক্ষা হইয়া যায় এবং উহা অনুভূতিপ্রবণ ব্যক্তিদিগের মধ্যে উৎপন্ন হয় বলিয়া, উহাই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রকমের পরীক্ষা।
লেখক এইরূপ প্রত্যেকটি রোগীকে ততদিন পর্যন্ত পরীক্ষা করা তাহার কর্তব্য বলিয়া মনে করেন, যতদিন না, দুগ্ধদ্বারা সৃষ্ট রোগের মূর্তিটি, ব্যক্তিগত লক্ষণগুলি এবং সমষ্টিগত চেহারাটি তাহার মনে পরিস্ফুট না হইয়া উঠে।
দুগ্ধদ্বারা পীড়িত হয় এরূপ ধাতুর সম্বন্ধে চিন্তা করিলে অনেক কিছু জানা যায়। অনেকে হয়ত মনে করিতে পারেন যে মাখনতোলা দুধ এবং টাটকা দুধের উপযোগিতার মধ্যে পার্থক্য আছে, কিন্তু কাৰ্যতঃ মাখনতোলা দুধই যথেষ্ট এবং উচ্চক্রমে প্রযুক্ত হইলে দুগ্ধে অনুভূতিযুক্ত ব্যক্তিদিগকে আরোগ্য করে। নিম্নক্রমে ইহা একান্তই ব্যর্থ।
উচ্চক্রমের আশ্চর্য ক্ষমতা সম্বন্ধে যাহারা বিশ্বাস করেন না, তাহাদিগের সম্মুখে সপ্রমাণ করিবার মত ইহা একটি প্রয়োজনীয় ঔষধ। ইহার বৃদ্ধি-লক্ষণ সারা চব্বিশ ঘন্টা ধরিয়া চলে, কোন কোন ক্ষেত্রে রোগ-লক্ষণগুলি কেবলমাত্র দিবাভাগেই প্রকাশিত হয় এবং সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে উপশম উপস্থিত হয়, কিন্তু সাধারণতঃ ঐরূপ হয় না।
দুগ্ধদ্বারা পীড়িত হন, এরূপ পুরাতন রোগিণী অত্যন্ত শীতল ও রক্তহীন থাকেন, এমনকি গরম ঘরে ও গরম পোষাক পরিয়া গরম হইতে পারেন না; তিনি এত শীতার্ত ও ঠান্ডায় এত অনুভূতিবিশিষ্ট থাকেন যে, ঘরের মধ্যেও, যেখানে কোন বায়ুস্রোত থাকা সম্ভব নয়, সেখানেও তাহার মনে হয় যেন বায়ু বহিয়া তাহার গায়ে লাগিতেছে, যেন কেহ তাহাকে পাখা দিয়া বাতাস করিতেছে, কিন্তু অন্য লোকেদের কাছে ঐ ঘরটিই গরম বোধ হয়। তিনি আর্দ্র আবহাওয়ায় অত্যন্ত অনুভূতিবিশিষ্ট থাকেন। তাঁহার সর্বাঙ্গে এবং বিশেষভাবে মস্তকে স্নায়ুশূলের ও বাতের যন্ত্রণা দেখা যায়। মাথার যন্ত্রণা শীতল বাহ্যপ্রয়োগে উপশমিত হয়, কিন্তু অন্যস্থানের যন্ত্রণা। উত্তাপেই ভাল থাকে। সকল যন্ত্রণাই সঞ্চালনে বাড়ে এবং বিশ্রামে ভাল থাকে, যন্ত্রণা চাপে উপশমিত হয়। অস্থিগুলি স্পর্শকাতর হয়। অত্যন্ত আলস্য, এমনকি দুর্বলতা ও কোনরূপ পরিশ্রমই সহ্য করিতে পারেন না। সুস্পষ্ট অস্থিরতা বর্তমান থাকে এবং তিনি নিদ্রাহীনতার পর আর সামলাইতে পারেন না, সামান্য চলাফেরাতেই অত্যন্ত দুর্বল হইয়া পড়েন। তাহাকে এরূপ দেখায় এবং তিনি এরূপ ব্যবহার করেন, যেন তিনি দীর্ঘকাল ধরিয়া ভুগিতেছেন অথবা তিনি ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হইতেছেন। সর্বাঙ্গের চর্ম শীতল পদার্থের স্পর্শে, ঠান্ডা গামছার স্পর্শে অত্যন্ত অনুভূতিবিশিষ্ট থাকে। এই ঔষধের প্রকৃতিতে সুস্পষ্ট পৰ্য্যায়শীলতা আছে এবং উহা পুনঃ পুনঃ আক্রমণশীল শিরঃপীড়াতেই বিশেষভাবে লক্ষিত হয়। এই ঔষধটির বহুমূত্র রোগ আরোগ্য করার সুনাম আছে, এবং উহাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নাই, কারণ জানা গিয়াছে যে, ইহা দ্বারা দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা এবং প্রচুর জলবৎ মূত্র ও অত্যন্ত তৃষ্ণা এবং প্রচুর ঘন মূত্রপাত আরোগ্যও করে। এই ঔষধ দ্বারা আরোগ্য হইয়াছে, এরূপ বহু ভগ্নস্বাস্থ্য রোগী লেখকের সম্মুখে উপস্থিত হইয়াছে, তাহারা আদর্শ বহুমূত্র রোগীর মতই ছিল, কিন্তু যে-স্থলে ইহার অদ্ভুত লক্ষণগুলির সাদৃশ্য থাকে, মাত্র সেই স্থলেই ইহা দ্বারা আরোগ্য হয়। একমাত্র সাধারণ লক্ষণগুলি বর্তমান থাকিলেই ইহা দ্বারা আরোগ্য হয় না। যে-সকল রোগীর দুগ্ধে অপ্রবৃত্তি থাকে, যাহারা দুগ্ধপানের পর উদরাময়, বমি বমিভাব, বমন, শিরঃপীড়া, উদার এবং পাকস্থলীর দুর্গন্ধযুক্ত হইয়া পড়েন, তাহাদিগকে বিশ্বস্তভাবে এবং অভিনিবেশ সহকারে লক্ষ্য করিতে হইবে এবং তাহা হইলে উপযুক্ত সময়ে দুগ্ধপানজনিত রোগের সাধারণ লক্ষণগুলি সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যাহবে।
যে-সকল শিশু ও বালক-বালিকারা দুগ্ধ পান সহ্য করিতে পারে না, তাহাদিগের পক্ষে ইহা বিশেষ উপকারী; কিন্তু তাই বলিয়া উহা সব ক্ষেত্রের পক্ষেই উপযোগী নহে, বাস্তবিক উহা এমন। একটি ঔষধ, যাহা কতকগুলি শিশুর বর্ধনে সাহায্য করিতে পারে; এইরূপ শিশুর কতকগুলিকে দুগ্ধ খাওয়াইলে মেদবৃদ্ধি রোগযুক্ত হইয়া পড়ে, এবং অপর কতকগুলি রোগা হইতে থাকে।
যকৃৎ পীড়া এবং চাপাপড়া ম্যালেরিয়াহেতু দুর্বল হৃদপিন্ডজনিত শোথরোগে ইহা উপকারী হইয়াছে। ঐ সকল লোক অভ্যাসমত দুগ্ধ পান করিয়া যাইতেই থাকে, তাহার নীরক্ত, ও সর্দিযুক্ত হইয়া পড়ে, পেশীসমূহের, যকৃতের ও হৃদপিন্ডের মেদাপকর্ষ উপস্থিত হয়। দুগ্ধ খাইয়া বিষাক্ততার সুস্পষ্ট লক্ষণ খাদ্যবস্তুসমূহের সমীকরণের অভাব।
যন্ত্রণা অনেক স্থলে মেরুমজ্জায়, চক্ষুগোলকে, চক্ষের উপরিস্থ স্নায়ুগুলিতে, কপালে এবং মাথার মধ্য দিয়া, পাকস্থলীতে এবং নিম্ন উদরে, ভীষণ হয়। অনেক লোক দুগ্ধপানে পীড়িত হয়, কিন্তু স্বচ্ছন্দে ও নির্বিঘ্নে ক্ষীর খাইতে পারে। সচরাচর ল্যাক ডিফ্লোরেটাম এইরূপ রোগীদিগের ঔষধ এবং সতর্কভাবে পরীক্ষার পর দেখা যায় যে, উহাদের লক্ষণগুলিও মাখনতোলা দুধের পরীক্ষা-লক্ষণের অনুরূপ।
স্মৃতিশক্তির লোপ, উদ্যমহীনতা এবং মানসিক কার্যে অপ্রবৃত্তি, দুঃখিতভাব, মৃত্যুইচ্ছা, আত্মহত্যার সহজ উপায় সম্বন্ধে চিন্তা করে, বিষন্নতার সহিত ক্রন্দন ও হৃদস্পন্দন, লোকজনের সহিত দেখা করিতে বা কথা বলিতে অনিচ্ছা, দুর্বলতা এবং মতিস্থিরতার অভাব। সে নিশ্চিত থাকে যে, সে মরিতে চলিয়াছে। তিনি (স্ত্রী) কল্পনা করেন যে, তাঁহার সব বন্ধুই মরিয়া যাইবে এবং তাঁহাকে কোন মঠে চলিয়া যাইতে হইবে, ক্ষুদ্র গৃহে থাকার সময় পাছে দরজাটি বন্ধ হইয়া যায় অথবা তাহার শ্বাসরোধ হয়—এরূপ ভয়। তিনি সূঁচে সূতা পরাইবার সময় উপরদিকে হাত তুলিলে মূৰ্ছাকল্প এবং শিরোঘূর্ণনযুক্ত হইয়া পড়েন, বিছানায় পার্শ্ব পরিবর্তন করিলে এবং বালিশ হইতে মাথা নাড়িলে শিরোঘূর্ণন, শুইয়া থাকার সময় চক্ষু মেলিলে, শূইতে গেলে শিরোঘূর্ণন। প্রাতঃকালে মেঝের উপর পা ফেলিয়া চলিলে মূৰ্ছাকল্পতা ও বমি বমিভাব। উচ্চের কোন জিনিষ লইবার জন্য হাত বাড়াইলে শিরোঘূর্ণন দাড়াইয়া থাকার সময় বা হাঁটার সময় ডানপার্শ্বে পড়িয়া যাইবার ঝোঁক।
রুগ্ন, বিবর্ণ, চিন্তাজীর্ণ স্ত্রীলোকদিগের শিরঃপীড়া চক্ষের উপরিভাগে, এবং মাথার সম্মুখদিকে বেদনা ভীষণ, চাপে এবং কষিয়া বাঁধিলে ভাল থাকে, অন্ধকার ঘরে শুইয়া থাকিলে ভাল থাকে, অন্ধকার ঘরে শুইয়া থাকিলে ভাল থাকে, ঠান্ডা বাহ্য প্রয়োগে ভাল থাকে, সম্পূর্ণ বিশ্রাম লইলে ভাল থাকে, সামান্য সঞ্চালনে বাড়ে, আলোকে, গোলমালে, কথা বলায় বাড়ে, শিরঃপীড়া দুগ্ধপান করার জন্য উপস্থিত হয় এবং তাহার সহিত প্রচুর, বিবর্ণ মূত্রপাত থাকে, বমি বমিভাব, খাদ্যবস্তু, শ্লেষ্মা ও পিত্তবমন থাকে। মস্তকের পশ্চাদ্ভাগে, মস্তক-শিখরে এবং মস্তকের উভয় পার্শ্বে তীব্র যন্ত্রণা, সকল প্রকার শিরঃপীড়ার সহিতই মাথার মধ্যে দপদপ করে, শিরঃপীড়ার সময় মুখমন্ডলের আরক্তিমতার সহিত স্পষ্ট রক্তসঞ্চয়ও থাকিতে পারে; শিরঃপীড়া প্রায়ই নির্দিষ্টকাল ব্যবধানে উপস্থিত হয়, যদিও সময়ে সময়ে উহা ঠিক নিয়মিতভাবে আসে না। এক সপ্তাহ অন্তর শিরঃপীড়াই খুব সাধারণ। ঝাঁকি লাগিলে বা কাশিলে মাথায় সর্বত্র অত্যন্ত ক্ষততাবোধ, মনে হয় যেন মাথার উপরিভাগটি উঠিয়া পড়িতেছে। যন্ত্রণা প্রথমে কপালে আরম্ভ হইয়া মস্তকের পচাদ্দেশে বিস্তৃত হয়, উহাতে রোগীকে প্রায় পাগল করিয়া তুলে। কপালে ও মাথার মধ্যে তীব্র যন্ত্রণা, মস্তকশিখরে সর্বাধিক, শিরঃপীড়ার অবসানে মাথায় থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় অনুভূতি। মাথার সম্মুখদিকের সকল প্রকার শিরঃপীড়ার সহিত শঙ্খস্থানে দপদপানি থাকে। ইহা অনেক প্রকার নির্দিষ্টকাল ব্যবধানে আগত, তীব্র সবমন শিরঃপীড়া আরোগ্য করিয়াছে।
সকল শিরঃপীড়া শিশুকাল হইতে চলিয়া আসিতেছিল এবং বলা হইত যে, রোগী ইহা উত্তরাধিকারসূত্রে পাইয়াছে। এইরূপ শিরঃপীড়ার সহিত সময়ে সময়ে মাথাটি যেন বিস্তৃত হইতেছে, এরূপ অনুভূতি থাকে। ইহা ঋতুর পূর্বে বা পরে আগমনশীল শিরঃপীড়া আরোগ্য করিয়াছে।
ইহা গর্ভাবস্থায় প্রাতঃকালীন শিরঃপীড়া আরোগ্য করিয়াছে। বা শিরঃপীড়ার পূর্বে অস্পষ্ট দৃষ্টি, কেবলমাত্র আলোক দেখিতে পায়, বস্তুসকল দেখে না, অনুভূতি হয় যেন চক্ষু দুইটি পাথরে পূর্ণ রহিয়াছে; অত্যন্ত আলোকাতঙ্ক, চক্ষু দুইটিতে মৃদু বেদনা, বামটিতে অধিক, চক্ষু মুদিয়া থাকিলেও বেদনা, ঠান্ডা বাহ্য প্রয়োগে উপশমিত হয়, চক্ষু মুদ্রিত করিলে উপশমিত হয়, অন্ধকার ঘরে উপশমিত হয়। পড়িবার সময় চক্ষে টানিয়া ধরার ন্যায় যন্ত্রণা,—এককালে মাত্র কয়েক মিনিট ধরিয়া পড়িতে পারে। আলোকে প্রবেশ করিলে প্রথম প্রথম খুব যন্ত্রণা করে, চক্ষের মধ্যে ও উপরে যন্ত্রণা, উত্তাপে ও সঞ্চালনে বৃদ্ধি। চক্ষুর পাতা দুইটি ভারি, দ্রিালু ও শুষ্ক বোধ হয়। অশ্রুস্রাবের সহিত যন্ত্রণা,—বাম চক্ষুর উপরেই সর্বাপেক্ষা স্পষ্ট লক্ষিত হয়।
নাকের মূলদেশে যন্ত্রণাকর চাপবোধ ও কষিয়া ধরার ন্যায় অনুভূতি।
মুখমন্ডলের মৃতের ন্যায় বিবর্ণতা—চক্ষুর নীচে কাল দাগের সহিত শীর্ণতাপ্রাপ্ত, অপ্রশস্ত ও অত্যন্ত মলিন মুখমন্ডল। একজিমার সহিত মলিন বর্ণ। মুখমন্ডলের বামদিকে উত্তাপের ঝলক, যেন মুখমন্ডলের হাড় হইতে মাংস ছিড়িয়া লইতেছে—এরূপ অনুভূতি, যেন প্রান্তগুলি ছিঁড়িয়া বাহির হইয়া পড়িতেছে, এরূপ অনুভূতি।
নিদ্রাকালে দাঁত কড়মড় করে, তৎসহ পাকস্থলীতে এবং মাথায় যন্ত্রণা এবং বমন।
স্বাদ পাসে, টক; মুখ শুষ্ক; নিঃশ্বাস দুর্গন্ধ; মুখ চটচটে এবং ফেনাযুক্ত, বিশেষভাবে কথা বলার সময়।
গলায় গোলা উঠার অনুভূতিযুক্ত, হিষ্টিরিয়ার মূৰ্ছা, গলবেদনা গিলিতে গেলে বৃদ্ধি। গলার শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী অত্যন্ত বিবর্ণ থাকে।
ক্ষুধার সম্পূর্ণ অভাব, প্রচুর জলপানের প্রবল তৃষ্ণা। শূন্য টক উদার, উদরের বায়ুস্ফীতি, সন্ধ্যাকালে শীতল জলপানহেতু বমি বমিভাব, শয়ন করিলে বৃদ্ধি; হেলান দিয়া বসিলে অথবা, সঞ্চালনে অথবা প্রাতঃকালে নিদ্রা হইতে উঠিলে বমি বমিভাব; সাঙ্ঘাতিক বমি বমিভাব, কিন্তু বমি করিতে পারে না; গোঁ-গোঁ করে, কাতরভাবে শব্দ করে। গাত্র গরম ও নাড়ী স্বাভাবিক থাকিলেও, অত্যন্ত অস্থিরতা ও শীতলতার অনুভূতি থাকে। বমন, প্রথমে অত্যন্ত অম্ল গন্ধ, অজীর্ণ খাদ্য, তারপর তিক্ত জল এবং সর্বশেষে জলের মধ্যে ছাড়া-ছাড়া বাদামিবর্ণ চাপ, দেখিতে কফিচূর্ণের মত। অবিরাম বমন, তাহার সহিত খাওয়ার কোন সম্বন্ধ থাকে না; পিত্তবমন, তৎসহ শিরঃপীড়া এবং পাকস্থলীতে তীব্র যাতনা। যে-সকল স্ত্রীলোকের দুধ সহ্য হয় না, তাহাদের গর্ভকালীন বমন ইহা একটি অত্যন্ত উপযোগী ঔষধ। পাকস্থলীর মধ্যে খালধরা।
পুরাতন পাকাশয়তন্ত্র-প্রদাহ, তৎসহ পুরাতন উদরাময় ও বমন, উদরের কোমলতা, বায়ুসঞ্চয় ও ফাপ। উদরে ভারবোধ এবং যেন পাথর চাপান রহিয়াছে এরূপ অনুভূতি। শিরঃপীড়ার সহিত নাভিদেশের আড়াআড়ি তীব্র যন্ত্রণা।
পুরাতন কোষ্ঠবদ্ধতা যে-স্থলে সরলান্ত্রটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত থাকে, পিচকারি ও বিরেচক ঔষধে ফল হয় না; মল প্রকান্ড, কঠিন এবং কষ্টকর, অনেকক্ষণ বেগ দেওয়ার পর মলটি আবার পিছাইয়া যায়। সিলিকা ব্যর্থ হওয়ার পরও ইহা দ্বারা আরোগ্য হইয়াছে। অত্যন্ত শীতকাতর রোগীদের কোষ্ঠবদ্ধতা, কোষ্ঠবদ্ধতার সহিত নির্দিষ্টকাল ব্যবধানে শিরঃপীড়া ও বমন, পুনঃ পুনঃ নিষ্ফল মলত্যাগপ্রবৃত্তি, দুগ্ধ পান করিলে উদরাময়।
পুনঃ পুনঃ স্বল্পমূত্রপাত; প্রচুর বিবর্ণ জলবৎ মূত্র, তৎসহ শিরঃপীড়া, মূত্র অত্যন্ত ঘোরাল, এবং ঘন, অন্ডলালাযুক্ত মূত্র। ঠান্ডা বাতাসে ভ্রমণকালে অথবা অশ্বপৃষ্ঠে চলিলে অসাড়ে মূত্রত্যাগ এই ঔষধে আরোগ্য হইয়াছে। মূত্রস্থলী পূর্ণ থাকিলেও অনুভূতির অভাব ইহা দ্বারা আরোগ্য হইয়াছে।
ঋতুকালের পূর্বে ও পরে হরিদ্রাভ বাদামিবর্ণের প্রদরস্রাব ইহা দ্বারা আরোগ্য হইয়াছে। ইহা প্রচুর হরিদ্রাবর্ণ প্রদরস্রাব আরোগ্য করে। ডিম্বকোষপ্রদেশে নীচের দিকে ঠেলামারা বেদনা, ঋতুস্রাব নিয়মিত সময়ের বহু পরে এবং সামান্য, ঋতুস্রাব নিয়মিত সময়ের পরে, বিবর্ণ এবং জলবৎ। পৃষ্ঠে ও ডিম্বকোষপ্রদেশে ঋতুকালে যন্ত্রণা, ঠান্ডা জলে হাত ডুবানর পর হঠাৎ ঋতুলোপ; যখন দুগ্ধ কমিয়া যায় অথবা লোপ পায়, তখন ইহা অত্যন্ত উপযোগী। স্তন দুটি শীর্ণতাপ্রাপ্ত হইতে থাকে।
পাকস্থলীর ফাঁপের সহিত হাঁপানি, হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত শ্বাসকৃচ্ছ্বতা। হ্রস্ব শুষ্ক কাশি, ঠান্ডা ঘরে ও ঠান্ডা বাতাসে বৃদ্ধি।
বুকের চাপবোধসহ ক্ষততা, ঠান্ডায়, ভিজা আবহাওয়ায় বুকে বাতের যন্ত্রণা। উভয় ফুসফুসের অগ্রভাগে যক্ষ্মারোগের গুটিকা সঞ্চয়।
হৃদপিন্ডপ্রদেশে চাপবোধ, তৎসহ শ্বাসকষ্ট এবং এরূপ অনুভূতি যেন সে মরিয়া যাইবে, হৃদপিন্ডের অগ্রভাগে ছুরি দিয়া খোঁচানর ন্যায় যন্ত্রণা। হৃদপিন্ডে স্পন্দন এবং মুখমন্ডলের বামপার্শ্বে ও গ্রীবাদেশে উত্তাপের ঝলক, সামান্য পরিশ্রমে বা উত্তেজনায় হৃদপিন্ডস্থানে ধড়ফড় করে।
পৃষ্ঠের উপর হইতে নীচের দিকে, এবং এক স্কন্ধ হইতে আর এক স্কন্ধ পর্যন্ত আড়াআড়ি উত্তাপবোধ, ঠান্ডা জলে ভিজান গামছায় অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা। শরীরের পার্শ্বে এবং ঘাড়ে ইন্দ্রবিদ্ধা, চুলকাইবার পর জ্বালা, গ্রীবানিম্নস্থ মেরুদন্ডের চতুর্থ কশেরুকায় চাপনবৎ বেদনা, স্কন্ধাস্থিদ্বয়ের মধ্যবর্তী পৃষ্ঠে শীতলতার অনুভূতি; পৃষ্ঠের নিম্নাংশে এবং ত্রিকাস্থিপ্রদেশে তীব্র জ্বালা, পৃষ্ঠের নিম্নাংশে অবিরত বেদনা।
হাতের আঙ্গুলগুলির ডগা বরফের ন্যায় শীতল হস্তের বাকি অংশ উত্তপ্ত, ঊরুর উপরদিকে ও ভিতরদিকে অসাড়তা ও অনুভূতি হীনতা। সায়েটিক স্নায়ু দিয়া নিম্নদিকে গোড়ালি পর্যন্ত চাপনবৎ বেদনা, প্রাতঃকালে জাগিয়া উঠিলে বমনেচ্ছা ও মূৰ্ছাকল্পতা, স্ফীত পায়ের গাঁটে দুর্বলতা ও কনকনানি। পায়ের পাতের ধারগুলির চর্ম পুরু হইয়া যায়, পায়ের পাতা দুইটি বরফের ন্যায় শীতল। হাতের কজি এবং পায়ের গুলফসন্ধিতে কনকনানি, শিরঃপীড়ার সময় হাত ও পায়ের পাতার শীতলতা।
অত্যন্ত অস্থিরতা, রাত্রিকালে নিদ্রাহীনতার জন্য দীর্ঘস্থায়ী অত্যধিক ক্লেশ, সারাদিন ঘুম ঘুমভাব, অত্যন্ত নিদ্রাহীনতা।
প্রাতে ৯টায়, সারা সকাল ধরিয়া জ্বর, অত্যন্ত ঘর্মাক্ত হইয়া জাগিয়া উঠে, ঘৰ্ম্মে বস্ত্রাদিতে হলদে দাগ ধরে। বিলেপী জ্বর। যেন বিছানার চাদরটি ভিজা আছে এরূপ অনুভূতি।
চৰ্ম্মে শীতল হস্তের অথবা গামছার স্পর্শে অত্যন্ত অনুভূতি, সেইজন্য পরীক্ষাকারীগণ অত্যন্ত গরম জল ব্যতীত স্নান করিতে পারিতেন না। চৰ্ম্ম ঠান্ডা এবং বিবর্ণ; এবং শিরাগুলি নীল ও উপাত দেখায়। ইন্দ্রবিদ্ধাসদৃশ উদ্ভেদ, চৰ্ম্মের চুলকানি এবং আঁচড়াইবার পর জ্বালা।