অত্যন্ত অস্থির, খিটখিটে মেজাজ, বাচাল ও তাড়াহুড়া করে। |
দিবারাত্রি পিপাসা, রাক্ষুসে ক্ষুধা সত্ত্বেও শরীরের শীর্ণতা, আহার করার সময় ভাল লাগে। |
ভয়ানক দূর্বলতা, অতি সামান্য পরিশ্রমেই প্রচুর ঘাম হয়। |
গ্রন্থিসকল ফোলে ও তাতে ব্যথা হয়, কোন কোন সময় গ্রন্থি (যেমন স্তন) শুকিয়ে যায়। |
পুরাতন প্রদাহের বৃদ্ধি। |
চুপচাপ বসে থ্কলে মানসিক উৎকন্ঠা। |
রোগ ধীরে ধীরে বাড়ে ও সহজে আরোগ্য হয় না। |
উপযোগিতা – স্ক্রফুলা ধাতুগ্রস্ত (যারা গলায় গ্রান্ড এর রোগে ভোগে) ঘন, কালচুল ও চোখের মনি কাল, ধাতুবিকৃত হয়েছে সাথে ভীষণ দুর্বলতা ও অত্যন্ত রোগা হয়ে যেন দেহ শুকিয়ে গেছে এমন রোগীর ক্ষেত্রে উপযোগী (এব্রোটে)।
অত্যন্ত দুর্বল, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গেলে শ্বাস কষ্ট হয় (ক্যাল্ক-কার্ব) ঋতুর সময় ঐ রকম কষ্ট ও দুর্বলতা (এলুমি, কাব-এনি, কক্কুলাস) এমন রোগীতে উপযোগী ।
রাক্ষুসে ক্ষুধা – সহজেই খেতে পারে, পরিমাণেও অনেকটা তবুও দেহে মাংস লাগে না (রোগা হতে থাকে) [এব্রোটে, নেট-মি, স্যানিকি, টিউবার]।
সকাল হতে রাত অবধি সর্বদা শূন্য ঢেকুর ওঠে যেন সমস্ত ভুক্তদ্রব্য বায়ুতে পরিণত হয়েছে (কেলি-কা) ।
ক্ষিধে পেলেই কষ্ট হয়, কয়েক ঘন্টা বাদে খেতে বাধ্য হয়। না খেলে উদ্বিগ্ন ও দুঃখিত মরোভাব হয় (সিনা, সালফ); কিছু খেতে থাকলে বা খেলে অর্থাৎ পেট ভর্তি থাকলে আরাম বোধ করে।
ফুসফুসের নিম্নাংশে সুড়সুড় করে, চুলকায় এজন্য কাশি হতে থাকে বায়ুনলী হতে নাকের ভিতর পর্যন্ত ঐরকম অনুভূতি হয় (কক্কাস-ক্যা, কোনি, ফস)।
গ্ল্যান্ড গুলোর টিস্যু বেড়ে যায় ও শক্তভাব হয়। থাইরয়েড, স্তনগ্রন্থি, ডিম্বকোষ, অন্ডকোষ, জরায়ু, প্রষ্টেট ও অন্যান্য গ্রন্থিতে ঐ রকম হয় কিন্তু স্তনদুটো থলথলে হয়ে ঝুলতে থাকে ।
কালো চুল যাদের তাদের শক্ত গলগন্ড রোগ (হালকা চুল যাদের = ব্রোমিয়াম) খাওয়ার পর আরাম বোধ করে।
বুক ধড়ফড় করে সামান্য পরিশ্রমে ঐ বেড়ে যায় (ডিজিটালিসের সাথে তুলনীয়) (একটু মানসিক পরিশ্রমে বুক ধড়ফড়ানি বেড়ে যায় = ক্যাল্কে আর্স)।
মনে হয় হৃৎপিন্ড কিছুতে চেপে ধরেছে, যেন লোহার শক্ত হাতে মুঠ করে ধরছে (ক্যাকটাস, সালফ)।
শ্বেতপ্রদর — জ্বালা করে, ঘা মত হয়, কাপড়ে দাগ পড়ে কাপড় ফুটো হয়ে যায়—ঋতুকালে প্রচুর পরিমাণে প্রদর স্রাব হয়।
সার্ভিক্স – (জরায়ুগ্রীবা) এ ক্যান্সার ক্ষত হতে পেটে ছুরি দিয়ে কেটে ফেলার মত যন্ত্রণা ও প্রতিবার মলত্যাগের সময় জরায়ু হতে রক্তস্রাব।
কোষ্ঠবদ্ধতা – নিষ্ফল মলবেগ, ঠান্ডা দুধ খেলে উপশম। ক্রুপকাশি, গলায় কৃত্রিম ঝিল্লি হয়, গলা ভেঙে যায়, শুকনো কাশি, গরম ভেজা আবহাওয়ায় কাশি বাড়ে—সাথে নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় হিসহিস শব্দ ও করাত কাটার শব্দ (স্পঞ্জিয়া) হতে থাকে।
কাশির সময় শিশু গলা চেপে ধরে (এলিয়াম-সি) বিশেষতঃ মোটাসোটা বাচ্চাদের মুখ ঠান্ডা ও ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
সম্বন্ধ লাইকোর সাথে অনুপূরক সম্পর্ক। কৃত্রিম ঝিল্লীযুক্ত ক্রুপ কাশি বা ক্রুপ সদৃশ রোগে, বিশেষতঃ ক্রূফুলা ধাতু, তাড়াতাড়ি বেড়ে গেছে এমন শিশুদের রোগে এসেটিক-এ্যাসিড, ব্রোমি, কোনি, কেলি-বাই, স্পঞ্জিয়ার সাথে তুলনীয় । হিপার ও মার্কের পর ভাল খাটে ক্রুপকাশিতে ও ওষুধের পরে কেলি-বাই ভাল কাজ দেয়। গলগন্ড রোগে পুর্ণিমার পরে যখন চাঁদ ছোট হতে থাকে তখন প্রয়োগ করলে ভাল ফল দেয়-লিপি।
প্রসূত অবস্থায় উচ্চক্রম ব্যতীত প্রয়োগ করা উচিত নয় হেরিং।
বৃদ্ধি — গরমে, মাথায় কাপড় ঢাকা দিলে রোগ লক্ষণ বেড়ে যায় । (হিপার ও সোরিনাম এর বিপরীত)।
শক্তি – ৩০, ২০০ হতে উচ্চ শক্তি, ০/১ থেকে ০/৩০।
বিপাকক্রিয়া দ্রুতঃ প্রচুর ক্ষুধা সত্ত্বেও শরীরের মাংস ক্ষয়, ক্ষুধার্ত, তৎসহ প্রচুর পিপাসা। আহারের পরে ভালবোধ করে। প্রচন্ড দুর্বলতা, সামান্য শারীরিক পরিশ্রমে ঘাম হয়। আয়োডামের রোগী অত্যন্ত বেদনা, গায়ের রঙ কালো, তৎসহ লসিকা গ্রন্থির বিবৃদ্ধি, রাক্ষুসে ক্ষুধা সত্ত্বেও শরীর ক্রমশঃ রোগা হয়ে যায়। টিউবার কিউলোসিস দোষঘটিত দেহ প্রকৃতি।
সকল গ্রন্থিসমূহ, শ্বাসযন্ত্র প্রদাহ, রক্তসংবহনতন্ত্র বিশেষ ভাবে আক্রান্ত হয়, ঐ গুলি শীর্ণতাপ্রাপ্ত হয়। আয়োডিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তন্ত্রের শক্তিবৃদ্ধি করে। সীসা বিষক্রিয়া। কম্পন। আয়োডিন ঠান্ডা বাতাস চায়।
পুরাতন প্রদাহজনিত অবস্থার তরুন প্রকাশ। সন্ধিজ বাত। সংযোজক কলার উপর বিশেষভাবে এই ঔষধ কাজ করে। প্লেগ। গলগন্ড। রক্ত বহানলীর অস্বাভাবিক প্রকৃতির সঙ্কোচন, কৈশিক নলীর রক্তাধিক্য এবং এর পরে শোথ, কালশিরা, রক্তস্রাবও পুষ্টি সংক্রান্ত গোলযোগ-এই গুলিই হল এই ঔষধের রোগ সম্পর্কিত বিকৃতি যার উপর ভিত্তি করে এই ঔষধের লক্ষণসমূহ দাঁড়িয়ে রয়েছে। জীবনীশক্তির প্রতিক্রিয়া শিথিল, এই কারণে এই ঔষধের রোগতা অবস্থাগুলি দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়। শরীরের সকল শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর তরল প্রদাহ, ভাল ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও শরীর দ্রুত ক্ষয় পেতে থাকে এবং গ্রন্থির শীর্ণতা এই ঔষধের কথা মনে করা যায়, বহু প্রকারের ক্ষয়রোগ এবং গন্ডমালা ধাতু দোষে এই ঔষধ ব্যবহার হয়ে থাকে। শ্বাসযন্ত্র সমূহের তরুণ উপসর্গসমূহ। নিউমোনিয়া, দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আয়োডিন নিজে গরম ও শীতল পরিবেশ চায় উপরের উঠার সময় দুর্বলতা ও শ্বাসকষ্ট। গ্রন্থির মত মাংস পিন্ড। এই ঔষধের অরিষ্ট গ্রন্থির স্ফীতিতে ও র্যাটল সাপের কামড়ে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণভাবে প্রয়োগ করা হয়।
মন — শান্তভাবে থাকলে উদ্বেগ দেখা দেয়। বর্তমান সম্পর্কিত উদ্বেগ ও অবসাদ, এই অবস্থার সঙ্গে ভবিষ্যতের কোন সম্পর্ক থাকে না। হঠাৎ করে দৌড়াতে ইচ্ছা করেও কিছু ভয়ঙ্কর কাজ করতে মন চায়। বিস্মরনশীল। সর্বদা ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হয়। লোক দেখলে ভয় করে, ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক বর্জন করে বিষন্নতা। আত্মহত্যা করার প্রবণতা।
মাথা – দপদপানি; মাথায় রক্তছুটে যায় ও মাথায় একটি বন্ধনী কষে রয়েছে এই জাতীয় অনুভূতি। মাথাঘোরা, সামনের দিকে ঝুঁকলে ও গরম ঘরে বৃদ্ধি। বৃদ্ধ ব্যক্তিদের, পুরাতন রক্তাধিক্যজনিত মাথার যন্ত্রনা (ফসফরাস)।
চোখ — প্রচন্ড অশ্রুস্রাব। চোখের ভিতর বেদনা। চোখের তারা বিস্ফারিত। সর্বদা চোখের তারা নড়াচড়া করতে থাকে। অশ্রস্রাবী কোষের তরুন প্রদাহ।
নাক – হাঁচি। হঠাৎ করে মারাত্মক জাতীয় ইনফ্লুয়েঞ্জা। শুষ্ক সর্দি, মুক্ত বাতাসে তরল হয়ে যায়, এছাড়াও একপ্রকার উষ্ণ তরল সর্দি তৎসহ চামড়ার সর্বাঙ্গীন উষ্ণতা। নাকের গোড়ায় ও ফ্রন্টাল সাইনাসে বেদনা। নাক বন্ধ হয়ে আসে। ক্ষত তৈরী হবার প্রবণতা। ঘ্রানশক্তির অবলুপ্তি। নাকের ভিতরে তরুনরক্তাধিক্য তৎসহ উচ্চরক্তচাপ।
মুখগহ্বর – মাঢ়ী শিথিল এবং মাঢ়ী থেকে সহজেই রক্তপাত হয়। দূর্গন্ধযুক্ত ক্ষত ও লালাস্রাব। প্রচুর, দূর্গন্ধযুক্ত লালাস্রাব। জিহ্বা পুরু লেপযুক্ত। মুখগহ্বর থেকে দূর্গন্ধ বেরিয়ে থাকে।
গলা — কণ্ঠনলীতে সঙ্কোচনের অনুভূতি। ইউষ্টেসিয়ান ছিদ্রপথের বধিরতা। থাইরয়েড গ্রন্থির বিবৃদ্ধি। গলগন্ড, তৎসহ সঙ্কোচনের অনুভূতি। নিম্নচোয়ালের গ্রন্থিসমূহের স্ফীতি। আলজিহ্বা স্ফীত।
পাকস্থলী – পাকস্থলীর উপরের অংশে দপদপানি। রাক্ষুসে ক্ষুধা ও প্রচুর পিপাসা। শূন্য ঢেকুর, যেন মনে হয়, প্রতিটি খাদ্যবস্তু পাকস্থলীতে যাবার পরে গ্রাসে পরিনত হয়েছে। যদি সে কিছু না খায় তবে মনে চিন্তা ও উদ্বেগ এসে জড়ো হয়। (সিনা; সালফার)। শরীরের মাংসক্ষয়, যদিও ক্ষুধার্ত এবং প্রচুর খাওয়া সত্ত্বেও (এব্রোটেনাম)।
উদর – যকৃৎ ও প্লীহা স্পর্শকাতর ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত। জন্ডিস। অন্ত্রমধ্যস্থ গ্রন্থি সমূহের বিবৃদ্ধি। প্যাঙক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় সম্পর্কিত রোগসমূহ। পেটে কেটে ফেলার মত তীব্র বেদনা।
মল — প্রতিবার মলত্যাগের সময় রক্তস্রাব। উদরাময়, মল সাদা, ফেনা ও চর্বিযুক্ত। কোষ্ঠকাঠিণ্য, তৎসহ অদম্য, নিষ্ফল বেগ; ঠান্ডা দুধ পানে উপশম। পর্যায়ক্রমে কোষ্ঠকাঠিণ্য ও উদরাময়। (এন্টিম ক্রুড)।
প্রস্রাব — বারে বারে ও প্রচুর পরিমানে, কালচে-হলুদসবুজ (বোভিষ্টা), গাঢ়, ঝাঁঝাল তৎসহ প্রস্রাবের উপর ভাসমান চামড়ার কনা।
পুরুষের রোগ – অন্ডদ্বয় স্ফীত ও কঠিন। হাইড্রেসিল। যৌনশক্তির স্বল্পতা, তৎসহ অন্ডদ্বয়ের শীর্ণতা।
স্ত্রীরোগ — মাসিক ঋতুস্রাবের সময় প্রচন্ড দুর্বলতা। (এলুমিনা, কার্বো এনিম্যালিস; ককিউলাস; হেমাটক্স)। ঋতুস্রাব অনিয়মিত, জরায়ু থেকে রক্তস্রাব। ডিম্বাশয়ের প্রদাহ। (এপিস, বেলেডোনা, ল্যাকেসিস। ডিম্বাশয় থেকে জরায়ু পর্যন্ত গোঁজ ফোঁটার মত বেদনা। স্তনগ্রন্থির শীর্ণতা স্তনের উপরের চর্মে গুটিসমূহ। ঝাঁঝাল প্রদরস্রাব, গাঢ়, পিচ্ছিল, কাপড়ের যে অংশে এই স্রাব লাগে তা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ডানদিকের ডিম্বাশয়ে গোঁজ ফোঁটার মত বেদনা ।
শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রসমূহ – স্বরভঙ্গ। কাঁচাভাব ও গলার ভিতর সুড়সুড়ির অনুভূতি, এর ফলে শূষ্ক কাশি দেখা দেয়। কণ্ঠনলীর বেদনা । কণ্ঠনলীর প্রদাহ, তৎসহ বেদনাদায়ক কর্কশতা; কাশির সময় বৃদ্ধি। শিশু কাশির সময়ে গলা চেপে ধরে। ডানদিকের ফুসফুসে নিউমোনিয়া তৎসহ প্রচুর গায়ের তাপ। বুক প্রসারনে কষ্ট, রক্তের ছিট যুক্ত থুথু; শরীরে অভ্যন্তরে শুষ্ক উত্তাপ কিন্তু বাইরে শীতল। ভয়ঙ্কর হৃদস্পন্দন। নিউমোনিয়া। ফুসফুসের যকৃতের মত কঠিনতা প্রাপ্তি অবস্থার দ্রুত প্রসারন ঘটে তৎসহ উচ্চ গাত্রতাপ; নানা প্রকার উপসর্গে আক্রন্ত হওয়া সত্ত্বেও বেদনা সেইরূপ থাকে না, গরমে বৃদ্ধি; ঠান্ডা বাতাস চায়। গন্ডমালা ঋতুদোষঘটিত শিশুদের ঘূংড়ি কাশি তৎসহ শিশুর চোখ ও চুলকালোবর্ণের। (বিপরীত ব্রোমিয়াম)। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। সকালে শুষ্ক কাশি, কণ্ঠনলীর ভিতর সুড়সুড়ি থেকে উৎপন্ন হয়। ঘুংড়ি কাশির মত কাশি তৎসহ কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস; বুকের ভিতর সাঁই সাঁই করে। মাথা থেকে গলা, তার পরে বায়ু কোষে, এইভাবে ঠান্ডা নিচের দিকে প্রসারিত হয়। বুকের ভিতরে প্রচন্ড দুর্বলতা। সামান্য পরিশ্রমে হৃদকম্প। বক্ষাবরক ঝিল্লীর ভিতরে তরল পদার্থের সঞ্চয়। সমগ্র বুকের ভিতর সুড সুড কর অনুভূতি। আয়োডামের কাশি, ঘরের ভিতরে থাকলে, উষ্ণতায়, ভিজে আবহাওয়ায় ও শুয়ে পড়লে বৃদ্ধি।
হৃদপিন্ড – হৃদপিন্ডে নিংড়ে ধরার মত অনুভূতি। মায়োকাডাইটিস, তৎসহ হৃদপিন্ডের চাড়িধারে পিষে ফেলার মত বেদনা। মনে হয় একটি লোহার হাতের দ্বারা হৃদপিন্ড নিংড়ানো হচ্ছে। (ক্যাক্টাস) এর পরে প্রচন্ড দুর্বলতা ও মূর্চ্ছাভাব। সামান্য পরিশ্রমে হৃর্দকম্প। নাড়ীর গতি স্বাবাভিক অবস্থা থেকে অনেক বেশি।
অঙ্গ-প্রতঙ্গ – সন্ধিসমূহ বেদনাময় ও প্রদাহিত। রাত্রে অস্থিতে বেদনা। স্ফীত অংশ সাদাবর্ণের হয়। গনোরিয়া যুক্ত বাতরোগ। ঘাড়ের গ্রীবা দেশেও অঙ্গের ঊর্ধ্বদেশে বেদনা। হাত-পা ঠান্ডা পায়ে ঝাঁঝাল ঘাম। হঠাৎ ধমনী সমূহের স্পন্দন। বাতজ বেদনা, রাত্রে সন্ধিস্থানে বেদনা; সঙ্কোচনের অনুভূতি।
চামড়া – উষ্ণ, শুষ্ক, হলুদ এবং কুঞ্চিত। গ্রন্থিসমূহের বিবৃদ্ধি। অস্থিগুলি। হৃদরোগ থেকে উদ্ভূত শোথ।
জ্বর – সমগ্র শরীরের উত্তাপের হল্কা। সুস্পষ্টজ্বর, অস্থিরতা, গাল লালবর্ণযুক্ত, উদাসীনতা। প্রচুর ঘাম।
কমা-বাড়া-বৃদ্ধি – যখন চুপচাপ থাকে, গরম ঘরে, ডানদিকে।
উপশম – হেঁটে চলে বেড়ালে, মুক্তবাতাসে।
সমন্ধ – কার্বলিক অ্যাসিডের সদৃশ্যযুক্ত।
দোষঘ্ন – হিপার; সালফার; গ্র্যাটিওলা।
পরিপূরক – লাইকোপোডিয়াম, ব্যাডিয়েগা।
তুলনীয় — ব্রোমিয়াম; হিপার; মার্কিউরিয়াস; ফসফরাস; এব্রোটেনাম; নেট্রাম মিউর, স্যানিকিউলা; টিউবার কিউলিনাম।
শক্তি – ৩ থেকে শক্তি ৩০ পর্যন্ত। (৩৫ গ্রেন পটাসিয়াম আয়োড, ৪ গ্রেন আয়োডিন, ১ আউন্স জলের সঙ্গে মিশিয়ে ১০ ফোঁটা করে দিনে তিনবার ব্যবহার করা হলে, ফিতাকৃমি মৃত অবস্থায় বেরিয়ে আসে।
বাহ্যিক ভাবে এটি একটি প্রচন্ড ক্ষমতাশালী, সামান্য মাত্রায় ক্ষতিকর এবং সহজে কাজে লাগে এই জাতীয় জীবানুনাশক। ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার এবং জীবানুনাশক হিসাবে আদর্শ ঔষধবিশেষ। পোকামাকড়, সরীসৃপ প্রভৃতির কামড়। বন্দুকের গুলি থেকে উৎপন্ন ক্ষত সমূহ এবং কম্পাউন্ড ফ্র্যাকচায়ের ক্ষেত্রে খুবই ভালো। চামড়ায় ব্যবহৃত ভালো জীবানুনাশক।
এই ঔষধটিতে, রোগ তরুণই হউক বা পুরাতন হউক, একপ্রকার অদ্ভুত উৎকণ্ঠা থাকে, তাহা শরীর ও মন দুইয়েতেই অনুভূত হয়। মনে হয়, যেন এই উৎকণ্ঠাযুক্ত অবস্থার সহিত, তাহার সারাদেহের মধ্যে একপ্রকার রোমাঞ্চভাব থাকে এবং সে সঞ্চালন বা অবস্থার পরিবর্তন দ্বারা উহা দূর করিতে বাধ্য হয়। স্থির হইয়া থাকিবার চেষ্টা করিলেই, তাহার উৎকণ্ঠা উপস্থিত হয়, আর যে যত বেশী স্থির থাকিতে চেষ্টা করে, তাহার উৎকণ্ঠাপূর্ণ অবস্থাও ততই বাড়িতে থাকে। যখন সে স্থির থাকিবার চেষ্টা করে, সে বিশেষ প্রকার আবেগে অভিভূত হইয়া পড়ে। জিনিষ ছিঁড়িয়া ফেলিবার আবেগ, আত্মহত্যা করিবার, খুন করিবার, মারধোর করিবার আবেগ। সে স্থির থাকিতে পারে না এবং সেইজন্য দিবারাত্রি ঘুরিয়া বেড়ায়। এই লক্ষণটি ‘পটাশিয়াম আইওডায়েড’ পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং সেইজন্য পটাশিয়াম আইওডায়েড’ রোগীও ঘুরিয়া বেড়ায়। কিন্তু এস্থলে এই পার্থক্য আছে, ক্যালি আইওডে’র রোগী ক্লান্ত না হইয়া অনেক দূর হাঁটিতে পারে, হাঁটিলেই যেন তাহার উৎকণ্ঠা দূর হয়, কিন্তু আইওডিনে অত্যন্ত অবসন্নতা থাকে, সে হাঁটিয়া অত্যন্ত অবসন্ন হইয়া পড়ে এবং সামান্য পরিশ্রমে অত্যন্ত ঘামে। আইওডিন সেই সব রোগীর পক্ষে উপযোগী, যাহারা মনে করে যে, ভয়ঙ্কর কিছু ব্যাপার উপস্থিত হইতে চলিয়াছে, এবং তাহাদের মন অবসন্ন হইয়া পড়ার মত হয়। উন্মাদ রোগের আশঙ্কা দেখা দেয়। অথবা অন্য কোন গুরুতর রোগের আশঙ্কা জন্মে, যেরূপটি চাপাপড়া ম্যালেরিয়ার অগ্রসর অবস্থায়, কম্পজ্বরের পুরাতন রোগীদের, যক্ষ্মা সম্ভাবনাময়, বিশেষতঃ উদরের ক্ষয়রোগে বর্তমান থাকিতে দেখা যায়।
এই ঔষধটির আগাগোড়া অতিবৃদ্ধি আছে। যকৃৎ, ডিম্বকোষ, অন্ড, লসিকাগ্রন্থিগুলির বৃদ্ধি, কেবলমাত্র স্তনগ্রন্থিগুলি বর্ধিত হয় না। স্তন শুষ্ক হইতে থাকে এবং অন্যান্য গ্রন্থিগুলি বর্ধিত হইতে থাকে, ডেলার মত ও কঠিন হয়। এই গ্রন্থিবৃদ্ধি বিশেষভাবে উদরের লসিকাগ্রন্থিগুলিতে ও মধ্যান্তত্বগ্রন্থিগুলিতেই দেখা যায়।
আইওডিনে আর একটি অদ্ভুত অবস্থা আছে, যথা—শরীর যতই শীর্ণ হইতে থাকে, গ্রন্থিগুলি ততই বাড়িতে থাকে। ইহা বাস্তবিকই অদ্ভুত এবং তোমাদিগকে আইওডিনের কথা মনে করাইয়া দিবে, কারণ শরীরের ক্ষয়প্রাপ্তি এবং অঙ্গাদির সহিত সমানুপাতে গ্রন্থিগুলি বর্ধিত হইতে থাকে। আমরা এইরূপ অবস্থা পুঁয়ে পাওয়া রোগে দেখিতে পাই। সমস্ত শরীর শুকাইতে থাকে। পেশীগুলি শুষ্ক হয়, চৰ্ম্ম কুঞ্চিত হইয়া পড়ে, শিশুর মুখমন্ডল একটি ক্ষুদ্র বৃদ্ধ লোকের মত দেখায়, বগলের, কুঁচকিস্থানের এবং উদরের গ্রন্থিগুলি বৰ্দ্ধিত ও শক্ত হইতে থাকে। মধ্যান্তত্বগ্রন্থিগুলিতে কতকগুলি গাঁটের মত অনুভূত হইতে থাকে। আমরা পুরাতন ম্যালেরিয়াগ্রস্ত ব্যক্তিদের, যাহারা এলোপ্যাথদিগের নিকট হইতে প্রচুর কুইনাইন’ ও ‘আর্সেনিক খাইয়াছে, কিন্তু জ্বরটি থাকিয়াই গিয়াছে, মুখমন্ডল ও শরীরের উপর অংশ শুকাইয়া গিয়াছে, চৰ্ম্ম কুঞ্চিত ও হলদে হইয়া পড়িয়াছে, তাহাদের মধ্যেও এইরূপ প্রবণতা দেখিতে পাই। তাহাদের উদরাময় দেখা দেয়। প্লীহা ও যকৃৎ বাড়িয়া উঠে এবং উদরের লসিকাগ্রন্থিগুলিকে হাতে অনুভব করা যায়। এমনকি ইহার পূর্বেকার অবস্থায়, যখন এরূপ অবস্থার আশঙ্কামাত্র দেখা দিয়াছে, তখনও আমরা আশা করিতে পারি এবং দেখিতে পাই যে, রোগীটি আইওডিন-জ্ঞাপক অবস্থার দিকে অগ্রসর হইতেছে।
এখন একটি রোগীর কথা বিবেচনা কর, সে ম্যালেরিয়াজনিত বা স্যাঁৎসেঁতে ঘরে বাস করার জন্য সবিরাম জ্বরে ভুগিতেছে। সে বৰ্দ্ধিতভাবে উত্তাপযুক্ত হইতে লাগিল, উহা সর্বদাই জ্বরের উত্তাপ নহে, কিন্তু একপ্রকার উত্তাপের অনুভূতি; সে ঠান্ডা জলে স্নান করিতে চায়, ভিজা গামছা দিয়া মুখ ও দেহ ঠান্ডা করিতে চায়, তাহার গরম ঘরে শ্বাসরুদ্ধভাব এবং কাশি দেখা দেয়, উত্তাপকে ভয় করে, সহজেই ঘামে এবং সহজেই অবসন্ন হইয়া পড়ে। এইরূপ ধাতুতে নানা তরুণ রোগ উপস্থিত হইতে পারে, যথা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর তরুণ প্রদাহ, পাকাশয়-প্রদাহ, যকৃৎপ্রদাহ, প্লীহা-প্রদাহ, উদরাময়, ক্রুপ কাশি, গল-প্রদাহ। এমনকি গলা সাদা সাদা দাগে আবৃত হয়, এবং ফুলে ও লাল হয় এবং নীচের দিকে কণ্ঠনলী পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত হয়, এমনকি ঐ স্থানে ডিপথেরিয়ার ন্যায় সঞ্চিত পদার্থও জন্মিতে পারে। আইওডিন ডিপথেরিয়া আরোগ্য করিয়াছে, ঐ ক্ষেত্রে মলের মধ্যে ডিপথেরিয়ার আঠা আঠা স্রাবের ন্যায় স্রাব বর্তমান ছিল। এইরূপ ধাতুতে আঠা আঠা স্রাবের সহিত তক্রুপ কাশি দেখা দিতে পারে এবং আমরা দেখিতে পাই যে, উহা আইওডিনের দিকে যাইতেছে। শরীরের প্রত্যেক স্থানেই অদ্ভুত রকমের ছোট ছোট উদ্ভেদ প্রকাশ পায়। আমরা যদি এই ঔষধের ধাতুগত অবস্থা ভালভাবে বুঝিতে না পারি, তাহা হইলে রোগী যখন খারাপের দিকে যাইতে থাকে, তখন তাহার প্রবণতাটিও বুঝিতে পারিব না।
এইরূপ রোগীর মানসিক অবস্থা উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা, আবেগ, ও বিষাদযুক্ত হয়, সে কিছু -কিছু করিতে চায়, সে সবকিছুতেই তাড়াতাড়ি করে, তাহার খুন করিবার ঝোঁক হয়। এই বিষয়ে ইহা আর্সেনিকাম’ ও ‘হিপারের সুহিত খুব নিকট সম্বন্ধযুক্ত। আর্সেনিকাম’ ও ‘হিপারের রোগীও বিনা দোষে ও বিনা কারণে হত্যা করিবার খেয়াল চাপে। কিন্তু উত্তাপে অনুভূতি প্রবণতা সহজেই পার্থক্য সম্বন্ধে মীমাংসা করিয়া দিবে, কারণ আইডিনের রোগীর রক্ত গরম, আর আর্সেনিকাম’ ও ‘হিপারের রোগী সর্বদাই শীতার্ত থাকে। তাহার প্রচন্ড কিছু করিবার ঝোঁক হঠাৎ উপস্থিত হয়। এমন অনেকগুলি ঔষধ আছে, যাহাতে অদ্ভুত অদ্ভুত খেয়াল জাগে, বিনা কারণে খেয়াল জাগে। এইরূপ খেয়াল খেয়ালবিশিষ্ট উন্মাদনায় দেখা যায়, ইহাতে রোগীর মারধোর করিবার, অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করিবার প্রবৃত্তি জাগে, কিন্তু যখন রোগীকে জিজ্ঞাসা করা যায় যে, কেন সে এইরূপ করিতেছে, সে বলে যে, সে তাহা জানে না। অন্য কোন বিষয়ে ঐ রোগীকে উন্মাদ বলিয়া মনে হয় না, সে হয়ত একজন ভাল ব্যবসাদার হইতে পারে। অনেক ঔষধে ইহাও আছে। এই লক্ষণগুলি প্রকৃত উন্মত্ততার অগ্রদূত। “হিপারের মধ্যে লিখিত আছে যে, একজন নাপিতের তার পৃষ্ঠপোষককে কামাইবার সময় ক্ষুর দিয়া তাহার গলা কাটিয়া দিবার ঝোঁক হইয়াছিল। নাক্স ভমিকা’র রোগিণীর নিজের শিশুকে আগুনে নিক্ষেপ করিবার এবং যে স্বামীকে তিনি ভালবাসেন, তাহাকেই হত্যা করিবার ঝোঁক জন্মে। এই চিন্তা তাঁহার মনে উপস্থিত হয় এবং বাড়িতে থাকে, তারপর তিনি সত্য সত্যই পাগল ও শাসনের অতীত হইয়া পড়েন এবং খেয়ালটি কার্যে পরিণত করিতে চেষ্টা করেন। নেট্রাম সালফে’র রোগী বলিবে, “ডাক্তার, আপনি জানেন না যে, কিভাবে আমাকে আত্মহত্যার ঝোঁককে দমন করিতে হয়। ঐরূপ করিবার একটি ঝোঁক আমার মধ্যে আসিয়া পড়িবেই।” আইওডিনের মধ্যেও ঐরূপ হত্যা করিবার ঝোঁক চাপে, ক্রোধ হইতে নহে, কোনরূপ বিচারবুদ্ধি হইতে নহে, কিন্তু একেবারে বিনা কারণে। বিভ্রান্তিকর ক্রোধ অনেক সময়ে প্রচন্ড কিছু করার কারণ হইয়া থাকে, কিন্তু আইওডিনের খেয়াল ঐ রকমের নহে। স্থিরভাবে পড়িতেছে বা চিন্তা করিতেছে, এরূপ সময়েও তাহার মারধোর করিবার প্রবৃত্তি জাগিতে পারে এবং এইভাব বাড়িয়া উহা খেয়ালযুক্ত উন্মাদ রোগে পরিণত হইতে পারে।
আইওডিনের রোগী শরীর ও মন উভয়দিক হইতেই দুর্বল হইয়া পড়ে; সে বিস্মৃতি পরায়ণ হয়, সামান্য সামান্য ব্যাপারগুলিও মনে রাখিতে পারে না, ঐগুলি মন হইতে বাহির হইয়া যায়। সে যাহা বলিতে বা করিতে যাইতেছিল তাহা ভুলিয়া যায়, সে বাজারে যায় এবং যে-জিনিষগুলি কিনিয়াছিল তাহার পুটুলিগুলি ফেলিয়া আসে। তাহার এই ভুল ভাবটি বিস্তৃত। কিন্তু এই সকল অবস্থার সহিতও সে এই একটি বিষয় ভুলে না যে, উৎকণ্ঠা এবং খেয়াল দূর করিবার জন্য তাহাকে কিছু-না-কিছু করিতেই হইবে। যদি সে কাজ লইয়া না থাকে, তাহার উৎকণ্ঠা শ্রান্তিজনক ও কষ্টকর হইয়া উঠে। মানসিকভাবে অবসন্ন থাকিয়াও, তাহাকে সবসময়েই কর্মব্যস্ত থাকিতে হয়, কিছু-না-কিছু করিতে থাকিতে হয়, এবং তাহাতে তাহার মানসিক অবসন্নতা আরও বাড়ে। অতি পরিশ্রমে উৎকণ্ঠায় ও সাহিত্যচর্চায়, মস্তিষ্কের কোমলতা রোগের আশঙ্কাযুক্ত কোন ব্যক্তিকে তুমি বল যে, “আপনাকে কাজ বন্ধ করিতে ও বিশ্রাম লইতে হইবে।” সে বলিবে, “সেকি, যদি আমি তাহা করি, তাহা হইলে হয় মরিয়া যাইব, নচেৎ পাগল হইয়া যাইব।” এরূপ অবস্থা আইওডিন ও আর্সেনিকামে’ উপস্থিত হয়, কিন্তু একটি বিরাট পার্থক্য আছে, উহা দ্বারা ঔষধ দুইটি সম্পূর্ণ পৃথক হইয়া পড়ে। আইওডিনের রোগীর রক্ত গরম, চলাফেরা করিবার জন্য চিন্তা করিবার জন্য, কাজ করিবার জন্য সে ঠান্ডা স্থান খোজে, কিন্তু আর্সেনিকামে’র রোগী উত্তাপ চায়, গরম ঘরে থাকিতে চায়, গরম কাপড়-চোপড় চায় এবং ঠান্ডাতে কষ্ট পাইতে থাকে। আইওডিন উত্তাপে কষ্ট পায়। সুতরাং উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা, এবং উহা শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবে দুইটি ঔষধের প্রত্যেকটির মধ্যে থাকিলেও এবং দুইটিকে একরূপ মনে হইলেও, রোগী যদি গরম রক্তবিশিষ্ট হয়, তাহা হইলে আমরা কখনই ‘আর্সেনিকামে’র কথা চিন্তা করিব না, আর যদি রোগী শীতল রক্তবিশিষ্ট ও শীতে কম্পমান হয়, তাহা হইলে কখনও আইওডিনের কথা চিন্তা করিব না।
সৰ্বাঙ্গীণ লক্ষণগুলির মধ্যে আমরা গ্রন্থিসমূহের বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতার কথা পূর্বেই বলিয়াছি। আমি যেরূপ ধাতুর কথা বলিয়াছি, তাহাতে উৎপন্ন অনেকগুলি রোগ আইওডিন দ্বারা আরোগ্য হইতে পারে, যথা—হৃৎপিন্ডের বৃদ্ধি, থাইরয়েড গ্রন্থির বৃদ্ধি, চক্ষুগোলকের বহির্নিগমন। তারপর, তুমি যেন এইরূপ একটি রোগী পাইলে (মনে কর, একজন লোক রোগীটিকে পাঠাইয়াছে এবং সে বহির্নিগত চক্ষুগোলকযুক্ত গলগন্ড নামটি ছাড়া আর কিছুই জানে না)। দশজনে যেরূপ বলে ঐরূপ রোগটির একটি নামকরণে বিশেষ আবশ্যকীয় হইলেও, নামকরণের দ্বারাই ঔষধ নির্বাচন করা যাইবে না, ঔষধ নির্বাচনের সূত্র পাওয়া যাইবে সেইসব লক্ষণের মধ্যে, যাহা আমি পূর্বে জানাইয়াছি; ঐ লক্ষণগুলি, যথা—চক্ষুগোলকের বহির্নিগমন, থাইরয়েড গ্রন্থির বিবৃদ্ধি, হৃৎপিন্ডের বিবৃদ্ধি এবং হৃৎপিন্ড সম্বন্ধীয় উপদ্রবসমূহ। তারপর, রোগী যদি শীর্ণ হয়, পান্ডুরবর্ণ হয়, উত্তাপে কষ্ট বোধ করে, তাহার গ্রন্থিগুলি বর্ধিত থাকে এবং তাহার মধ্যে এই ঔষধের অন্যান্য লক্ষণও থাকে, তাহা হইলে তুমি এই ঔষধটি দিয়া আশা করিতে পার যে, রোগের নামজ্ঞাপক লক্ষণসমষ্টিও ক্রমে সম্পূর্ণভাবে নিবৃত্ত হইয়া যাইবে।
তরুণ ও পুরাতন উভয়বিধ মস্তিষ্ক রোগেই, সময়ে সময়ে আইওডিনের প্রয়োজন হয়। মাথার মধ্যে দপদপ করে, দেহের মধ্যে দপদপ করে, সারা দেহে স্পন্দন অনুভূত হয়, ঐ স্পন্দন হাতের আঙ্গুলের ডগা ও পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, উদরগহ্বরের মধ্যে দপদপ করে, বাহুদ্বয়ে গুরুতর স্পন্দন অনুভূত হয়, পৃষ্ঠে স্পন্দন অনুভূত হয়, শঙ্খস্থানে হাড়ের মধ্যে দপদপ্ করে। ভীষণ যন্ত্রণাবিশিষ্ট, রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া থাকে। মাথার যন্ত্রণা সঞ্চালনে বৰ্দ্ধিত হয়, কিন্তু সাধারণভাবে রোগী সঞ্চালনে উপশম পায়। সঞ্চালনে তাহার উৎকণ্ঠার উপশম হয় বলিয়া সে নড়ে, কিন্তু ঐরূপ নড়াচড়াতেই তাহার মাথার যাতনা, এবং স্পন্দন বাড়িতে থাকে। এইরূপ ক্ষেত্রে প্রভেদ নির্ণয় প্রয়োজন। মেটিরিয়া মেডিকা পাঠকালে রোগী সম্বন্ধে যাহা বলা হইয়াছে। এবং তাহার অঙ্গবিশেষ সম্বন্ধে যাহা বলা হইয়াছে, তাহার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা আবশ্যক। রোগী সম্বন্ধে যাহা বলা হয়, তাহা সৰ্বাঙ্গীণ লক্ষণ এবং তাহার অঙ্গবিশেষ সম্বন্ধে যাহা বলা হয় তাহা বিশেষ লক্ষণ। এই দুই প্রকারের লক্ষণ বিপরীত হইতে পারে, এইজন্য মেটিরিয়া মেডিকা পাঠকারী ছাত্র অনেক সময়ে বিভ্রান্ত হইয়া পড়ে, কারণ সে দেখে যে, একই ঔষধের মধ্যে সঞ্চালনে বৃদ্ধি ও সঞ্চালনে উপশম দুইই লিখিত আছে। একমাত্র মেটিরিয়া মেডিকার সূত্র অর্থাৎ ঔষধ পরীক্ষা হইতে এবং ঔষধটি কার্যক্ষেত্রে ব্যবহার করিয়া আমরা বুঝিতে পারি যে, কোন কথাটি রোগীর বিশেষ অঙ্গ সম্বন্ধে সত্য এবং কোন কথাটি সৰ্ব্বাঙ্গীণভাবে রোগীর পক্ষে সত্য। আমরা দেখিতে পাই যে, সময়ে সময়ে রোগী গরম ঘরে থাকিয়া, মাথাটিতে উপশম পাইবার জন্য জানালা দিয়া বাহির করিয়া রাখে। ইহা ফসফরাসে’র একটি আদর্শ লক্ষণ; উহাতে মস্তক ও পাকস্থলীর লক্ষণ ঠান্ডায় উপশমিত হয়, কিন্তু বক্ষ ও দৈহিক লক্ষণ ঠান্ডার বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। সুতরাং যদি ফসফরাসের রোগী বমি করিতে থাকে এবং শিরঃপীড়াযুক্ত হয়, তাহা হইলে সে বলিবে, “আমি মুক্তবাতাসে ঘরের বাহিরে যাইতে চাই, আমি পাকস্থলীতে ঠান্ডা জিনিষ পাইতে চাই।” কিন্তু তাহার যদি বক্ষরোগ থাকে অথবা হাতে-পায়ে বেদনা থাকে, তাহা হইলে সে বলিবে, “আমি ঘরের মধ্যে যাইতে চাই এবং গরমে থাকিতে চাই।” আমরা রোগীদের মধ্যে যেমন এইরূপ ব্যাপার দেখি, ঔষধ পাঠকালে ঔষধগুলির মধ্যেও তেমনটিই দেখিতে পাই, আমাদিগকে প্রভেদ নির্ণয় করিতে হইবে।
তোমরা এরূপ আশা করিতে পার যে, ঐরূপ দুর্বলীভূত ধাতুতে নানাপ্রকার চক্ষুরোগ বর্তমান থাকিবে। তথাকথিত গন্ডমালাদোষজনিত চক্ষুরোগ, তৎসহ কনীনিকায় ক্ষত, সর্দিজ উপদ্রব, চক্ষু হইতে স্রাব, চক্ষুপত্রের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রন্থিগুলির বৃদ্ধি, পূর্ণবর্ণিতরূপ শীর্ণতা ও হলদে আকৃতিযুক্ত ধাতুতে দেখা দিতে পারে। উজ্জ্বল বর্ণগুলি সম্বন্ধে দৃষ্টিবিভ্রম। আইওডিনের সংস্রবে। একপ্রকার স্ফীতিজনক অবস্থাও আছে। চক্ষুপাতার শোথের ন্যায় স্ফীতি এবং চক্ষুর নিম্নবর্তী মুখমন্ডলের শোথের ন্যায় স্ফীতি। আইওডিনে হাত ও পায়ের শোথের ন্যায় স্ফীতি আছে এবং এই প্রবণতাটি ‘আইওডায়েড অব পটাশিয়ামের মধ্যেও বিস্তৃত হইয়াছে। মূত্রপিন্ডের রোগে আমরা যেরূপ শোথের ন্যায় স্ফীতি দেখিতে পাই, উহাতে সেইরূপ শোথের ন্যায় স্ফীতি আছে। প্রথম অবস্থায় ইহা ব্রাইটাখ্যরোগ নিবারণ করিতে পারে।
আইওডিনের রোগগুলির মধ্যে আর একটি বিরাট সর্বব্যাপী লক্ষণ—ক্ষুধা। সে সর্বদাই ক্ষুধার্ত থাকে। সাধারণ এবং নিয়মিত খাদ্য খাইয়া তাহার তৃপ্তি হয় না। যে দুইবার আহারের সময়ের মধ্যবর্তী কালেও খায়, কিন্তু তবুও তাহার ক্ষুধা মেটে না। অধিকন্তু, আহারের পর। তাহার উপসর্গগুলি উপশমিত থাকে। আইওডিনের সর্বপ্রকার ভয়, উৎকণ্ঠা এবং কষ্ট ক্ষুধার্ত হইলে বাড়ে। পাকস্থলী খালি থাকিলে উহাতে যন্ত্রণা উপস্থিত হয় এবং সেইজন্য সে খাইতে বাধ্য হয়। খাইবার সময় সে তাহার উপসর্গগুলির কথা ভুলিয়া যায়, কারণ আহার করাও একটা কাজ, উহাও একপ্রকার সঞ্চালন, উহাতেও তাহার মন একটা কিছুতে নিবিষ্ট থাকে। সেইজন্য সে আহারকালে উপশম পায় এবং যে-কোনরূপ সঞ্চালনেই সে উপশম পায়। কিন্তু এত খাওয়া। সত্ত্বেও সে ক্রমশঃ শীর্ণ হইতে থাকে। হেরিংয়ের key-notes গ্রন্থে আইওডিন সম্বন্ধে লেখা আছে, “ভালরূপ খাওয়া সত্ত্বেও সে শীর্ণ হইতে থাকে।” “নেট্রাম মিউর’ এবং ‘এব্রোটেনামেও যথেষ্ট ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও শীর্ণ হইয়া যাওয়া আছে। রোগীর সমীকরণক্রিয়া এতই বিশৃঙ্খল যে, মাংস গঠন হয় না এবং সেই হেতু সে শীর্ণ হইতে থাকে।
নাকের সর্দিজ অবস্থা লক্ষ্য করিবার মত। আইওডিনের রোগীর ঘ্রাণশক্তি লোপ পায়। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীগুলি পুরু হইয়া উঠে, সামান্য কারণেই তাহার সর্দি লাগে। সে সর্বদা হাঁচিতে থাকে এবং নাক হইতে প্রচুর জলবৎ স্রাব নির্গত হইতে থাকে। নাকের মধ্যে ক্ষত জন্মে, তাহার উপর রক্তাক্ত মামড়ী পড়ে, সে নাক ঝাঁড়িলে রক্ত বাহির হয়। নাক বুজিয়া যায়, সেইজন্য সে নাক দিয়া নিঃশ্বাস লইতে পারে না। যতবার তাহার ঠান্ডা লাগে এইরূপ ভাব ততই বাড়িতে থাকে এবং তাহার সর্বদাই সর্দি লাগিতে থাকে, ফলে সে স্থায়ীভাবে সর্দির রোগী হইয়া পড়ে। আমি তাহার সাধারণ অবস্থা বর্ণনা করিলাম, কিন্তু রোগীর কথাই প্রথমে চিন্তা করিতে হইবে। তাহার ধাতুগত অবস্থাই সর্বপ্রথম জানিবার বিষয় অর্থাৎ মানুষ হিসাবে রোগীটির সম্বন্ধে কি কি সত্য তাহাই প্রথমে জানিতে হইবে। তারপর তাহার অঙ্গগুলির প্রত্যেকটি সম্বন্ধে কি কি সত্য, খুঁজিয়া দেখিতে হইবে। নাসিকার শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী সর্বদাই ক্ষতযুক্ত অথবা ক্ষত জন্মিবার প্রবণতাযুক্ত থাকে। সময়ে সময়ে এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষতগুলি গভীরও হয়।
জিহ্বা বরাবর এবং মুখের মধ্যে সর্বত্র তালিতালি জাড়ি ঘা। সমগ্র মুখ গহ্বরটি তালিতালি উপক্ষতে বোঝাই থাকে। আমি ইতিপূর্বে নিঃস্রাব নির্গমন প্রবণতার কথা বলিয়াছি; ক্ষতযুক্ত গলায়, নাকের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর সর্বত্র এবং সমগ্র গলনলীতে সাদা ভেলভেটের ন্যায়, বা ধূসরাভ সাদা বা ফিকে পাংশুটে রংয়ের আঠা আঠা নিঃস্রাব জমে। গলনলী ভেলভেটের ন্যায় ছাইবর্ণ লেপ দ্বারা আবৃত বোধ হয়। এই সকল লক্ষণ এবং ক্ষতোৎপত্তি প্রবণতার সহিত এই ঔষধের গলরোগসমূহে বিস্তৃত অধিকার আছে। পূর্ববর্ণিত ধাতু ও টনসিল দুইটি আঠা আঠা নিঃস্রাবে আবৃত থাকিলে, ইহা টনসিল-বৃদ্ধি রোগে উপযোগী। ক্ষুধার্ত শীর্ণতাপ্রাপ্ত রোগীদিগের টনসিল বৃদ্ধি। আমরা প্রায়ই দেখি যে, যে-সকল লোক টনসিলপ্রদাহের অধীন হয়, তাহারা আইওডিনজ্ঞাপক অবস্থার দিকে যাইতে থাকে। সে ‘পালসেটিলা’র রোগীর ন্যায় সর্বদাই উত্তাপে কষ্ট পায়; সময়ে সময়ে, প্রাথমিক অবস্থায়, কোন যান্ত্রিক পরিবর্তন দেখা দিবার পূর্বে তোমরা আইওডিনের পরিবর্তে পালসেটিলা’ দিয়া ভুল করিতে পার। কিন্তু তোমরা রোগীকে পর্যবেক্ষণ করিলে, তাহার শীর্ণতাপ্রাপ্তি প্রবণতা লক্ষ্য করিতে পারিবে এবং শীঘ্রই দেখিবে যে, দুইটি ঔষধের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হইতেছে। পালসেটিলা’র রোগী আরও অনেক বেশী খেয়ালী, আরও বেশী ক্রন্দনশীল, অত্যন্ত বিমর্ষ এবং তাহার সর্বদাই ক্ষুধামান্দ্য থাকে, কিন্তু আইওডিনের রোগী যথেষ্ট খাইতে চায়। পালসেটিলা’র রোগী প্রায়ই মোটাসোটা থাকে, যদিও সে ক্রমশঃ অধিক স্নায়বিক হইতে থাকে। আইওডিনের রোগী ক্রমশঃ শীর্ণ হয়। তাহার রাক্ষুসে ক্ষুধা থাকে, খাইয়া শান্তি হয় না, ক্ষুধায় কষ্ট পায়, তাহাকে কয়েক ঘন্টা পরে পরেই খাইতে হয় এবং খাওয়ার পরে ভাল বোধ করে, তারপর, তাহার যথেষ্ট তৃষ্ণা থাকে। যদি সে কিছুক্ষণ খাইতে না পায়। তাহার রোগ যাহাই হউক না কেন, কষ্টভোগ বাড়িয়া উঠে। আইওডিনের যে-কোন রোগ উপবাসে বৃদ্ধিযুক্ত হয়।
আইওডিনে অতিভোজনের ফলে উপস্থিত হয়, এরূপ একপ্রকারের অজীর্ণরোগ আছে। খাদ্য পাকস্থলীতে টক হইয়া উঠে, তাহার টক উদ্গারে কাট হইতে থাকে, যথেষ্ট পেটফাপ ও ভেঁকুর দেখা যায়, অজীর্ণ মলের সহিত উদরাময়, জলের মত, পনিরের ন্যায় মল দেখা যায়, এবং ক্রমশঃ হজমশক্তি কমিতে থাকে। তাহার হজমক্রিয়া ক্রমশঃ দুর্বল হইতে থাকে এবং অবশেষে সে কিছুই হজম করিতে পারে না, কিন্তু তথাপি তাহার খাদ্যপ্রবৃত্তি বাড়িতে থাকে। তাহার বমি, হয়, উদরাময় দেখা দেয় এবং সেইজন্য সে ক্রমশঃ শীর্ণ হইতে থাকে, কারণ অবস্থাটি যেন মোমবাতির দুইধারেই জ্বালাইয়া দেওয়ার ন্যায় হয়। সে যে অত্যন্ত দুর্বল হইয়া পড়ে ইহাতে বিস্ময়ের কিছু নাই, কারণ সে যাহা খায়, তাহার সামান্যই হজম করিতে পারে, পাকস্থলী ও অন্ত্রের গোলযোগ সৃষ্টি করিবার জন্য খাদ্যবস্তুগুলি যেন বিসদৃশ পদার্থ হইয়া পড়ে। তারপর এই উপদ্রব চলিতে চলিতে, তাহার যকৃৎ ও প্লীহা কঠিন ও বর্ধিত হইয়া পড়ে এবং রোগী ন্যাবারোগগ্রস্ত হয়। তাহার মল কঠিন, ডেলাডেলা এবং সাদা বা বর্ণহীন অথবা মাটির বর্ণ, কখন কখন নরম এবং খকখকে হয়, মনে হয়, যেন উহার মধ্যে পিত্ত নাই। এই অবস্থা ক্রমে আরও বাড়িয়া যকৃৎ-বিবৃদ্ধিরোগ জন্মে। অবশেষে উদরটি ভিতরদিকে ঢুকিয়া গিয়া যকৃতের বৃদ্ধি এবং লসিকাগ্রন্থিসমূহের বৃদ্ধি বহিঃপ্রকাশিত হইয়া পড়ে। লসিকাগ্রন্থিগুলি গাঁট গাঁট এবং মধ্বান্ত্রত্বচগ্রন্থিগুলির অনুরূপ কঠিন হইয়া পড়ে, তৎসহ, উদরাময়, অতিক্ষুধা, অত্যধিক তৃষ্ণা, স্তনগ্রন্থিগুলির শুষ্কতা, চৰ্ম্মের শুষ্ক গো-মাংসের ন্যায় শুষ্ক আকৃতি এবং বিবর্ণতা দেখা দেয়। যদি ঔষধটি প্রথম অবস্থায় কোন যান্ত্রিক বিকার উপস্থিত হওয়ার পূর্বে দেওয়া যায়, তাহা হইলে এইরূপ রোগের অগ্রগতি রুদ্ধ হয় এবং রোগী আরোগ্য হইয়া উঠে।
ইহা শীর্ণ, গন্ডমালাদোষদুষ্ট শিশুদিগের পুরাতন প্রাতঃকালীন উদরাময়ে উপযোগী। ‘যদি এইরূপ ধাতুগত অবস্থা বর্তমান থাকে, তাহা হইলে রোগীর যেরূপ নানা রকমের মল, হওয়া সম্ভব, তাহার জন্য প্রথমে এই ঔষধটিই ব্যবস্থেয়। সুতরাং যদি তোমরা স্পষ্ট ধাতুগত, অবস্থা পাও, যদি রোগীর এই ঔষধটির সহিত সংযুক্ত হইবার মত অনেকগুলি সাধারণ লক্ষণ। বর্তমান থাকে, তাহা হইলে উদরাময় সম্পর্কিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লক্ষণগুলি অপ্রয়োজনীয় হইয়া পড়ে। রোগীর ধাতুগত অবস্থা বলিতে তাহার “আশ্চৰ্য্য, অসাধারণ এবং অদ্ভুত” লক্ষণগুলি বুঝায়। যদি ধাতুগত অবস্থা এই ঔষধের অনুরূপ হয়, তাহা হইলে ইহা দ্বারা, যে-কোনপ্রকার মলবিশিষ্ট উদরাময় আরোগ্য হইবে। যদি তরুণ উদরাময় হয়, এবং বলিষ্ঠ লোকের হয়, এবং একমাত্র উদরাময় ছাড়া আর কোন লক্ষণই পাওয়া না যায়, তাহা হইলে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিশেষ লক্ষণগুলি জানা আবশ্যক হয় এবং উদরাময়ের লক্ষণগুলি অসাধারণ “আশ্চৰ্য্য” এবং “অদ্ভুত” লক্ষণ হইয়া যায়।
বৃদ্ধ লোকদিগের অবারিত মূত্র। এই সকল ধাতুগত লক্ষণবিশিষ্ট পুরুষদিগের যখন অন্ডকোষ শুকাইয়া ধ্বজভঙ্গ দেখা দেয়, স্বপ্নে শুক্রক্ষয় হইতে থাকে এবং সঙ্গমপ্রবৃত্তি ও সঙ্গমশক্তি লোপ পাইয়া যায়, অথবা একপ্রকার উপদাহবিশিষ্ট অবস্থার সহিত সঙ্গমপ্রবৃত্তি বাড়িয়া উঠে, অথবা অন্যান্য গ্রন্থির ন্যায় অন্ডদুইটিও বর্ধিত এবং শক্ত, কঠিনতাপ্রাপ্ত ও অতিবৃদ্ধিযুক্ত হইয়া পড়ে, অথবা যখন একশিরা এবং অন্ডের বৃদ্ধি ও প্রদাহ উপস্থিত হয়, তখন আইওডিন বিশেষভাবে উপযোগী।
* জরায়ু ও ডিম্বকোষের স্ফীতি ও কঠিনতাপ্রাপ্তি। আমি যেরূপ ধাতুর বিষয় বর্ণনা করিয়াছি, ঐরূপ ধাতুতে ডিম্বকোষের অর্বুদ আইওডিন দ্বারা আরোগ্য হইয়াছে। ইহা স্তনগ্রন্থিসমূহের শুষ্কতা আরোগ্য করিয়া এবং শীর্ণতাপ্রাপ্ত রোগীদের মাংসবৃদ্ধি করিয়া, স্তনদ্বয়কে পুষ্ট করিয়াছে।
ইহার সর্দি উৎপন্ন করিবার প্রবণতার আর একটি উদাহরণ, প্রদরস্রাব উৎপাদন। জরায়ুগ্রীবার স্ফীতি ও কঠিনতাপ্রাপ্তির সহিত জরায়ু প্রদরস্রাব। জরায়ু বর্ধিত, স্বল্প ঋতুস্রাবের প্রবণতাযুক্ত। প্রদরস্রাবে ঊরুদ্বয় ক্ষততাযুক্ত হয়। আইওডিনের স্রাব মাত্রেই ক্ষতকর। নাকের স্রাবে ওষ্ঠ হাজিয়া যায়। চক্ষুর স্রাবে গন্ডস্থল হাজিয়া যায়, জরায়ুস্রাবে উরুদ্বয় হাজিয়া যায়। প্রদরস্রাব ঘন, পিচ্ছিল এবং সময়ে সময়ে রক্তাক্ত। “পুরাতন প্রদরস্রাব, ঋতুকালে অত্যধিক, উহাতে ঊরুদ্বয় ক্ষততাযুক্ত হয়, বস্ত্র ক্ষয়িয়া ফুটা হইয়া যায়।”
এই ঔষধে একপ্রকার কাশি আছে, উহা প্রবলভাব ধারণ করে, ইহাতে প্রবল ও সাঙ্ঘাতিক। শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে। বক্ষ-লক্ষণের সহিত শ্বাসকৃচ্ছ্রতা। ক্রুপ কাশি সদৃশ শীর্ণ ব্যক্তিদের শ্বাসরোধকর কাশি। আমি আবার বলিতেছি, এই সকল শ্বাস-প্রশ্বাসযন্ত্র সংক্রান্ত লক্ষণগুলি পড়িবার সময়, যদি তুমি ধাতুগত অবস্থার কথা মনে না রাখ, তাহা হইলে তুমি ঔষধ প্রয়োগে সক্ষম হইবে না, কারণ উহারা অসংখ্য নানা নামধেয় রোগের অন্তর্ভুক্ত হইবার যোগ্য এবং উহাদিগের স্বতন্ত্রীকরণ তোমাদের পক্ষে কষ্টকর।
তারপর আরও একটি রোগ আছে, এবং আমি তোমাদিগের মনোযোগ ঐদিকে আকৃষ্ট করিতে ইচ্ছা করি। পুরাতন সন্ধিগুলির বৃদ্ধিযুক্ত গেঁটেবাতবিশিষ্ট ধাতুতে এইরূপ ইতিহাস, থাকিতে পারে যে, রোগী এক সময়ে বেশ মাংসল ছিল, কিন্তু ক্রমে শীর্ণ হইয়া পড়িয়াছে,
তাহারা যদিও ক্ষুধার্ত থাকে, তথাপি খাদ্যে তাহাদের কোন উপকার হয় না। তাহাদের সন্ধিগুলি : বৰ্দ্ধিত এবং স্পর্শকাতর। গেঁটেবাত ধাতুর বহু রোগী গরম ঘর চায়, কিন্তু আইওডিনের রোগী ঠান্ডা ঘর চায়। তাহাদের সন্ধিগুলিতে যন্ত্রণা হয় এবং শয্যার উত্তাপে উহা বাড়ে। সে শীতল স্থানে প্রফুল্ল হইয়া উঠে এবং খোলা বাতাসে থাকিতে চায়। সে ক্রমেই দুর্বল হইতে থাকে, সে সাধারণতঃ ঘুরিয়া বেড়াইলে ও খাইলে উপশম পায়, তাহার দেহে ও মনে একপ্রকার উৎকণ্ঠা থাকে। আইওডিন তাহাদের গেঁটেবাতের আক্রমণ নিবারণ করিয়া, কিছুদিন স্বচ্ছন্দে কাটাইবার মত করিয়া দিবে।
এই রূঢ় পদার্থ সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের ভগ্নাবশেষে পাওয়া যায়। ওজন করে একভাগ আইওডিন ও নিরানব্বই ভাগ অ্যালকোহল মিশ্রিত করে হোমিওপ্যাথিক ব্যবহারার্থে আইওডিনের দ্বিতীয় দশমিক ক্ৰম প্ৰস্তুত করা হয়। পরবর্তী ক্রম অ্যালকোহল সহযোগেই প্রস্তুত হয়।
আইওডিয়ামের- মূলকথা
১। সৰ্ব্বদাই ক্ষুধার্ত; সৰ্ব্বদাই খায় বা খাই খাই করে, কিন্তু তা সত্ত্বেও রোগী রোগা হয়ে যায়; আহারের উপশম।
২। স্তনগ্রন্থি ব্যতীত সকল গ্রন্থিরও বিবৃদ্ধি, স্তন শুকিয়ে ঝুলে পড়ে, কিন্তু অন্য গ্রন্থিগুলি বাড়তে থাকে।
৩। মানসিক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, রোগী নড়াচড়া করতে বা কোন কিছু করতে চায়, তাড়াতাড়ি কাজ করতে চায় বা যেতে চায়, এবং কাকেও খুন করতে চায় (আর্সেনিক)।
৪। শরীরের শীর্ণতা সত্তেও শরীরের রক্ত গরম, রোগী ঠাণ্ডা জায়গায় বেড়াতে যেতে যায়, চিন্তা করতে বা কাজ করতে চায়।
৫। পাকস্থলী, পৃষ্ঠদেশ, এমনকি হাত ও হাতের ও পায়ের আঙ্গুল প্রভৃতি দপদপ করে বা স্পন্দন (বেলেডোনা)।
৬। কালচুল, কাল চোখের তারা, কাল চৰ্ম্মবিশিষ্ট, গণ্ডমালাগ্রস্ত, ধাতুবিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে ইহা বিশেষভাবে উপযোগী।
৭। উপচয় – উপশম :
বৃদ্ধি – উপবাসে, গরম বাতাসে বা ঘরে। উপশম — আহারকালে, চলাফেরা করায় ও ঠাণ্ডা হাওয়ায়।
৮। অতিশয় দুর্বলতা, সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলে হাঁপিয়ে পড়ে।
৯। কাল চুলবিশিষ্ট ব্যক্তিদের কঠিন গলগণ্ড ও স্তনের অর্বুদ (tumours)।
১০। হৃৎপিণ্ডকে যেন চেপে ধরে পিষছে বা লোহার বেড়ী দিয়ে চেপে ধরা হচ্ছে, এরূপ অনুভূতি (সালফার)।
১১। ক্রুপ, গণ্ডমালাগ্রস্ত বালকবালিকাদের ক্রুপ রোগ, কাশবার সময় গলা ধরে কাশে, বিবর্ণ ও শীতল মুখমণ্ডল, হৃষ্টপুষ্ট বালক-বালিকাদের ক্রুপ।
আইওডিয়াম — পর্যালোচনা
আইওডিয়াম গণ্ডমালা বা ত্রুফিউলার একটি ঔষধ। এর প্রধান প্রধান চরিত্রগত লক্ষণগুলি হল –
১। গণ্ডমালা ধাতু, অত্যন্ত দুৰ্বল ও অতিশয় শীর্ণ ধাতুবিকৃতি অবস্থা।
২। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে অতিশয় দুর্বলতা ও শ্বাসের-হ্রস্বতা অনুভব।
৩। অতি ক্ষুধা বা রাক্ষুসে ক্ষুধা, অনেকবার অধিক পরিমাণে খায়, তথাপি শরীরের মাংস ক্ষয় হয়।
৪। আহারান্তে বা আহার করবার সময় উপশম বোধ করে।
৫। স্তন শুকিয়ে যায় এবং উহাতে ক্ষত বোধ (স্পর্শ-দ্বেষ)।
৬। জরায়ু থেকে প্রভূত রক্তস্রাব, জরায়ুর ক্যানসার।
৭। পুরাতন প্রদর স্রাব, উহা প্রচুর পরিমাণে হয় এবং এতই ক্ষয়কর (corrosive) যে, যে কাপড়ে লাগে তা ছিদ্র হয়ে যায়।
৮। গ্রন্থির, বিশেষতঃ মধ্যান্ত্র গ্রন্থি ও গলগ্রন্থির (mesenteric and thyroid) স্ফীততা।
৯। ঝিল্লীবিশিষ্ট ক্রুপ, সাঁই সাঁই, হিসহিস, করাত টানার মত শব্দ, শুকনো ঘড়ঘড়ে কাশি, বিশেষতঃ কাল চুল ও কাল চোখের তারাবিশিষ্ট শিশুদের রোগে, শিশু কাশবার সময় হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে কাশে।
১০। সাধারণতঃ গরমঘরে বাড়ে।
এই ১০টি আইওডিয়ামের প্রধান পরিচালক লক্ষণ।
* অতি ক্ষুধা ও আহারের উহার শান্তি অথচ ক্রমাগত শরীরের শীর্ণতাপ্রাপ্তি, এইটিই এই ঔষধের সর্বপ্রধান পরিচালক লক্ষণ।
খাওয়ার পর যে কেবল ক্ষিদের শান্তি হয়, তা নয়; সাধারণতঃ সকল যন্ত্রণারই উপশম হয়। সে কেবল খাওয়ার সময়েই ভাল বোধ করে, এই লক্ষণের উপর নির্ভর করে আইওডিয়াম, সাধারণত সৰ্বাঙ্গীন ক্ষয় (ম্যায়াসমাস),
ফুসফুসের ক্ষয়রোগ (যক্ষ্মা), মধ্যান্ত্রক্ষয় (টেরিস-মেসেন্টিরিকা) বা অন্যান্য রোগেও সচরাচর ইহা ব্যবহৃত হয়ে থাকে, এবং অনেকস্থলেই এর দ্বারা সেই সেই রোগ আরোগ্যপ্রাপ্ত হয়।
বিঃ দ্রঃ—আমি আইওডিনের লক্ষণ পেয়ে এর সি. এম শক্তিতে প্রয়োগ করে অনেকগুলি গলগণ্ডরোগ আরোগ্য করেছি। পূর্ণিমার পরে চন্দ্রের ক্ষয় আরম্ভ হলে আমি পরপর চার রাত্রি একটি করে পুরিয়া খেতে দিয়েছিলাম।
আমি কেবলমাত্র একটি ক্ষেত্রে রোগের অগ্রগতি বোধ করতে বা উহা আরোগ্য করতে পারিনি। কেহ হয়ত এতে উপহাস করবে, কিন্তু যারা আরোগ্য হয়েছে, তারা কিন্তু তা করবে না।
গ্রন্থিস্ফীতির জন্য আয়োডিনের বাহ্য প্রয়োগ কেবলমাত্র মূখতা নয়, বিপজ্জনকও বটে।